গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার ৪০টি এলাকায় প্রায় ৬০ হাজার মানুষ এখন পানিবন্দি।
অপরিকল্পিতভাবে সেচ প্রকল্প নির্মাণ এবং পানি নিষ্কাশনের খালগুলো বেদখলে ভরাট হয়ে যাওয়া এবং আবাসন কোম্পানির বালি ভরাটের কারণে মূলত এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। পানিবন্দি মানুষের দুর্ভোগ এখন চরমে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার ভুলতা ইউনিয়নের পাচাইখা, টেলাপাড়া, বলাইখা, আওখাবো মাঝিপাড়া, সোনাব, ইসলামপুর, ভায়েলা, পারাগাও ও মুড়াপাড়া ইউনিয়নের, ব্রাহ্মণগাও, পাবই, মাছিমপুর, মিরকুটিরছেও, গোলাকান্দাইল ইউনিয়নের , গোলাকান্দাইল মধ্যপাড়া, দক্ষিণপাড়া, নাগেরবাগ, বৌবাজার, খালপাড়, ইসলামবাগ, আমলাব, কালী, আমলাব মুসলিম পাড়া, ডুলুরদিয়া, গোলাকান্দাইল নতুন বাজার, কান্দাপাড়া, বিজয়নগর, মদিনা নগর, তারাবো পৌরসভার তেঁতলাব, শান্তিনগর, বাগানবাড়ি, পশ্চিম কান্দাপাড়া, উত্তর মাসাবো, তারাবো পৌরসভার বরপা, যাত্রামুড়া, রূপসীসহ আশপাশের এলাকায় এখন জলাবদ্ধতা।
এই জলাবদ্ধতার কারণে উপজেলার প্রায় ৬০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। বাড়ির উঠানেই পানি হাঁটু থেকে কোমর পরিমাণ। অনেকের বসত ঘরে ৩-৪ ফুট পানি। রাস্তা ঘাট তলিয়ে গেছে।
গবাদি পশু অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির অভাব। বাড়িতে পানি উঠায় কেউ কেউ আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন।
কয়েকটি শিল্প কারখানায়ও জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। কোনো কোনো স্থানে টিউবওয়েল পানিতে তলিয়ে গেছে। সেসব এলাকায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির অভাব। এছাড়া শিল্প কারখানার নির্গত ক্যামিকেল ও দুর্গন্ধযুক্ত কালো পানিতে দূষণ হয়ে রোগাক্রান্ত হচ্ছে বিভিন্ন বয়সের মানুষ নারী ও শিশুরা দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন।
টেলাপাড়া এলাকার আবদুল্লাহ বলেন, আমার বাড়ির রাস্তায় হাঁটুপানি চলাচল করতে অনেক কষ্ট হচ্ছে । ময়লা পানি দিয়ে চলাচল করায় শিশুসহ বড়দের পায়ে চুলকানি দেখা দিয়েছে ।
বলইখা এলাকার রমিজউদ্দিন জানাযন, জলাবদ্ধতায় অতি কষ্টে চলছে আমাদের জীবন। শিল্প কারখানার নির্গত বর্জ্যে পানি নিষ্কাশন খালগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। শিল্প কারখানার নির্গত গরম পানি জলাবদ্ধতায় মিশে গেছে। তাতে জলাবদ্ধতার পানি কুচকুচে কালো রঙ ধারণ করেছে। এ পানিতে হাঁটাচলা করতে গিয়ে মানুষ চর্ম রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। পানির কীট-পতঙ্গসহ মাছ মরে যাচ্ছে। আশপাশের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে।
সরকারের কাছে আকুল আবেদন, আমাদের এই পানি দ্রুত নিষ্কাশন করে আমাদের এই জীবন দশা থেকে মুক্তি দেন।
ইসলামবাগ এলাকার শিক্ষার্থী সাদিয়া আক্তার বলেন, আমাদের বাড়ি ঘরে হাঁটু সমান পানি উঠেছে। ঘর থেকে বের হতে পারছি না। স্কুলে যেতে পারছি না । খাবারের অসুবিধা, চুলায় আগুন জ্বালাতে পারি না। বিশুদ্ধ পানি নেই। সৃষ্ট জলাবদ্ধতার কারণে বাড়ির অনেক ভাড়াটিয়া এ এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে।
স্থানীয় সচেতন মহল বলেন, রূপগঞ্জ শিল্পাঞ্চল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। সে কারণে জমির দাম বেশি। তুলনামূলকভাবে নিচু জমির দাম কম। তাই অনেকেই নিচু অঞ্চলে কম দামে জমি ক্রয় করে ঘর বাড়ি নির্মাণ করছেন। আর সে কারণেই নির্মিত ঘর বাড়িতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। তবে জলাবদ্ধতা নিরসনে আমরা টিএনও স্যারের সাথে আলাপ করে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
আমলাব এলাকার রফিক মিয়া বলেন, ১৪-১৫ বছর ধরে এখানে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়। পানির সঙ্গে যুদ্ধ করে আমাদের বাঁচতে হচ্ছে। বাইনাদি এলাকায় স্লুইচগেট থাকলেও ওখানকার দায়িত্বে ঢাকা ব্যক্তিরা সময়মতো মেশিন চালু না রাখায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। বাইনাদি এলাকায় পাম্পের দায়িত্বে থাকা অফিসারদের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলেও তাদের পাওয়া যায়নি।
রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘রূপগঞ্জের বিভিন্ন জায়গার সৃষ্ট জলাবদ্ধতা নিষ্কাশনের কাজ চলছে।
তা আগামী দু-তিন দিনের মধ্যেই নিরসন করা যাবে বলে আশা করছি।
একুশে সংবাদ /না.প্র/এ.জে