ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থী সাজিদ আব্দুল্লাহর ভিসেরা রিপোর্টে শ্বাসরোধে হত্যার বিষয়টি উঠে এসেছে। এরপর থেকে এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবিতে আবারও ক্যাম্পাস উত্তাল হয়ে উঠেছে।
রোববার রাত সাড়ে ৭টায় শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে। পরে সোমবার আল-কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের নেতৃতে বেলা ১১টায় একই দাবিতে প্রশাসন ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি করেছেন শিক্ষার্থীরা। এদিকে রোববার ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটি উচ্চতর তদন্তের সুপারিশ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। পরে পিবিআইকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়ার কথা জানান উপাচার্য। একইসঙ্গে আইসিটি সেল নিয়ন্ত্রিত গুরুত্বপূর্ণ ১৬ জুলাইয়ের নির্দিষ্ট সময়ের সিসিটিভি ফুটেজ ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটিকে না দিতে পারায় ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে। এ ঘটনা ক্যাম্পাসে নতুন করে সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।
জানা যায়, সোমবার কর্মসূচিতে শাখা ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্র আন্দোলন, জমিয়তে তালাবায়ে আরাবিয়া সহ বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন অংশ নেয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের দায়িত্ব ও জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনার আশ্বাস দিলে শিক্ষার্থীরা কর্মসূচি স্থগিত করেন। এরআগে বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে প্রশাসন ভবন চত্বরে অবস্থান করেন তারা। এসময় শিক্ষার্থীরা বলেন, সাজিদকে সুপরিকল্পিত হত্যা করা হয়েছে। এই ঘটনার অনেকদিন পেরিয়ে গেলেও এখনো কোনো মামলা করেনি প্রশাসন। তারা বিভিন্ন টালবাহানা করছে। আমরা চাই অবিলম্বে পিবিআই এর মাধ্যমে তদন্ত করে খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার করা হোক। সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আমরা মাঠ ছাড়বো না।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, পিবিআই ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে এ তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হবে। পুলিশ প্রশাসনের কাছে মামলা করার পরে তারা যে ধরনের সাহায্য সহযোগিতা চাইবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে তা করা হবে। সোমবারের মধ্যেই একটি আনুষ্ঠানিক মামলা রুজু করা হবে। দোষীদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। এছাড়া সন্ধ্যায় জরুরি সিন্ডিকেট সভায় পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। জড়িতদের শাস্তির ব্যাপারে আমরা শতভাগ কঠোর অবস্থানে আছি।
এদিকে সোমবার বিকেলে সাজিদের বাবা আহসান হাবিবুল্লাহ ইবি থানায় মামলা দায়ের করেন। তিনি বলেন, ফরেনসিক রিপোর্ট অনুযায়ী আমার ছেলেকে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করা হয়েছে। এ মর্মে আমি ইবি থানায় মামলা করেছি। আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চাই। ইবি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মেহেদী হাসান বলেন, আজ সাজিদের বাবা বাদী হয়ে মামলা করেছে। মামলার কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
এরআগে রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের গঠিত ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং প্রতিবেদন জমা দিয়ে বিষয়টি উচ্চতর তদন্তের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে সুপারিশ করেছে। একইসঙ্গে আইসিটি সেল নিয়ন্ত্রিত গুরুত্বপূর্ণ ১৬ জুলাইয়ের নির্দিষ্ট সময়ের সিসিটিভি ফুটেজ পায়নি ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটি। এ নিয়ে ক্যাম্পাসজুড়ে নতুন করে রহস্যের দানা বেঁধেছে। ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে দুষছেন শিক্ষার্থীরা। এবিষয়ে ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. এমতাজ হোসেন বলেন, আমরা সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে অনেককে প্রশ্ন করেছি। তবে আইসিটি সেল নিয়ন্ত্রিত ডায়না চত্বর থেকে সাদ্দাম হলমুখী সিসিটিভি ফুটেজ ১৬ তারিখ বিকেল ৫ টার পর থেকে রাত ১১ টা পর্যন্ত তারা দিতে পারেনি। কিন্তু একই সময়ের অন্যান্য জায়গার ফুটেজ আমরা পেয়েছি। আমাদের সুপারিশমালায় একথা উল্লেখ করে দিয়েছি।
আইসিটি সেলের পরিচালক অধ্যাপক ড. শাহজাহান আলী বলেন, ফুটেজ গায়েব হয়েছে বিষয়টি এমন নয়। একটু মিস আন্ডারস্ট্যান্ডিং হয়েছে। ফাইল কপি করার সময় হয়তো কোন মিস্টেক হয়েছে। এমন হলে বিষয়টি যান্ত্রিক ত্রুটি ছাড়া আর কিছু নয়। সেদিনের আগেপরে সহ কোনো ধরনের ডেটা লস নেই। আমাদের কাছে সকল ফুটেজ রয়েছে, চাইলে আমরা আবারও কর্তৃপক্ষকে দেখাতে পারবো।
একুশে সংবাদ/এ.জে