করোনার নতুন ধরন জেএন.১-এর প্রভাবে সম্প্রতি ভারতে করোনা সংক্রমণে ঊর্ধ্বগতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। গত কয়েক দিনে যত রোগী করোনা পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন, তাদের অনেকের নমুনাতেই সন্ধান মিলেছে এ ধরনটির। ভারতের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য কেরালায় আক্রান্ত রোগীদের হার সবচেয়ে বেশি। সূত্র: ওয়াশিংটন পোস্ট
করোনাভাইরাসের নতুন উপধরন বেশ সংক্রামক। তাই উপসর্গ মৃদু হলেও সতর্কতা জরুরি। আপনি হয়তো মৃদু উপসর্গে কিছুদিন ভুগবেন, এরপর সেরে উঠবেন। কিন্তু সংক্রমণের সময়সীমার মধ্যে আপনি যদি এমন কারও সংস্পর্শে আসেন, যিনি উচ্চ ঝুঁকিতে আছেন, তাঁর জন্য কিন্তু তা মারাত্মক সংক্রমণের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। খেয়াল রাখতে হবে, পঞ্চাশোর্ধ্ব ব্যক্তি, দীর্ঘমেয়াদি রোগ, যেমন ডায়াবেটিস বা কিডনির রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি, আগে থেকেই হৃৎপিণ্ড বা ফুসফুসের সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তি এবং অন্তঃসত্ত্বা নারীরা উচ্চ ঝুঁকিতে আছেন।
নতুন উপধরনের উপসর্গ-
কয়েককটি উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের স্বরণাপন্ন হতে হবে। যেমন-জ্বর, সর্দি, নাক বন্ধ, কাশি, গলাব্যথা, শ্বাসপ্রশ্বাসে অসুবিধা, শরীরব্যথা, মাথাব্যথা, বমিভাব বা বমি, পাতলা পায়খানা, পেটব্যথা ও ঘ্রাণ বা স্বাদের অনুভূতির পরিবর্তন
প্রতিরোধে করণীয়-
এসব উপসর্গের কোনোটি দেখা দিলে অবশ্যই সচেতন হোন, যাতে আপনার কাছ থেকে অন্য কেউ সংক্রমিত হতে না পারে। যতটা সম্ভব, ঘরেই থাকুন। মানসম্মত মাস্ক পরুন, ঘরে এবং বাইরে। ব্যক্তিগত ব্যবহার্য সামগ্রী কারও সঙ্গে ভাগাভাগি করবেন না। চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করিয়ে নিন। করোনা সংক্রমণ পরীক্ষার ফলাফল ‘পজিটিভ’ না হলেই যে আপনি করোনা সংক্রমিত নন, তা কিন্তু নিশ্চিত হওয়ার সুযোগ নেই। তাই ফলাফল ‘পজিটিভ’ আসুক বা ‘নেগেটিভ’, ন্যূনতম পাঁচ দিন এসব সতর্কতামূলক ব্যবস্থা অবলম্বন করাই শ্রেয়।
করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্যও সচেতন থাকুন। ঘরের বাইরে গেলেই মাস্ক পরার অভ্যাস ফিরিয়ে আনুন। হাত জীবাণুমুক্ত রাখুন। কফ, থুতু ফেলুন নির্দিষ্ট স্থানে। হাঁচি-কাশির আদবকেতা মেনে চলুন। ব্যবহৃত টিস্যু বা রুমাল যেখানে সেখানে রাখবেন না। বাড়িতে বাতাস প্রবাহের সুযোগ বাড়িয়ে দিন। সম্ভব হলে অতিরিক্ত ভিড়ের স্থান এড়িয়ে চলুন। করোনাভাইরাসের টিকা নেওয়া না থাকলে তা নেওয়ার ব্যবস্থা করুন।
প্রসঙ্গত, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে আবারও করোনাভাইরাস সংক্রমণ বাড়ছে। ফলে বাংলাদেশসহ সেসব দেশকে নজরদারি বাড়াতে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে অনুরোধ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। গত রোববার (২৪ ডিসেম্বর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই অনুরোধ জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়, কোভিড-১৯ এবং এর নতুন উপধরণ জেএন ১ ও ইনফ্লুয়েঞ্জাসহ শ্বাসপ্রশ্বাসজনিত রোগী শনাক্তের হার বাড়ছে। ফলে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে নজরদারি বাড়াতে এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে জনগণকে অনুরোধ জানিয়েছে ডব্লিউএইচও।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক ডা. পুনম ক্ষেত্রপাল সিং বলেন, কোভিড-১৯ বিশ্বব্যাপী সব দেশে বিকশিত, পরিবর্তন ও সঞ্চালিত হচ্ছে। যদিও উদ্ভূত লক্ষণগুলো পরামর্শ দেয়, জেএন ১ অতিরিক্ত জনস্বাস্থ্য ঝুঁকি কম। আমাদের এই ভাইরাসের বিবর্তন ট্র্যাক করতে হবে।
তিনি বলেন, এজন্য দেশগুলোকে অবশ্যই নজরদারি এবং সিকোয়েন্সিং জোরদার করতে হবে। পাশাপাশি ডেটা শেয়ারিং (তথ্য সরবরাহ) নিশ্চিত করতে হবে।
বিশ্বজুড়ে জেএন ১ দ্রুত বিস্তার ঘটছে। ফলে একে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে ডব্লিউএইচও। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে, একাধিক দেশে করোনার উপধরণটির ধরা পড়েছে। বিশ্বব্যাপী এর প্রকোপ দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, এই ভ্যারিয়েন্ট অন্যান্য ভাইরাল ও ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের মধ্যে, বিশেষত শীত মৌসুমে প্রবেশকারী দেশগুলোতে কোভিড-১৯ রোগী শনাক্তের পরিমাণ বৃদ্ধির কারণ হতে পারে।
একুশে সংবাদ/চ.ট.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :