জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) ও জন্মনিবন্ধনে জন্মতারিখ ভিন্ন থাকা সত্ত্বেও গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (গোবিপ্রবি) ছয় বছর ধরে কর্মরত আছেন হোসাইন চৌধুরী। নিয়ম অনুযায়ী পরিচয় সংক্রান্ত তথ্য মিল না থাকলে নিয়োগ ও প্রশাসনিক প্রক্রিয়ায় জটিলতা সৃষ্টি হওয়ার কথা থাকলেও, বিষয়টি এতদিন অগোচরে ছিল।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর বরাত দিয়ে জানা গেছে, পূর্ববর্তী আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নানা অনিয়মের মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। সনদ, বয়স, অনুমোদন ও অভিজ্ঞতা সংক্রান্ত জটিলতা এড়িয়ে ‘ছলচাতুরীর’ মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়ার অভিযোগও উঠেছে।
নিয়োগপ্রাপ্ত হোসাইন চৌধুরী সম্পর্কে জানা যায়, তিনি জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভাপতি এমদাদুল হকের ভাতিজা মাহামুদুর রহমান ওরফে উজ্জ্বল চৌধুরীর বোন জামাই। বর্তমানে সেই উজ্জ্বল চৌধুরী বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দপ্তরের জনপ্রশাসন শাখায় দায়িত্ব পালন করছেন এবং পদোন্নতি যাচাই-বাছাই কমিটির সদস্য সচিব হিসেবেও দায়িত্বে আছেন।
সরকার পরিবর্তনের পরও বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ পদে এই আওয়ামীপন্থী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবস্থান শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিস্ময় ও সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।
মান্দা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সভাপতি দূর্জয় শুভ বলেন,“অবৈধ নিয়োগগুলো বের করে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নিতে হবে। তবে কাউকে অযথা হয়রানি করা যাবে না। জুলাই আন্দোলনের আদর্শের সঙ্গে এটি সাংঘর্ষিক।”
জুলাই আন্দোলনের সমন্বয়ক ও বিলুপ্ত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক বেলাল হোসেন আরিয়ান বলেন,“স্বৈরাচার পতনের পর দেশে নতুন আশার সঞ্চার হলেও, গোবিপ্রবির কিছু কর্মকর্তার আচরণে পুরনো স্বৈরাচারী মনোভাবের প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে। ক্ষমতা যেন এখন ব্যক্তিস্বার্থ রক্ষার হাতিয়ার হয়ে উঠছে— যা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য উদ্বেগজনক।”
এদিকে হোসাইন চৌধুরীর এনআইডি ও জন্মনিবন্ধন যাচাই করে দেখা গেছে, জন্মতারিখে ভিন্নতা রয়েছে। জন্মনিবন্ধন অনুযায়ী তার জন্ম ১৯৮৮ সালের ১ জুন, আর জাতীয় পরিচয়পত্রে জন্মতারিখ ১৯৮১ সালের ১ মার্চ। ফলে সাত বছরের ব্যবধান তৈরি হয়েছে।
এই বিষয়ে অভিযুক্ত কর্মচারী হোসাইন চৌধুরী বলেন,“চাকরির সময় জন্মনিবন্ধনের তথ্য দিয়েই আমি যোগ দিই, জাতীয় পরিচয়পত্র জমা দিইনি। জাতীয় পরিচয়পত্রে তারিখে ভুল আছে।”
তিনি জানান, ছয় বছর ধরে চাকরিতে আছেন এবং দেড় বছর আগে তথ্য সংশোধনের জন্য আবেদন করেছিলেন। তবে সংশোধন প্রক্রিয়া কোথায় আছে তা জানাতে পারেননি।
উজ্জ্বল চৌধুরীও আত্মীয়তার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন,“প্রশাসন থেকে চাকরি বিষয়ে কথা না বলতে নিষেধ করা হয়েছে। চাকরির বিষয়ে প্রশাসনই জানে।”
জুলাই আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক আজিজুর রহমান শান্ত বলেন,“নতুন প্রশাসনের কাছে শিক্ষার্থীদের অনেক প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু আওয়ামী শাসনামলে অনিয়মে জড়িত শিক্ষক-কর্মকর্তারা এখনো গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন, যা হতাশাজনক।”
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. এনামুজ্জামান মন্তব্য করতে রাজি হননি।
একুশে সংবাদ/এ.জে



একুশে সংবাদের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

