জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে দ্বিতীয় ধাপের আওতায় কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার, লেকচার থিয়েটার ও স্পোর্টস কমপ্লেক্সের নির্মাণ কাজ দ্রুত গতিতে চলছে। এসব স্থাপনার কাজ শেষ হলে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদ্যমান সংকট অনেকটা নিরসন হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা বিশ্বমানের সুযোগ-সুবিধা পাবেন বলে জানিয়েছেন কতৃপক্ষ।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের চার তলার ছাদ ঢালাইয়ের কাজ চলছে। নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে নির্মাণ শ্রমিকদের মধ্যে কেউ রডের কাজ করছেন, আবার কেউ কেউ নির্মাণ সামগ্রী ওঠা-নামানো কাজ করছেন। সেখানে তারা দিন-রাত কাজ করছেন বলে জানা গেছে। এছাড়া লেকচার থিয়েটারের পাঁচ তলার ছাদ ঢালাইয়ের কাজ শেষ হয়েছে। এখন ষষ্ঠ তলার ছাদ ঢালাইয়ের কাজ চলছে। অন্যদিকে স্পোর্টস কমপ্লেক্সের একটি অংশের কাজ প্রায় শেষ। আরেক পাশের ছাদ ঢালাইয়ের জন্য প্রস্তুত করছেন শ্রমিকরা। এছাড়া স্পোর্টস কমপ্লেক্সের ভেতরে সুইমিংপুলের কাজ দ্রুত এগিয়েছে। প্রকৌশলীরা সার্বক্ষণিক এসব কাজ তদারকি করছেন। সবমিলিয়ে গ্রন্থাগার, লেকচার থিয়েটার ও স্পোর্টস কমপ্লেক্স নির্মাণে বিশাল এক কর্মযজ্ঞ চলছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গ্রন্থাগারের নির্মাণকাজে জড়িত এক শ্রমিক বলেন, ‘এতো বড় নির্মাণকাজে যুক্ত হতে পেরেছি, যা আমার জন্য অনেক গর্বের। আমরা এখানে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করছি। এছাড়া ভালোভাবে কাজ করার জন্য দায়িত্বরত স্যাররা নির্দেশ দিয়েছেন। সে অনুযায়ী সর্বোচ্চ আন্তরিকতার সাথে কাজ করছি।’
বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে নির্মিতব্য কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার, লেকচার থিয়েটার ও স্পোর্টস কমপ্লেক্সের নির্মাণ কাজ অনেক দ্রুত গতিতে চলছে। এর আগে কয়েকটি ভবনের নির্মাণকাজে অব্যবস্থাপনা দেখা গেলেও এসব ভবনে নির্মাণকাজে তেমন অব্যবস্থাপনা দেখা যায়নি। এমনকি কাজের মানও বেশ ভালো, যা দূর থেকে দেখেও অনেকটা উপলদ্ধি করা যায়।
অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পে দায়িত্বরত এক কর্মকর্তা জানান, নির্মাণাধীন কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের ৬০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অনিক ট্রেডার্স ও মাহাবুব ব্রাদার্স প্রাইভেট লিমিটেড যৌথভাবে এই ভবনের নির্মাণ কাজ করছেন। এছাড়া লেকচার থিয়েটার ভবনের ৬৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এই ভবনের নির্মাণ কাজ করছেন অনিক ট্রেডার্স। অন্যদিকে স্পোর্টস কমপ্লেক্সের নির্মাণ কাজ করছেন মাহাবুব ব্রাদার্স প্রাইভেট লিমিটেড। এ ভবনের ৪৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।

প্রকল্প কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় নির্মিতব্য লেকচার থিয়েটারের কাজ শেষ হলে আধুনিক ও সময়োপযোগী পাঠদানকক্ষের সংকট দূর হবে। এই লেকচার থিয়েটারে মোট ৬২টি সুসজ্জিত শ্রেণীকক্ষ থাকবে যাতে একসাথে একশ’ জন শিক্ষার্থী বসতে পারবেন। প্রতিটি ক্লাসরুমে ওয়াল র্যাক থাকবে যেখানে শিক্ষার্থীদের জন্য ল্যাপটপ ও অন্যান্য পাঠ-প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র রাখা যাবে। ১০টি ল্যাব থাকবে যা বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা ছাড়াও অন্যান্য শিক্ষার্থীরা ব্যবহার করতে পারবে। এছাড়া দু’টি ক্যান্টিন ও দু’টি সেমিনার লাইব্রেরি থাকবে যেখানে ক্লাসের ফাঁকে শিক্ষার্থীরা খেতে ও পড়তে পারবে। পাশাপাশি দুইটি গ্যালারি থাকবে যার প্রত্যেকটিতে ২৫০ জন শিক্ষার্থী একসাথে পরীক্ষা দিতে পারবে।
