নড়াইলের মধুমতী নদী পূর্বাভাসের বাইরে গিয়ে অসময়ে ভাঙন শুরু করেছে, যা নদী পাড়ের বাসিন্দাদের জন্য বড় বিপদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে কাশিপুর গ্রামের বৃদ্ধা শামসুন্নাহার বেগম (৬৫) জানান, তার বাড়ি নদীর কাছে অবস্থিত এবং ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করার কারণে তার বাড়ি ভেঙে যাচ্ছে।
শামসুন্নাহার বলেন, "আমি গরিব-অসহায়। আমার এক ফোঁটা জমি নেই। এখন আমি কোথায় যাব? বৃষ্টির মৌসুম আসলে আমার বাড়ি পুরোপুরি নদীগর্ভে চলে যাবে।"
নদীর তীরবর্তী অন্যান্য গ্রামগুলোর পরিস্থিতিও একই। মাকড়াইল, রামচন্দ্রপুর, নওখোলা গ্রামসহ কয়েকটি এলাকার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। সেখানে নদী থেকে বালু উত্তোলন করার কারণে বাঁধের বস্তা সরিয়ে নদীতে চলে যাচ্ছে, যার ফলে ভাঙন আরও তীব্র হচ্ছে। এসব এলাকায় ব্রিটিশ আমলে নির্মিত মাকড়াইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ তিনটি স্কুল, মসজিদ, আশ্রয়ণ প্রকল্প এবং গ্রামীণ সড়কও হুমকির মুখে রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, বর্ষা মৌসুমে মধুমতী নদী ভাঙন ঘটালেও কিছু বছর আগে পানি উন্নয়ন বোর্ড বালুর বস্তা দিয়ে বাঁধ নির্মাণ করেছিল। তবে সম্প্রতি বালু উত্তোলনের ফলে বাঁধের অনেকাংশ পানিতে নেমে গেছে, যার ফলে এই বছর অসময়ে ভাঙন শুরু হয়েছে।
লোহাগড়া উপজেলার বৃদ্ধা মর্জিনা বেগম বলেন, "পূর্বে নদী আমাদের বাড়ি ভেঙে দিয়েছে, তারপর নতুন করে বাড়ি তৈরি করেছি। এখন আবার ভাঙনের ঝুঁকিতে আছি।" মাকড়াইল গ্রামের ফজলুল মৃধা জানান, তার বেশ কয়েক একর জমি নদী গিলে ফেলেছে, এবং এখন তার বাড়ির সামনে দেওয়া বাঁধও ভাঙছে। এই ভাঙন আতঙ্কে তার এক ভাই ইতোমধ্যে বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন।
ভাঙন আতঙ্কে স্থানীয়রা প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেছেন এবং অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ করার জন্য অনুরোধ করেছেন। প্রশাসন ইতোমধ্যে ইজারা বহির্ভূত এলাকা থেকে বালু উত্তোলন বন্ধ করেছে এবং নতুন বছরে ওই এলাকার বালুমহলের ইজারাও বন্ধ করে দিয়েছে। স্থানীয়রা আশা করছেন, বালু উত্তোলন বন্ধ হলেও, ভাঙন প্রতিরোধে বালুর বস্তা ফেলে সাময়িক ব্যবস্থা নেওয়া হবে, আর স্থায়ী সমাধানের জন্য টেকসই বাঁধ নির্মাণ করা হবে।
লোহাগড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু রিয়াদ জানান, "ইতোমধ্যে ওই এলাকার বালুমহলের ইজারা বন্ধ করা হয়েছে এবং অবৈধ বালু উত্তোলন করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"
নড়াইল জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী অভিজিৎ কুমার সাহা বলেন, "বালু উত্তোলনের কারণে নদীতীরে আমাদের প্রতিরক্ষা বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করে বালু উত্তোলন বন্ধ করা হয়েছে এবং ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ সংস্কারের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।"
একুশে সংবাদ//ন.প্র/এ.জে