মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যের মিলবোর্ন বরোতে মেয়র নির্বাচনে ভোট জালিয়াতির ঘটনায় দুই বাংলাদেশি নাগরিককে কারাদণ্ড দিয়েছেন দেশটির একটি ফেডারেল আদালত। শুক্রবার (২০ জুন) যুক্তরাষ্ট্রের জেলা বিচারক হার্ভে বার্টল পৃথক শুনানিতে এ রায় ঘোষণা করেন।
দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন—৪৮ বছর বয়সী নুরুল হাসান ও ৫২ বছর বয়সী রফিকুল ইসলাম। আদালতের রায়ে নুরুল হাসানকে তিন বছরের (৩৬ মাস) কারাদণ্ড এবং রফিকুল ইসলামকে এক বছরের (১২ মাস ১ দিন) কারাদণ্ডসহ অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
আদালতের নথি অনুসারে, ২০২১ সালের নির্বাচনে প্রাথমিক পর্বে পরাজয়ের পর হাসান স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সিদ্ধান্ত নেন। এরপর মিলবোর্ন বরোর কাউন্সিলের দুই সদস্য—মুনসুর আলী ও রফিকুল ইসলামের সহায়তায় একটি ভোট জালিয়াতি চক্রে জড়িত হন।
তদন্তে উঠে আসে, তারা মিলবোর্নের বাইরের বাসিন্দাদের পরিচয় ব্যবহার করে ভুয়া ভোটার হিসেবে নিবন্ধন করেন এবং সেই ভুয়া ভোটারদের নামে মেইল-ইন ব্যালটের মাধ্যমে ভোট প্রদান করেন। জাল ভোটগুলোতে ভোটারের নাম, ঠিকানা, জন্মতারিখ ব্যবহার করে অনলাইন নিবন্ধন করা হয় এবং স্বাক্ষর নকল করে ব্যালট জমা দেওয়া হয়। তবে শেষ পর্যন্ত এই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়—নির্বাচনে হাসান ১৩৮ ভোট পেয়ে ১৬৫ ভোটে পরাজিত হন।
আদালতে হাসান ৩৩টি অভিযোগে দোষ স্বীকার করেছেন, যার মধ্যে ষড়যন্ত্র, মিথ্যা তথ্য প্রদান এবং ভুয়া ভোটার নিবন্ধনের মতো অভিযোগ রয়েছে। তাকে ১ হাজার ৩০০ ডলার জরিমানাও গুনতে হবে, সঙ্গে থাকবে এক বছরের তত্ত্বাবধানে মুক্তি।
রফিকুল ইসলাম ৭টি অভিযোগে দোষ স্বীকার করেছেন। তাকে এক বছর এক দিনের কারাদণ্ড, এক বছরের তত্ত্বাবধান, ১ হাজার ডলার সাধারণ জরিমানা ও ৭০০ ডলার বিশেষ জরিমানা প্রদান করা হয়েছে।
এদিকে তৃতীয় অভিযুক্ত মুনসুর আলীর বিরুদ্ধে ২৫টি অভিযোগ আনা হয়েছে এবং তিনি সবগুলোতেই দোষ স্বীকার করেছেন। তার সাজা ঘোষণা করা হবে আগামী ২৬ জুন।
মার্কিন অ্যাটর্নি ডেভিড মেটকাফ জানান, অভিযুক্তরা ভোটারদের গণতান্ত্রিক অধিকার লঙ্ঘন করেছেন। এমন কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে, যাতে নির্বাচনব্যবস্থার ওপর জনগণের আস্থা অটুট থাকে।
এফবিআইয়ের ফিলাডেলফিয়া শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওয়েইন জ্যাকবস বলেন, ভোট জালিয়াতি শুধু আইন লঙ্ঘন নয়, এটি গণতন্ত্রের ভিত্তিকেই নড়বড়ে করে তোলে।
এই মামলার তদন্ত যৌথভাবে করেছে এফবিআই ও ডেলাওয়্যার কাউন্টি জেলা অ্যাটর্নি অফিস। মামলার কার্যক্রম পরিচালনা করেন সহকারী মার্কিন অ্যাটর্নি মার্ক বি. ডুবনফ।
একুশে সংবাদ/চ.ট/এ.জে