নওগাঁয় অপহরণ ও হত্যার এক মামলায় দুই আসামিকে মৃত্যুদণ্ড এবং ধর্ষণ ও পর্নোগ্রাফির আরেক মামলায় দুই আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের ৫০ হাজার টাকা জরিমানা এবং যাবজ্জীবনপ্রাপ্তদের ১ লাখ টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়।
বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নওগাঁ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২–এর বিচারক মেহেদী হাসান তালুকদার এই রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণার সময় সব আসামিই আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
এই মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন—মিশু (১৯) ও পিংকি (৩০)। একই মামলায় দশ বছর করে আটকাদেশপ্রাপ্ত আসামি হলেন—হুজাইফা (১৪) ও সাজু আহমেদ (১৪)।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালের ৬ নভেম্বর বিকেল সাড়ে পাঁচটায় নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার খাদাইল গ্রামের স্কুলছাত্র নাজমুল (১৪)–কে মোবাইল ফোনে প্রেমের ফাঁদে ফেলে দেখা করার কথা বলে নারিকেলবাড়ি রোডে ডেকে নেয় পিংকি। সেখান থেকে পরে জয়পুরহাটের আক্কেলপুর থানার কেসের মোড় রেললাইনে নিয়ে যাওয়া হয়।
পরদিন (৭ নভেম্বর) সকাল ১০টার দিকে আসামিরা নাজমুলের মোবাইল থেকে তার বাবার মোবাইলে ফোন করে ১৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। মুক্তিপণের টাকা না পাওয়ায় তারা নাজমুলকে হত্যা করে। হত্যার পর নাজমুলের মরদেহ বস্তায় ভরে রেলগেটের পাশে একটি ডোবায় ফেলে দেয়।
এ ঘটনায় নাজমুলের বাবা বদলগাছী থানায় মিশু, পিংকি, হুজাইফা ও সাজু আহমেদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। পুলিশ তদন্ত শেষে চার আসামির বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করে। মামলায় ২০ জন সাক্ষী সাক্ষ্য দেন। সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আদালত দুইজনকে মৃত্যুদণ্ড এবং দুইজনকে ১০ বছরের কারাদণ্ড প্রদান করেন।
এই মামলায় যাবজ্জীবনপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন—মোরশেদ (৩৫) ও রবিউল (৩৮)।
মামলার বিবরণ অনুযায়ী, ২০১০ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি নওগাঁর মান্দা উপজেলার চকদেবীরাম গ্রামের এক তরুণীকে বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণ করে মোরশেদ ও রবিউল। তারা ধর্ষণের ভিডিও ধারণ করে পরবর্তীতে ওই তরুণী ও তার পরিবারের ওপর চাপে ফেলে। বিয়েতে অস্বীকৃতি জানালে ওই তরুণীর পরিবার অন্যত্র বিয়ে দেয়। এরপর রবিউল তরুণীর স্বামীকে ভিডিও পাঠায়, যার ফলে তাকে তালাক দেওয়া হয়। দ্বিতীয় বিয়ের পরও রবিউল ওই স্বামীর কাছেও ভিডিও পাঠায় এবং তাকেও বিচ্ছেদের দিকে ঠেলে দেয়।
পরে ভুক্তভোগী তরুণী আদালতে অভিযোগ করলে পুলিশ তদন্তে অভিযুক্তদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়ায় চার্জশিট দাখিল করে। মামলায় ১২ জন সাক্ষ্য দেন। সাক্ষ্য ও প্রমাণের ভিত্তিতে বিচারক দুই আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, ১ লাখ টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে আরও ৬ মাসের কারাদণ্ডের আদেশ দেন।
উভয় মামলার রায় ঘোষণার পর নওগাঁ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২–এর রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম রায়ের প্রতি সন্তোষ প্রকাশ করেন।
একুশে সংবাদ/ন.প্র/এ.জে