শুস্ক মৌসুমে উপকূলের লবণাক্ত পতিত জমিতে রিলে পদ্ধতিতে গম উৎপাদনের প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত বিজ্ঞানী ডক্টর মৃন্ময় গুহ নিয়োগী। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে উপকূলের কৃষক আমন ধানের পর বিনা চাষে অল্প খরচে গম চাষ করে লাভবান হবেন। সম্প্রতি বরগুনার তালতলী উপজেলায় ইউনির্ভাসিটি অব ওয়েষ্টার্ন অস্ট্রেলিয়া এবং পোভার্টি ইরাডিকেশন প্রোগ্রাম, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এবং বাংলাদেশ গম ও ভূট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহায়তায় গবেষণা চালিয়ে সফল হয়েছেন ডক্টর মৃন্ময় গুহ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বরগুনার উপকূলীয় এলাকায় এক সময়ের লবনাক্ত পতিত জমিতে এখন চাষ হচ্ছে গম। আমনের পর এবার বাড়তি ফলনের আশায় বুক বাঁধছেন এখানকার কৃষকরা।
শুষ্ক মৌসুমে খাল-নদী আর জমি লবনাক্ত হয়ে বছরের ৬ মাসই পতিত পড়ে থাকে বরগুনার উপকূলীয় এলাকার প্রায় ৪ লাখ ৩৯ হাজার হেক্টর জমি। সেই জমিতে গম চাষের রিলে পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত বিজ্ঞানী ডক্টর মৃন্ময় গুহ নিয়োগী।
ড. মৃন্ময় গুহ নিয়োগী জানালেন, এই রিলে পদ্ধতির বিস্তারিত বিবরণ, আমন ধান জমিতে থাকতেই তিনি নভেম্বর মাসে জমিতে ছিটিয়ে দেন গমের বীজ। এর বিশ দিন পর মাঠ থেকে তুলে নেওয়া হয় আমন ধান, এরপর গমের নিয়মিত পরিচর্যা অব্যাহত রাখলেই সোনালী গমে ভরে ওঠে জমি।
তালতলী উপজেলার শারিকখালী এলাকায় গবেষণার মাঠ হিসেবে রিলে পদ্ধতিতে ৭ একর জমিতে গম চাষ করে ফসল ঘরে তুলেছেন ২০ জন কৃষক। অন্যরাও আগ্রহী হচ্ছেন এই পদ্ধতির গম চাষে।
কৃষকেরা জানান, এই পদ্ধতিতে তারা আমনের পর গমের চাষ করে ভালো অর্থ উপার্জনের আশা দেখছেন।
ড. মৃন্ময় গুহ নিয়োগী জানান, রিলে পদ্ধতিতে এক বিঘা জমিতে গম চাষে খরচ হয় পাঁচ হাজার টাকা। ফলন পাওয়া যায় ১০ মণ, যার দাম ২০ হাজার টাকা।
বরগুনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. আবু সৈয়দ মোঃ জোবায়দুল আলম জানান, লবন সহিষ্ণু এক ফসলি জমিতে গম চাষে কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করছেন তারা। রিলে পদ্ধতি ছাড়া এখানে গম চাষ করার কোন সুযোগ নেই কারণ এইসব জমিতে আমন কাটতে অনেক দেরি হয়ে যায়।
সম্প্রতি পরীক্ষামূলক এই গম চাষের জমি পরিদর্শন করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য গোলাম সরোয়ার টুকু। দেশের সব উপকূলীয় এলাকায় রিলে পদ্ধতির গম চাষে সরকারি সহায়তার কথা সংসদে তুলবেন বলে জানান তিনি।
দেশে বছরে গমের চাহিদা ৭৫ লাখ মেট্রিক টন। এরমধ্যে মাত্র ১১ থেকে ১২ লাখ টন গম দেশে উৎপাদন হয়, আমদানি হয় বাকি গম। স্থানীয় সংসদ সদস্য মনে করছেন এই রিলে পদ্ধতিতে গম চাষ করে গমের আমদানি কমানো যাবে, কৃষকেরাও লাভবান হবেন।
একুশে সংবাদ/ই.স.প্র/জাহা



একুশে সংবাদের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

