জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশন চলাকালে শুক্রবার(২৫ সেপ্টেম্বর) নিউইয়র্কে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন কয়েক ডজন বিশ্বনেতা। তারা তাঁর নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে পূর্ণ সমর্থন জানান এবং বাংলাদেশকে দক্ষতা ও সহায়তা প্রদানের অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
লাটভিয়ার প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ভাইরা ভিকে-ফ্রেইবার্গার নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলটি ইউনূসের সঙ্গে হোটেল স্যুটে বৈঠক করে। তিনি নিজামি গাঞ্জাভি আন্তর্জাতিক কেন্দ্রের (এনজিআইসি) সহ-সভাপতিও। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন স্লোভেনিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট বোরুট পাহোর, সার্বিয়ার বরিস তাদিচ, লাটভিয়ার এগিলস লেভিটস, ইউরোপীয় কাউন্সিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বেলজিয়ামের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী চার্লস মিশেল, গ্রিসের জর্জ পাপান্দ্রেউ, বুলগেরিয়ার রোজেন প্লেভনেলিভ ও পেতার স্টোয়ানভ, ক্রোয়েশিয়ার ইভো জোসিপোভিচ, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনার ম্লাদেন ইভানিক এবং মরিশাসের আমিনা গুরিব-ফাকিমসহ একাধিক বিশ্বনেতা।
এছাড়া কমনওয়েলথের সাবেক মহাসচিব, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের চার প্রাক্তন সভাপতি, একাধিক সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী, বিশ্বব্যাংকের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং কেরি কেনেডি, রবার্ট এফ. কেনেডি হিউম্যান রাইটস-এর সভাপতি উপস্থিত ছিলেন।
নেতারা দারিদ্র্য বিমোচন ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় অধ্যাপক ইউনূসের অবদান ও আজীবন নিষ্ঠার প্রশংসা করেন। তাঁরা বলেন, “আমরা আপনাকে এবং বাংলাদেশের জনগণকে সমর্থন করতে এখানে আছি। আমরা আপনার সঙ্গে সম্পূর্ণভাবে আছি।”
সভায় বাংলাদেশের সাম্প্রতিক অগ্রগতির স্বীকৃতি দেওয়ার পাশাপাশি ১৬ বছরের দুঃশাসন, দুর্নীতি ও শোষণের পর দেশ যে চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড়িয়েছে, সেটিও উল্লেখ করা হয়। অনেক নেতা অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ও রাষ্ট্রপুনর্গঠনে নিজেদের অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করার আশ্বাস দেন।
কেরি কেনেডি বলেন, “বাংলাদেশ মানবাধিকার বিষয়ে অসাধারণ অগ্রগতি অর্জন করেছে।” জর্জটাউন ইনস্টিটিউট ফর উইমেন, পিস অ্যান্ড সিকিউরিটির নির্বাহী পরিচালক মেলান ভারভির জানান, প্রতিষ্ঠানটি শীঘ্রই বাংলাদেশের জুলাই বিপ্লবকে আনুষ্ঠানিকভাবে সমর্থন ঘোষণা করবে।
অধ্যাপক ইউনূস বিশ্বনেতাদের সমর্থনে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, “এটা সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত। আপনাদের এভাবে একত্রিত হতে দেখা আমার জন্য অবিশ্বাস্য এক অভিজ্ঞতা।” তিনি দেশের পরিস্থিতিকে ১৫ বছরের ভূমিকম্প-পরবর্তী পুনর্গঠনের সঙ্গে তুলনা করে বলেন, “মানুষ সীমিত সম্পদ থাকা সত্ত্বেও রাতারাতি অলৌকিক পরিবর্তন আশা করছে। তবে তরুণদের স্বপ্ন পূরণ করতে হবে—তারা একটি নতুন বাংলাদেশ চায়।”
তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য সাধারণ নির্বাচন সফল করতে সহযোগিতার আহ্বান জানান। “আপনাদের পরামর্শ, সমর্থন ও নৈতিক শক্তি বাংলাদেশের জন্য অমূল্য হবে,” বলেন অধ্যাপক ইউনূস।
সভায় এসডিজি সমন্বয়কারী লামিয়া মোর্শেদও উপস্থিত ছিলেন।
একুশে সংবাদ/এ.জে