বৃহত্তর সিলেটের শস্যভাণ্ডার হিসেবে পরিচিত মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার ৭ নম্বর আদমপুর ইউনিয়নের বনগাঁও গ্রাম বর্তমানে ‘টমেটো গ্রাম’ নামে পরিচিত। কয়েকশো পরিবারের এ গ্রামে প্রায় শতভাগ মানুষ বিভিন্ন উন্নত জাতের টমেটো চাষে সারা বছর ব্যস্ত থাকেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়ির উঠোনেই নার্সারি গড়ে তোলা হয়েছে। এক চিলতে জমিও অনাবাদি নেই। ভাগ্য বদলের আশায় গ্রামবাসীরা নার্সারিকেই পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। কিন্তু একটিমাত্র রাস্তার করুণ দশা তাদের স্বপ্ন বাস্তবায়নে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বছরের পর বছর ধরে অবহেলিত এ কাঁচা রাস্তাটি খানাখন্দে ভরা। প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে কাঁচা রাস্তার কারণে কৃষকদের ফসল বাজারজাত করতে হচ্ছে সীমাহীন কষ্টে। সময়মতো উৎপাদিত চারা ও ফসল বাজারে নিতে না পারায় তাদের উৎপাদন খরচ বেড়েছে কয়েকগুণ, সেই সঙ্গে বাড়ছে আর্থিক লোকসানও।
শুধু কৃষক নয়, এই রাস্তা দিয়ে যাতায়াতকারী স্কুল-কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাও প্রতিনিয়ত ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
গ্রামের বাসিন্দা আব্দুর রাজ্জাক, রুমেল মিয়া, সাইদুর রহমান, জুবেল আহমেদ, সাদ্দাম আলী, মনির মিয়া প্রমুখ অভিযোগ করেন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দৃষ্টি নেই এই রাস্তাটির দিকে। প্রতিবছর নিজেরা স্বেচ্ছাশ্রমে মাটি ফেলে রাস্তাটি ব্যবহার উপযোগী করার চেষ্টা করেন তারা। তবে রাস্তা খারাপ থাকায় বাইরের পাইকাররা আসতে পারেন না। বাধ্য হয়ে স্থানীয় পাইকারদের কাছেই কম দামে চারা বিক্রি করতে হয়।
কৃষি উদ্যোক্তা আব্দুল মতিন বলেন, "রাস্তা পাকাকরণ হলে বছরে কোটি টাকার চারা বিক্রি সম্ভব হতো।"
উসমান আলী ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক মাওলানা আব্দুস সাত্তার বলেন, "শুধু নার্সারি নয়, সারা বছর টমেটো ও অন্যান্য সবজি চাষ করে বনগাঁওয়ের মানুষ স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখেন। সঠিক যোগাযোগ ব্যবস্থা থাকলে গ্রামটিতে নিরব অর্থনৈতিক বিপ্লব ঘটে যেতো।"
কমলগঞ্জের লেখক ও গবেষক আহমদ সিরাজ জানান, “বনগাঁও গ্রামের প্রতিটি নারী-পুরুষই একেকজন কৃষি উদ্যোক্তা হয়ে উঠেছে। শুধু একটি ভাঙাচোরা রাস্তার কারণে এই সম্ভাবনা থেমে আছে।”
এ বিষয়ে কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাখন চন্দ্র সূত্রধর বলেন, "উপজেলা পরিষদের প্রকল্প থেকে রাস্তাটি করা সম্ভব হলে, দ্রুত তা বাস্তবায়নের চেষ্টা করবো। জনগুরুত্বপূর্ণ রাস্তা হিসেবে এটি বিবেচনায় নিয়ে দ্রুত সংস্কার করা হবে।"
গ্রামের মানুষ এখন প্রশাসনের আশ্বাস বাস্তবে রূপ নেওয়ার অপেক্ষায়। তাদের প্রত্যাশা, শিগগিরই কাঁচা রাস্তা সংস্কার করে তাদের টমেটোর স্বপ্নকে বাস্তবতায় রূপ দেওয়া হবে।
একুশে সংবাদ/মৌ.প্র/এ.জে