পোশাক শিল্পখাত অন্য অনেক দেশের তুলনায় এগিয়ে থাকলেও বাংলাদেশের শ্রমিকদের মজুরি বিশ্বে সর্বনিম্ন বলে দাবি করেছে গণতদন্ত কমিটি। তদন্ত রিপোর্টে বলা হয়, মজুরি চাইতে হবে কেন? ইনক্রিমেন্ট চাইতে হবে কেন? দ্রব্যমূল্য তো গোপনে বাড়ে না যে কেউ জানে না। সবাই বাজারের অবস্থা জানে, মজুরি বোর্ডও ভালোই জানে। তবুও মজুরি বকেয়া থাকে, তার যৌক্তিক পুনর্বিন্যাস হয় না। শ্রমিকদের রাস্তায় নামতে হয়।
শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে তদন্ত কমিটির রিপোর্টে এসব কথা বলা হয়। সংবাদ সম্মেলনে তদন্ত রিপোর্ট পড়ে শোনান অধ্যাপক আনু মোহাম্মদ ও ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। রিপোর্টে আরও বলা হয়, শ্রমিকদের যৌক্তিক ন্যূনতম মজুরি চাইতে হয়। বিনিময়ে পাওয়া যায় হামলা, মামলা ও গুলি!
বাংলাদেশের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ভিয়েতনামে একজন গার্মেন্টস শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি ২০০ মার্কিন ডলারের কাছাকাছি উল্লেখ করে রিপোর্টে বলা হয়, কম্বোডিয়ার অর্থনীতি আমাদের তুলনায় নাজুক হওয়ার পরও তারা শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ২০০ ডলারের বেশি নির্ধারণ করেছে। ভারত ও পাকিস্তানে তা ১৭০-১৮০ ডলার। চীনে একজন পোশাক শ্রমিক ৩০০ ডলার মজুরি পেয়ে থাকেন। বাংলাদেশে ২০১৮ সালে পোশাক শ্রমিকদের মজুরি নির্ধারণ করা হয় ৯৫ ডলার। তারপর বছর বছর তা সমন্বয় করার কথা থাকলেও করা হয়নি। শ্রমিকদের পক্ষ থেকে এবারে দাবি করা হয়েছিল ২৫ হাজার টাকা, যা ২০০ ডলারের কাছাকাছি, ন্যূনতম মজুরি।
শ্রমিকদের দাবি-দাওয়ার বিষয়টি মনোযোগ দিয়ে পর্যবেক্ষণ ও যাচাই করার দায়িত্ব ছিল সরকার এবং সরকার গঠিত ওয়েজ বোর্ডের। কিন্তু তারা তা না করে শুধু মালিকদের কথাই শুনেছে। পুলিশ, বিজিবি, সন্ত্রাসী বাহিনীর চাপের মুখে সেই কম মজুরি শ্রমিকদের ওপর চাপিয়ে দিয়েছে। গুলি করে ও পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে একজন ঘুমন্ত শ্রমিকসহ আরও তিনজন শ্রমিককে, জখম হয়েছেন আরও অনেকে। এ নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো তদন্ত বিচারের উদ্যোগও নেওয়া হয়নি।
তদন্ত কমিটির পক্ষ থেকে ৮টি সুপারিশ করা হয়। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- শ্রমিক হত্যার যথাযথ তদন্ত করে দায়ী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা। পুলিশ ও তৎকালীন সরকারি দলের সন্ত্রাসী বাহিনীর শ্রমিকদের ওপর হামলা, গুলি করে হতাহত করে তারপর আবার সেই শ্রমিকদের নামেই মিথ্যা মামলা দিয়ে আটক করে নির্যাতন করেছে। হয়রানি এখনও অব্যাহত রেখেছে। অবিলম্বে সবাইকে ক্ষতিপূরণ দিয়ে দায়ের করা সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। প্রচলিত আইন ভঙ্গ করে কোনো পুলিশ যদি কাউকে খুন কিংবা জখম করে তাহলে ব্যক্তি পুলিশের সঙ্গে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কেও তার দায়িত্ব নিতে হবে।
একুশে সংবাদ/বিএইচ