সরকারের ‘সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি (ইপিআই)’র আওতায় সারাদেশে শুরু হয়েছে টাইফয়েড প্রতিরোধে টিকা কার্যক্রম। এ উদ্যোগের মাধ্যমে ৯ মাস থেকে ১৫ বছর বয়সী প্রায় ৫ কোটি শিশু ও কিশোর-কিশোরীকে এক ডোজের টাইফয়েড কনজুগেট ভ্যাকসিন (টিসিভি) প্রদান করা হবে।
রোববার (১২ অক্টোবর) থেকে একযোগে শুরু হওয়া এই কর্মসূচি চলবে আগামী ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এই টিকা টাইফয়েড প্রতিরোধে ৯৫ শতাংশের বেশি কার্যকর।
ইপিআই কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এক ডোজের এই ইনজেকটেবল টিকা ৩ থেকে ৭ বছর পর্যন্ত প্রতিরোধ ক্ষমতা বজায় রাখে। আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্যাভি ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্সের সহায়তায় বাংলাদেশে টিসিভি সরবরাহ করা হয়েছে।
চিকিৎসকদের মতে, টাইফয়েডে আক্রান্ত হলে শুধু শারীরিক জটিলতাই নয়, আর্থিক ক্ষতিও হয় উল্লেখযোগ্য। এছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়া তৈরির ঝুঁকিও বাড়ে। তাই টিকা গ্রহণই সবচেয়ে কার্যকর প্রতিরোধ ব্যবস্থা বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
টিকা নেওয়ার জন্য অভিভাবকদের https://vaxepi.gov.bd/registration/tcv ওয়েবসাইটে গিয়ে সন্তানের ১৭-সংখ্যার জন্মনিবন্ধন নম্বর ব্যবহার করে নিবন্ধন করতে হবে। নিবন্ধন সম্পন্ন হলে জন্মনিবন্ধন সনদ ব্যবহার করে অনলাইনে ভ্যাকসিন কার্ড ডাউনলোড করা যাবে।
যেসব শিশুর জন্মনিবন্ধন নেই, তারা নিকটস্থ টিকাকেন্দ্রে স্বাস্থ্যকর্মীদের সহায়তায় নিবন্ধন করতে পারবে। নিবন্ধন ছাড়া টিকা নেওয়া গেলেও পরে সনদ গ্রহণে জটিলতা হতে পারে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ৪ কোটি ৯০ লাখ শিশুকে টিকা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ১ কোটি ৭০ লাখের বেশি শিশু নিবন্ধন করেছে। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই টিকা সম্পূর্ণ নিরাপদ এবং এর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। বর্তমানে বিশ্বের ২১টিরও বেশি দেশে এই টিকা ব্যবহৃত হচ্ছে।
তারা আরও বলেন, এত বড় পরিসরে টিকাদান কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ হলেও সরকারি-বেসরকারি সমন্বয়ের মাধ্যমে সফলভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব হবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানায়, টাইফয়েড জ্বর স্যালমোনেলা টাইফি ব্যাকটেরিয়ায় সংক্রমিত একটি রোগ, যা দূষিত পানি ও খাবারের মাধ্যমে ছড়ায়। উপসর্গ হিসেবে দেখা দেয় দীর্ঘস্থায়ী জ্বর, মাথাব্যথা, বমি, ক্ষুধামন্দা ও ডায়রিয়া।
‘গ্লোবাল বার্ডেন অব ডিজিজ’-এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২১ সালে বাংলাদেশে প্রায় ৪ লাখ ৭৮ হাজার মানুষ টাইফয়েডে আক্রান্ত হয়েছিলেন, যার মধ্যে ৮ হাজারেরও বেশি মৃত্যুবরণ করেন। আক্রান্তদের প্রায় ৭০ শতাংশই শিশু।
একুশে সংবাদ/এ.জে