রাজশাহীর তানোরে এক স্কুলপড়ুয়া শিক্ষার্থীর বিয়ে দিয়েছেন স্থানীয় এক ইউপি সদস্য (মেম্বার)—এমন অভিযোগ উঠেছে। রেজিস্ট্রেশন ছাড়াই এ বিয়ে সম্পন্ন হয় গত শুক্রবার (২১ জুন) রাতে তানোর উপজেলার চান্দুড়িয়া ইউনিয়নের রাতৈল গ্রামে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার রাতৈল গ্রামের দুলাল জোসেনের ছেলে শিশির মাহমুদ (১৮) এর সঙ্গে একই ইউনিয়নের এক স্কুলছাত্রীর প্রেমের সম্পর্ক ছিল। বৃহস্পতিবার দুপুরে তারা টপার নামক একটি কোচিং সেন্টারে দেখা করতে গেলে স্থানীয়রা তাদের আটক করেন। পরে বিষয়টি ইউনিয়ন পরিষদে সালিশে গড়ায়।
ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা মিজানুর রহমান (মেজর) এবং ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য তাহাসেনের উপস্থিতিতে সালিশি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। অভিযোগ রয়েছে, সালিশে ছেলের পক্ষ নেওয়া হয় এবং মোটা অঙ্কের টাকা বিনিময়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা হয়। মেয়েটির মা সালিশে এসে ন্যায়বিচারের আবেদন করলেও ফল পাননি।
এরপর ওই স্কুলছাত্রী বিয়ের দাবিতে প্রেমিক শিশির মাহমুদের বাড়িতে অনশন শুরু করলে, ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার তাহাসেন, স্থানীয় মুখলেস ও জয়নালের মধ্যস্থতায় শুক্রবার রাতে গ্রাম্য পদ্ধতিতে বিয়ে দেওয়া হয়। তবে কনের বয়স ১৮ বছরের নিচে হওয়ায় কাজী রেজিস্ট্রি করতে অস্বীকৃতি জানান।
মেম্বার তাহাসেন বলেন, “মেয়ে বিয়ের দাবিতে অনশন করছিল। তাকে কোনোভাবেই বাড়ি পাঠানো যাচ্ছিল না। তাই উভয় পরিবারের পরামর্শে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা দেনমোহর নির্ধারণ করে বিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে মেয়ের বয়স না হওয়ায় কাজী বিয়ে রেজিস্ট্রি করেননি, শুধু গ্রামের এক ইমাম কালেমা পড়িয়ে দিয়েছেন।”
প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, "বয়স না হলেও পরিস্থিতির কারণে আমাদের আর কিছু করার ছিল না।"
বিয়েতে কালেমা পড়ানো ইমাম রইচ উদ্দিন ওরফে নয়নের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “মেম্বার, মুকলেস ও জয়নাল ভালো বলতে পারবে।” এরপর তিনি কোনো উত্তর না দিয়ে মোবাইল সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
এ ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, একজন জনপ্রতিনিধির প্রত্যক্ষ ভূমিকায় বাল্যবিয়ে সম্পন্ন হওয়াটা সমাজ ও আইন উভয়ের জন্যই লজ্জাজনক। তারা এ বিষয়ে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
একুশে সংবাদ/রা.প্র/এ.জে