ভালুকা উপজেলার নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) হাসান আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ একদিনে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জনসচেতনতা ও তথ্যভিত্তিক গণযোগাযোগের এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। বুধবার (৩০ জুলাই) ইউএনও তাঁর UNO Bhaluka ফেসবুক আইডিতে বিস্তারিতভাবে ভালুকার চলমান উন্নয়ন কর্মকাণ্ড, বরাদ্দ পরিস্থিতি, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা এবং নাগরিক চাহিদার প্রতি তাঁর অঙ্গীকার তুলে ধরেন।
উন্নয়ন প্রকল্প ও বরাদ্দ: বাস্তবতা এবং প্রতিশ্রুতি
ইউএনও হাসান আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ তাঁর বার্তায় খুবই স্পষ্টভাবে তুলে ধরেন যে, উন্নয়নের দাবি করা নাগরিকদের প্রতি তাঁর প্রশাসন সর্বোচ্চ আন্তরিক। তিনি বলেন, “ইদানীং লক্ষ্য করেছি, অনেকেই ফেইসবুকে তার নিজের বাড়ির সামনের/ এলাকার কর্দমাক্ত রাস্তার ছবি তুলে ফেইসবুকে দিয়ে ইউএনও, ভালুকার দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন। আমি এতে দোষের কিছু দেখি না, ইউএনওর কাছে আপনি চাইতেই পারেন। আমার জ্ঞাতসারে আমি সম্প্রতি ১০০০ এর মতো রাস্তার আবেদন পেয়েছি। এবং আমার জানা মতে আমি কাউকেও বলি নি হবে না। বলেছি ইনশাআল্লাহ করে দিব।”
গত অর্থবছরের শেষ ছয় মাসে, ২৭২ টি রাস্তা এবং ১০০ এর অধিক প্রতিষ্ঠানে উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এসব প্রকল্পে মোট ব্যয় হয়েছে প্রায় ৯ থেকে ১০ কোটি টাকা। ইউএনও জানান, কাজের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে যাতে জনগণ উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পান এবং প্রশাসনিক স্বচ্ছতা বজায় থাকে।
তবে তিনি বাস্তব চিত্রও তুলে ধরেন। এলজিইডি ডিপার্টমেন্টের সূত্র অনুযায়ী, ভালুকা উপজেলায় এখনো ৭০০ কিমি এর বেশি কাঁচা রাস্তা রয়েছে। বর্তমান বরাদ্দ কাঠামো অনুযায়ী এত বিশাল অবকাঠামো উন্নয়ন এক বছরে সম্পন্ন করা সম্ভব নয়। ইউএনও বলেন, “উপজেলা প্রশাসন যে বরাদ্দ পায় তা দিয়ে এগুলো এমন কি ১০/১২ বছরেও কিছু করা সম্ভব নয়, দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন। শুনতে যেমনই লাগুক, এটিই বাস্তবতা। আমরা সধ্য মতো চেষ্টা করছি, সকলকে ধৈর্য্য ধারণ করতে হবে। এত পরিবর্তন হুট করে আনা সম্ভব না। তবে আমি কমিটম্যান্ট করছি, যদি বিশেষ বরাদ্দ আনার বিন্দুমাত্র সুযোগও পাই, আমি আমার সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করবো।”
এছাড়া, তিনি ঘোষণা দেন যে এই অর্থবছরে বরাদ্দ কার্যকর হওয়ার আগেই তিনি নিজে প্রতিটি ইউনিয়ন ঘুরে ঘুরে সব রাস্তা দেখবেন এবং সকলকে নিয়ে একটি অগ্রাধিকার তালিকা তৈরি করবেন। বরাদ্দ যতটুকু পাওয়া যাবে, সেটিকে সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন ইউএনও।
ইউএনও বলেন, “গত ছয় মাসে ভালুকা পৌরসভা খুব সীমিত সামর্থ্যের মধ্যে সব থেকে জনহিতকর কাজগুলো করার চেষ্টা করেছে এবং এখানে খুব বেশি অর্থও ব্যয় হয় নি কিন্তু যেহেতু এটি জনবহুল এলাকায় এবং মহাসড়কের পাশে করা হয়েছে তাই অধিক দৃশ্যমান হয়েছে। তাই অনেকেই ভাবছেন সব উন্নয়ন পৌরসভা কেন্দ্রিক কিন্তু বাস্তবতা হলো ইউনিয়নে গত ছয় মাসে কমবেশি গড়ে ৪০/৫০ থেকে ৭০/৮০ লাখ টাকা (সব ইউনিয়নে সমান হয় না কারণ জন সংখ্যার অনুপাতে বিভাজন হয়) ব্যয় করা হয়েছে এবং পৌরসভা এলাকায় সর্বোচ্চ ৩০/৪০ লাখ টাকা ব্যয় করা হয়েছে।”
ইউএনও’র স্পষ্ট বার্তা, “রাষ্ট্র আপনাকে কি দিচ্ছে তা আপনার ষোল আনা জানার অধিকার আছে। আমি অস্পষ্টতায় বিশ্বাস করি না।”
পাবলিক টয়লেট নির্মাণে অগ্রগতি: চারটি স্থানে আধুনিক সুবিধা
ভালুকাবাসীর দীর্ঘদিনের চাহিদা অনুযায়ী, ভরাডোবা বাসস্ট্যান্ড, ভালুকা বাসস্ট্যান্ড, সীডস্টোর ও মাস্টারবাড়ীতে পাবলিক টয়লেট নির্মাণের প্রস্তাবনা ইতিমধ্যেই বাস্তবায়নের পথে। ইউএনও জানান, “সকলের চাহিদা ছিলো ভালুকার গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করা। তারমধ্যে ভরাডোবা বাসস্ট্যান্ড, ভালুকা বাসস্ট্যান্ড, সীডস্টোর, মাস্টারবাড়ীতে পাবলিক টয়লেট নির্মাণের দাবি ছিলো সব থেকে জোড়ালো। তার প্রেক্ষিতে গত ৩/৪ মাস আগে যথাযথ কর্তৃপক্ষ বরাবর চাহিদা সম্বলিত পত্র প্রেরণ করা হয় এবং আনন্দের সংবাদ হচ্ছে একনেকের গত মিটিংয়ে যে প্রকল্পগুলো অনুমোদন হয় তার মধ্যে গ্রামীণ স্যানিটেশন প্রকল্প নামে একটি প্রকল্প আছে। এ প্রকল্পের আওতায় এই চারটি স্থান অন্তুর্ভুক্ত আছে এবং আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে এই অত্যাধুনিক পাবলিক টয়লেটগুলোর (প্রতিটির নির্মাণ ব্যয় আনুমানিক ২০/২২ লাখ টাকা) নির্মাণ কাজ শেষ হবে বলে আমরা আশাবাদী।”
ভালুকা-গফরগাঁও রোডে সড়ক দ্বীপ উন্নয়ন শুরু
তিনি আরও জানান, ভালুকা-গফরগাঁও রোডের রোড আইল্যান্ড (সড়ক দ্বীপ) এর দুই অংশে দুটি উন্নয়নমূলক কাজ বুধবার থেকেই শুরু হয়েছে। পাশাপাশি ইউনিয়নবাসীদের হতাশ না হওয়ার অনুরোধ জানিয়ে ইউএনও বলেন, “আপনাদের জন্যও ইনশাআল্লাহ দ্রুত গুরুত্বপূর্ণ কিছু রাস্তার কাজ শুরু করবো।”
একুশে সংবাদ/ম.প্র/এ.জে