AB Bank
  • ঢাকা
  • শনিবার, ১৪ জুন, ২০২৫, ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

বেরোবিতে আবাসিকতা ছাড়াই ‍‍`হল সংযুক্তি‍‍` ফি বাবদ কোটি টাকা উত্তোলন



বেরোবিতে আবাসিকতা ছাড়াই ‍‍`হল সংযুক্তি‍‍` ফি বাবদ কোটি টাকা উত্তোলন

রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে শিক্ষার্থীদের হলে সিট না দিয়েই ‘হল সংযুক্তি ফি’র নামে প্রায় এক কোটি ৭০ লাখ টাকা উত্তোলন করেছে প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব অনুযায়ী, প্রতি বছর গড়ে ১৪ লাখ টাকা এই খাত থেকে উত্তোলন করা হচ্ছে।

শুধু তাই নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ না থাকা সত্ত্বেও ‘ছাত্র সংসদ ফি’ বাবদ প্রায় ৩৪ লাখ টাকা এবং কমন রুম না থাকলেও ‘কমন রুম ফি’ বাবদ প্রায় ১৭ লাখ টাকা নেয়া হয়েছে। এসব ফি এখনও নিয়মিত আদায় করা হচ্ছে।

দুইবার নেওয়া হচ্ছে একই ফি

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষে ভর্তি ফরমের পে-স্লিপে দেখা যায়, ‍‍`হল সংযুক্তি ফি‍‍` হিসেবে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ১,০০০ টাকা আদায় করা হয়। কিন্তু ভর্তি শেষে কাউকেই আবাসিক হলের সিট দেওয়া হয় না। পরে হলে সিটের জন্য আবেদন করলে আবারও ১,০০০ টাকা ‍‍`হল সংযুক্তি ফি‍‍` দিতে হয়। এই প্রথা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ব্যাচ (২০০৮-০৯) থেকেই চলে আসছে।

সিট সংকটে শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, বর্তমানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ১৭ হাজার হলেও আবাসিক হল আছে মাত্র তিনটি— শহীদ মুখতার ইলাহী হল (২৪০টি সিট), বিজয়-২৪ হল (৩৫৫টি সিট) এবং শহীদ ফেলানি হল (৩৪২টি সিট)। অর্থাৎ মোট সিট সংখ্যা এক হাজারেরও কম। ফলে প্রায় ৭,০০০ শিক্ষার্থীকে বাইরে মেস বা বাসা ভাড়া করে মানবেতর জীবনযাপন করতে হয়।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ ও ক্ষোভ

এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীরা হল ফি আদায়ের বৈধতা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন। ফাইন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের শিক্ষার্থী হোসেন গাজী বলেন,“প্রথম বর্ষে ভর্তি হওয়ার সময় আমরা হল সংযুক্তি ফি দিয়েছি, কিন্তু পরে হলে উঠতে চাইলে আবারও একই ফি দিতে হয়। এটি সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। হল নিয়ে কোনো প্রশ্ন উঠলে বলা হয় ‘নিয়োগ বাণিজ্য’র কথা, কিন্তু এই ‘হল বাণিজ্য’ নিয়ে কেউ কথা বলে না।”

বিজয়-২৪ হলের আবাসিক শিক্ষার্থী হেলাল মিয়া বলেন,“সিট না পেয়েও ভর্তি সময় ফি দিতে হয়, পরে সিট পেলে আবার দিতে হয়— এটি অন্যায় ও অগ্রহণযোগ্য।”

শহীদ মুখতার ইলাহী হলের শিক্ষার্থী খাদিমুল সরদার বলেন,“ভর্তির সময়ই যখন ফি নেওয়া হয়, তখন পরে আবার কেন দিতে হয়? টাকা কোথায় যাচ্ছে, কিসে খরচ হচ্ছে, তাও জানি না।”

প্রশাসনের অবস্থান ও বিভ্রান্তি

বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ওমর ফারুক বলেন,“যে খাতের জন্য টাকা আদায় করা হচ্ছে, সেই খাতেই সেটি ব্যয় হওয়া উচিত। শিক্ষার্থীদের জন্য বাড়তি চাপ তৈরি করে এমন কোনো ফি আদায় করা উচিত নয়।”

সাবেক হিসাব পরিচালক প্রফেসর ড. আর এম হাফিজুর রহমান জানান,“আগে ছেলেদের ও মেয়েদের আলাদা হিশাবে ফি হল প্রশাসনের কাছে দেওয়া হত এবং হলের উন্নয়নেই খরচ করা হত।”

বিজয়-২৪ হলের বর্তমান প্রভোস্ট আমির শরীফ বলেন,“আমি জানতাম না, পরে আবার এই ফি নেওয়া হয়। দায়িত্ব নেওয়ার পর আমি এটি বন্ধ করে দিয়েছি। তবে হল প্রশাসনের বাইরে এখনও আদায় করা হচ্ছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা দরকার।”

শহীদ মুখতার ইলাহী হলের প্রভোস্ট প্রফেসর ড. মো. কামরুজ্জামান বলেন,“এই ফিতে এক মাসের অগ্রিম বেতন ও উন্নয়ন খরচ ধরা হয়।”

অর্থ ও হিসাব দপ্তরের বর্তমান পরিচালক প্রফেসর ড. মো. শাহজামান বলেন,“আগে কীভাবে খরচ হত জানি না। বর্তমান ভিসি আলাদা অ্যাকাউন্ট খোলার নির্দেশ দিয়েছেন এবং সেই অনুযায়ী ব্যয় করা হচ্ছে।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. শওকাত আলী বলেন,“আমি দায়িত্ব গ্রহণের পর আলাদা অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। আগে কীভাবে ব্যয় হয়েছে, তা আমার জানা নেই। এখন থেকে স্বচ্ছভাবে অর্থ ব্যবস্থাপনা হচ্ছে।”
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের সিট না দিয়েই বছর বছর কোটি টাকার ফি আদায় নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে প্রশাসনের স্বচ্ছতা ও দায়বদ্ধতা নিয়ে। শিক্ষার্থীরা বলছেন, প্রশাসনের উচিত এই অর্থের সঠিক ব্যবহার ও হিসাব প্রকাশ করা।

 

একুশে সংবাদ/ বেরোবি.প্র/এ.জে

Link copied!