এছাড়া নির্মিতব্য গ্রন্থাগার বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচি অনুযায়ী কোর্সগুলোর পাঠ্যপুস্তক ও রেফারেন্স বই, গবেষণা জার্নাল ও গবেষণার জন্য রেফারেন্স বই, শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ার গঠনে সহায়ক বই এবং শিল্প, সংস্কৃতি ও সাহিত্যের তিন লক্ষ ভল্যুম পুস্তকের সংগ্রহশালা হবে। অন্যদিকে শারীরিক প্রতিবন্ধী ও শিশুদের জন্য স্বতন্ত্র বিভাগে প্রকাশনার বিশেষ সংগ্রহ থাকবে। রিডিং জোনে সাধারণ পাঠকক্ষের পাশাপাশি বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী ও গবেষকদের জন্য আলাদা পাঠকক্ষ থাকবে। এছাড়া রেফারেন্স রিডিং, ওপেন গ্রুপ স্টাডি, গ্রুপ ডিসকাশন ও রিসার্চ কনসাল্টেশনের জন্য থাকবে পৃথক পৃথক পাঠকক্ষ।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে সুইমিংপুল থাকা সত্ত্বেও অব্যবস্থাপনা ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার অভাবে ব্যবহার অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এছাড়া জিমনেশিয়াম যেটি রয়েছে তা কেবল নামমাত্র, যেখানে নেই প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি। এর পাশাপাশি ইনডোর গেমসগুলোর জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেই। তবে অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের আওয়াত নির্মিতব্য স্পোর্টস কমপ্লেক্সের কাজ শেষ হয়ে শিক্ষার্থীদের চাহিদা পূরণ হবে এবং সকল সংকট দূর হবে।
অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় চলমান নির্মাণকাজ তদারকি কমিটির সদস্য ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক খালিদ কুদ্দুস বলেন, ‘গ্রন্থাগার ও লেকচার থিয়েটারের কাজের মান যথেষ্ট ভালো। এছাড়া তুলনামূলক দ্রুত গতিতে চলছে। তবুও আমরা কোথাও কোন অসঙ্গতি পেলে, তা জানালে তারা দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছে। এর আগে, কয়েকটি ভবনের ছাদ ঢালাইয়ের কাজে অসঙ্গতি পেয়ে বন্ধ করে দিয়েছিলাম, তবে এসব ভবনে তেমন কোন পদক্ষেপ নিতে হয়নি।’
সার্বিক বিষয়ে অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের উপ-প্রধান প্রকৌশলী আহসান হাবীব বলেন, ‘কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার, লেকচার থিয়েটার ও স্পোর্টস কমপ্লেক্সের নির্মাণ কাজ দ্রুত গতিতে চলছে। যেসব ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজ করছে, তাদের কাজের মান অনেক ভালো। তবুও সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা ও গুণগতমান ঠিক রেখে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছি। এসব ভবনের নির্মাণকাজ শেষ হলে অনেক সংকট দূর হবে। এছাড়া শিক্ষার্থীরা বিশ্বমানের সুযোগ-সুবিধা পাবেন।’
এর আগে, ২০১৮ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে ২১টি অবকাঠামো নির্মাণের জন্য ১ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্প’ নামের প্রকল্প নেওয়া হয়। মোট তিন ধাপের এ প্রকল্পের প্রথম ধাপে ছেলে ও মেয়েদের জন্য তিনটি করে ছয়টি আবাসিক হল নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই হলগুলো উদ্বোধন করেন।
এছাড়া গত বছরের জুনে দ্বিতীয় ধাপের ১৪টি স্থাপনার নির্মাণকাজের উদ্বোধন করা হয়। তবে স্থান নির্ধারণ সংক্রান্ত জটিলতাসহ কয়েকটি কারণে একাধিক স্থাপনার কাজ বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে, প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের আন্দোলনে ১০ তলা বিশিষ্ট নতুন প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ কাজ স্থগিত করা হয়। যদিও পরবর্তীতে মন্ত্রণালয় থেকে প্রশাসনিক ভবনের নির্মাণ কাজ শুরুর জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ফলে তৃতীয় ধাপে প্রশাসনিক ভবনের নির্মাণ কাজের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়।
সর্বশেষ গত ২৪ সেপ্টেম্বর অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে তৃতীয় ধাপের জীববিজ্ঞান অনুষদ, কলা ও মানবিকী অনুষদ, গাণিতিক ও পদার্থবিষয়ক অনুষদের সম্প্রসারিত ভবন এবং ১০ তলা বিশিষ্ট নতুন প্রশাসনিক ভবন নির্মাণের জন্য টেন্ডার আহ্বান করা হয়। এরপর গত ২৩ অক্টোবর টেন্ডার ওপেন করা হয়। তবে কোন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ পেয়েছেন- তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
একুশে সংবাদ/আ.হ.প্র/জাহা