রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যা মামলায় পলাতক থাকা ২৪ আসামির বিরুদ্ধে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে তাদের আগামী ২২ জুলাইয়ের মধ্যে আদালতে হাজির করার নির্দেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। পাশাপাশি, অন্য মামলায় কারাগারে থাকা আসামি রাফিউল হাসান রাসেল ও আনোয়ার পারভেজ আপিলকে এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে হাজির করার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
রোববার (১৩ জুলাই) বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ এই আদেশ দেন।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের পক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর আব্দুস সোবহান তরফদার, আব্দুস সাত্তার পালোয়ান এবং বি এম সুলতান মাহমুদ।
এর আগে এদিন মামলার চার আসামি—সাবেক উপ-পরিদর্শক (এসআই) আমির হোসেন, কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর শরিফুল ইসলাম এবং ছাত্রলীগ কর্মী ইমরান চৌধুরী আকাশকে আদালতে হাজির করা হয়।
গত ৩০ জুন ট্রাইব্যুনাল এই মামলার অভিযোগ আমলে নেয় এবং পলাতক ২৬ আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দাখিল করা তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছরের কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় ১৬ জুলাই রংপুরে পুলিশের গুলিতে আবু সাঈদ নিহত হন। তদন্তে ৩০ জনের সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেছে।
প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সেদিন বিক্ষোভ চলাকালে সাবেক এসআই আমির হোসেন ও কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায়ের গুলিতে নিহত হন আবু সাঈদ। অভিযুক্ত চারজন আগে থেকেই কারাগারে অন্য মামলায় আটক ছিলেন।
আদালত সূত্র জানায়, নিহত হওয়ার সময় আবু সাঈদ দুই হাত প্রসারিত করে দাঁড়িয়ে ছিলেন, সেই মুহূর্তে তাকে গুলি করার ভিডিও গণমাধ্যমে প্রকাশ হলে সারাদেশে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। এরপর দেশজুড়ে কর্মসূচি পালন হয়, যার মধ্যে ১৯ জুলাই পর্যন্ত টানা অবরোধ ও সংঘর্ষে বহু প্রাণহানি ঘটে।
এই গণ-আন্দোলনের মধ্যে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার পদত্যাগ করে এবং তিনি তার বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে ভারত চলে যান।
সরকার পতনের ঘটনায় সরকারি হিসাবে প্রায় ৮৫০ জনের মৃত্যু হয়। এসব ঘটনার বিচার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আওতায় পরিচালিত হচ্ছে।
উল্লেখ্য, ২০১০ সালে এই ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করার জন্য। বর্তমানে এই ট্রাইব্যুনাল ব্যবহার করা হচ্ছে জুলাই গণঅভ্যুত্থান সংশ্লিষ্ট সহিংসতার বিচারকার্যে।
একুশে সংবাদ/ঢ.প/এ.জে