উত্তরের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি ও স্বপ্ন পূরণের মাধ্যমে ২০০৮ সালের ১২ অক্টোবর প্রতিষ্ঠিত হয় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি)। শুরুতে রংপুর বিশ্ববিদ্যালয় নামে যাত্রা করলেও ২০০৯ সালে নামকরণ হয় নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়ার নামে।
এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে ছিল উত্তরের পিছিয়ে পড়া জনগণের উচ্চশিক্ষার সুযোগ তৈরি করা। শিক্ষা ও গবেষণার মাধ্যমে উত্তরবঙ্গের সামগ্রিক আর্থ-সামাজিক ও জ্ঞান ভিত্তিক উন্নয়ন।
ঐতিহাসিকভাবে রংপুরসহ উত্তরবঙ্গ শিক্ষায় পিছিয়ে ছিল। উচ্চশিক্ষার জন্য শিক্ষার্থীদের দূরে যেতে হতো, যা ব্যয়বহুল ও কষ্টসাধ্য ছিল। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এখানকার মানুষ ঘরের কাছেই উচ্চশিক্ষার সুযোগ পেয়েছে।
স্থানীয়দের প্রত্যাশা ছিল বিশ্ববিদ্যালয়টি উত্তরবঙ্গের উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দু হবে। কিন্তু ১৭ বছর পেরিয়েও সেই প্রত্যাশা পূরণ হয়নি।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ পর্যাপ্ত বাজেট ও অবকাঠামো সংকটের কারণে এখনো পিছিয়ে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টি।
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী মোকছেদুল মমিন বলেন, উত্তরাঞ্চলের মানুষের দীর্ঘ আন্দোলনের ফসল হলেও ১৭ বছর পেরিয়ে আজও পূর্ণাঙ্গ প্রত্যাশা পূরণে পিছিয়ে আছে। ৮০০০ শিক্ষার্থী থাকলেও আবাসন ব্যবস্থা অপ্রতুল, শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত দেশের মধ্যে সর্বনিম্ন (১:৫৪), নেই টিএসসি, অডিটোরিয়াম ও গবেষণা ইনস্টিটিউট। ফলে জাতীয়-আন্তর্জাতিক র্যাংকিংয়েও স্থান পাচ্ছে না বিশ্ববিদ্যালয়টি। তবুও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সক্ষমতার প্রমাণ দিলেও প্রয়োজনীয় বাজেট ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন না হওয়ায় প্রত্যাশিত সাফল্য অর্জিত হচ্ছে না।
তিনি আরো বলেন, উত্তরাঞ্চলের এই কেন্দ্রীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রাষ্ট্রীয় অবহেলার শিকার হলেও আসন্ন দিনে রাষ্ট্র কর্তৃক সেই অবহেলা মুক্ত হয়ে গুরুত্ব পাবে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মতোই, রূপ নেবে পূর্নাঙ্গ ও মানসম্মত বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১৭তম বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে এটাই সবার প্রত্যাশা।
একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস্ বিভাগের শিক্ষার্থী মাসুদ রানা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় ঘিরে আমাদের অনেক প্রত্যাশা, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা হবে,গবেষণা হবে,সাংস্কৃতিক চর্চা হবে,শিক্ষার্থী বান্ধব মনোরম একটা পরিবেশ গড়ে উঠবে, টিএসসি থাকবে,অডিটোরিয়াম থাকবে সব মিলিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়।
বেরোবিয়ানদেরও এমনটি আশা ছিলো, এখনো আছে। আমরা চাই পূর্ণাঙ্গ একটি বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে থাকবেনা আবাসন সংকট, পরিবহন সংকট।
আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এসব সমস্যার সমাধান করতে পারলেই শিক্ষার্থীদের মনে আনন্দের হাওয়া বইবে বলে আমি মনে করি।
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের জুলাই অভ্যুত্থানে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ শহীদ হলে দেশ ও বিশ্ব দরবারে পরিচিতি পায় বিশ্ববিদ্যালয়টি।
একুশে সংবাদ/এ.জে