তিন সপ্তাহে ৯ শহরের নিয়ন্ত্রণ হারালো মিয়ানমার সেনাবাহিনী।মিয়ানমারের রাখাইন, শান, চিন, সাগাইং, মাগওয়ে রাজ্যে প্রতিরোধ-যুদ্ধে ক্রমেই কোণঠাসা হয়ে পড়ছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। গত তিন সপ্তাহে ৯টি শহর এবং দেড় শতাধিক সেনা ঘাঁটির দখল হারিয়েছে তারা। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই মুহুর্তে একটি অস্তিত্ব সংকটের সম্মুখীন হচ্ছে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী।
আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থার খবরে বলা হয়েছে, সীমান্তের কাছে মিয়ানমারের সামরিক ঘাঁটিতে বিদ্রোহীদের আক্রমণ থেকে পালিয়ে বৃহস্পতিবার অন্তত ২৯ জন মিয়ানমার সেনা ভারতের মিজোরাম রাজ্যে প্রবেশ করেছে।
সেনা অভ্যুত্থানের পর ছড়িয়ে পড়া সহিংসতায় মিয়ানমারের ২০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হবার খবর দিয়েছে জাতিসংঘ। ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে অং সান সু চির এনএলডি সরকারকে উৎখাত করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। গ্রেপ্তার হন অং সান সু চি এবং তার দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা।
সেনা অভ্যুত্থানের পর থেকেই সামরিক বাহিনীকে প্রতিরোধে প্রস্তুতি নিচ্ছে বেসামরিক বিদ্রোহীরা। রাখাইন, কাচিন, চিনসহ সীমান্তবর্তী বিভিন্ন অঞ্চলে হামলা জোরদার করে স্থানীয় সশস্ত্র গোষ্ঠীও। সম্প্রতি জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে অপারেশন ওয়ান থাউজেন্ড টুয়েন্টি সেভেন ঘোষণা করে জাতিগত জোট ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স। মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স আর্মি, তাং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি ও আরাকান আর্মির সমন্বয়ে গঠিত হয়েছে এই জোট। শান, চিন, সাগাইং রাজ্যে ক্রমেই জোরদার হচ্ছে তাদের হামলা।
গত তিন সপ্তাহে ৯টি শহরের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে সেনাবাহিনী। এরমধ্যে কেবল শান রাজ্যেই ৫টি শহরের দখল নিয়েছে বিদ্রোহীরা। থাইল্যান্ড সীমান্তবর্তী চিন রাজ্যে কোণঠাসা হয়ে পড়েছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। মাত্র ১৯ দিনে ১৪৪টি সেনা ঘাঁটির দখল হারিয়েছে তারা।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই মুহুর্তে একটি অস্তিত্ব সংকটের সম্মুখীন হচ্ছে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী। সোমবার শান রাজ্যের উত্তরের একটি সেনা ঘাঁটির দখল নেয় কাচিন ইনডিপেনডেন্ট অর্গানাইজেশন। রাখাইনে আরাকান আর্মির হামলায় সোমবার থেকে প্রায় ৪০টি অবস্থান ছেড়েছে সেনাবাহিনী।
মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অপারেশন ওয়ান-ওয়ান-ওয়ান চালাচ্ছে কারেনি ন্যাশনালিটিস ডিফেন্স ফোর্স। কায়া রাজ্যে অভিযান চালিয়ে দুই দিনে শতাধিক সেনা হত্যার দাবি করেছে তারা। অন্তত ২০টি সেনা চৌকির দখল হারিয়েছে জান্তা।
জাতিসংঘের হিসেব অনুযায়ী, সেনা অভ্যুত্থানের পর দেশটিতে ছড়িয়ে পড়া সহিংসতার কারণে ঘরবাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়েছে ২০ লাখ মানুষ। চলমান পরিস্থিতিতে উদ্বেগ জানিয়ে সব পক্ষকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। সেই সঙ্গে অনুমতি চেয়েছেন দ্রুত মানবিক ত্রাণ প্রবেশের।
একুশে সংবাদ/এএইচিবি/এস কে