AB Bank
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৬ মে, ২০২৪, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

প্রতিবন্ধী হয়েও জার্মান থেকে আনল স্বর্ণপদক, খবর নেয়নি কেউ!


Ekushey Sangbad
জেলা প্রতিনিধি,ময়মনসিংহ
০১:৫২ পিএম, ৬ জুলাই, ২০২৩
প্রতিবন্ধী হয়েও জার্মান থেকে আনল স্বর্ণপদক, খবর নেয়নি কেউ!

ময়মনসিংহের নান্দাইলের স্বর্ণা আক্তার (১৪) কানে শোনে না। কথাও বলতে পারে না। তবু থেমে থাকেনি সে। স্থানীয় একটি বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে সকলকে তাক লাগিয়ে দেয়। খেলাধূলা ছাড়াও ছবি আঁকায় সে সকলকে ছাড়ায়। আর এ অবস্থায় বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের নিয়ে বিকেএসপিতে প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করে স্বর্ণা। সেখানেও নিজেকে মেলে ধরেন। সম্প্রতি জার্মানির বার্লিনে যাওয়ার সুযোগ পেয়ে সেখান থেকে ফুটবল দলের অধিনায়ক হওয়া ছাড়াও শ্রেষ্ঠ খোলোয়াড় হয়ে জিতে নেন স্বর্ণপদক।

 

নীরবে নিভৃতে গত ২৮ জুন দেশে ফিরে সেই স্বর্ণা আক্তার এখন গ্রামের বাড়িতে অবস্থান করছে। এই সাফল্যের পরও তাকে নিয়ে নেই কোনো হইহু্ল্লোড়। প্রশাসনের কেউ একনজর দেখতেও যায়নি। এতে কষ্ট কথা বলতে না পারা মেয়েটির ওপর জগদ্দল পাথর চেপে রয়েছে। দেশের জন্য বয়ে আনা এই গর্বিত সন্তানকে কেউ ধন্যবাদ দিতেও যাননি।

 

স্বর্ণা আক্তার উপজেলার চন্ডীপাশা ইউনিয়নের বারুইগ্রাম গ্রামের দরিদ্র কৃষক নুরু মিয়ার (৫৫) মেয়ে। নুরু মিয়ার দুই ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে স্বর্ণা তৃতীয় সন্তান। জন্ম থেকেই স্বর্ণা বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী। এ কারণে পাঁচ বছর পূর্বে স্বর্ণা ভর্তি হয় নান্দাইল  উপজেলায় অবস্থিত সেবা ফাউন্ডেশন পরিচালিত সেবা বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ে। বর্তমানে সেখানে সে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ছে।

 

জানা যায়, বাক ও শ্রবণ শক্তিহীন স্বর্ণা আক্তার এ বছর জার্মানির বার্লিনে বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের জন্য অনুষ্ঠিত স্পেশাল অলিম্পিক ওয়ার্ল্ড সামার গেইমস-২০২৩ ফুটবলে অংশ নেয়। চূড়ান্ত পর্বের খেলায় বাংলাদেশ ২-০ গোলে ইসরাইলকে হারিয়ে শিরোপা লাভ করে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল। স্বর্ণা আক্তার সেই ফুটবল দলের অধিনায়ক এবং সেরা পারফরমার হিসাবেও স্বর্ণপদক বাগিয়ে নেয়।

 

বৃহস্পতিবার (৬ জুলাই) সকালে স্বর্ণার বাড়িতে প্রবেশ করতেই বাবা নুরু মিয়া বের হয়ে আসেন। স্বর্ণা কেমন আছে, কী করছে, আনন্দে আছে কিনা- ইত্যাদি জানতে চাইলে তিনি বলেন, জার্মানি থেকে যেদিন বাড়িতে আসে ওই দিন মন খুবই ভালো ছিল। হাসি খুশিতেই ছিল। কিন্তু এরপর থেকে মনমরা হয়ে থাকে। দেখা যায়, ভাঙাচোড়া টিনশেডের ঘরের একটি কোণে চৌকিতেই শুয়ে বসে দিন কাটাচ্ছে সে। যে পোশাক পরে জার্মানিতে পদক পেয়েছিল সেই পোশাক পরতেই খুব সাচ্ছন্দ্যবোধ করে। বিভিন্ন দেশের পতাকা সম্বলিত প্লেট ও নিজের সোনার পদকটি গলায় ঝুলিয়ে রাখে। জার্মানি থেকে কিছু চকলেট ও কয়েক ধরনের খেলনা নিয়ে এসেছে স্বর্ণা। এগুলো নিয়ে সময় পার করছে।

 

বাবা নুরু মিয়া বলেন, আমার বোবা মাইয়াডা দেশের লাইগ্যা যে গৌরব নিয়া আইছে তা মনে অয় আমরার কাছেই খুব বড়। অন্য কারও কাছে মনে অয় এইডা কিছুই না। অথচ দেহি সামান্য জিনিস লইয়া কত যে মাতামাতি অয়। মনে অয় হেইডাই অনেক বড়। এই পর্যন্ত  (ছয় দিন) কেউ বাড়িত আইয়া খোঁইজও নিলো না। ছেড়িডা সোনার মেডেলডারে আগলাইয়া ধইরা ঈশারা দিয়া বোঝায়, এইডা কই রাখবো। কেউ যদি লইয়া যায়গা? ঘরে তো রাহনের ভালা কোনো জায়গা নাই। 

 

মা নাজমা আক্তার বলেন, সোনা পাইলেই কি, না পাইলেই কি। এইডা যদি আজগোয়া বড় লোহের কেউ পাইতো তাঅইলে দেহা যাইতো। ঢাকঢোল পিডাইয়া নাচানাচি করতো। আমরা তো পহিন্নি। তারপরও আমার ছেড়ি যে দেশের লাইগ্যা্ কিছু করছে এইডাই বড়।

 

প্রতিবেশী বরকতউল্লাহ বলেন, স্বর্ণার এই সফলতার লাইগ্যা আমরা গর্বিত। তবে দুঃখ হয় এমন বড় ঘটনার পরেও কেউ মেয়েডারে দেখতেও আসলো না।

 

জানা যায়, বার্লিনে স্পেশাল অলিম্পিকস ওয়ার্ল্ড সামার গেমসের উদ্বোধন হয় ১৭ জুন। খেলা চলে ২৬ জুন পর্যন্ত। বিশ্বের ১৭০টি দেশ থেকে প্রায় ২৫ হাজার ক্রীড়াবিদ, কোচ এবং কর্মকর্তা ওই খেলায় যোগদান করেন। বাংলাদেশ থেকেও ৮১ জন ক্রীড়াবিদ ও কর্মকর্তাসহ ১১৩ সদেস্যের একটি প্রতিনিধিদল খেলায় অংশগ্রহণ করতে ১২ জুন ভোর ৫টায় কাতার এয়ারওয়েজের একটি বিমানে করে জার্মানির উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করে। নান্দাইলের স্বর্ণা আক্তারও ওই খেলায় অংশ গ্রহণকারী নারী ফুটবল দলের একজন সদস্য। ওই গেমসে বাংলাদেশ দল সর্বমোট ১৩টি স্বর্ণ, দুটি রৌপ্য ও তিনটি ব্রোঞ্জ পদক পেয়েছে।

 

একুশে সংবাদ/তা.ক.প্র/জাহা

 

Link copied!