বর্তমান সময়ে ব্যাংক খাতে প্রভিশন বা নিরাপত্তা সঞ্চিতির ঘাটতি আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র অনুযায়ী, ২০২৫ সালের মার্চ শেষে এই ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৭০ হাজার ৬৫৫ কোটি টাকা। মাত্র এক বছরে এই ঘাটতি বেড়েছে প্রায় ছয় গুণ।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বিগত সময়গুলোতে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান বিশাল অংকের ঋণ নিয়েছে, যার বড় একটি অংশ এখন খেলাপি। ফলে ব্যাংকগুলোকে ঋণের বিপরীতে বেশি নিরাপত্তা সঞ্চিতি রাখতে হচ্ছে। তবে আয় কমে যাওয়ায় অনেক ব্যাংকই তা সংরক্ষণে ব্যর্থ হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী, ব্যাংকগুলোকে ঋণের মান অনুযায়ী ০.৫০ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশ পর্যন্ত সাধারণ এবং ২০ থেকে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত বিশেষ প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়। কোনো ব্যাংকের যদি এই ঘাটতি থাকে, তবে তারা লভ্যাংশ দিতে পারে না এবং মূলধন সংকটে পড়ার ঝুঁকিতে পড়ে।
তথ্য অনুযায়ী:
> ২০২৪ সালের মার্চে প্রভিশন ঘাটতি ছিল ২৬,৫৮৫ কোটি টাকা
> ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে তা বেড়ে হয় ৫৫,৩৭৮ কোটি টাকা
> ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে দাঁড়ায় ১,০৬,১৩০ কোটি টাকা
>সর্বশেষ ২০২৫ সালের মার্চে এটি দাঁড়িয়েছে ১,৭০,৬৫৫ কোটি টাকায়
মার্চ ২০২৫ পর্যন্ত দেশে বিতরণকৃত মোট ঋণের পরিমাণ ১৭ লাখ ৪১ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৪ লাখ ২০ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা বর্তমানে খেলাপি অবস্থায় রয়েছে, যা মোট ঋণের ২৪.১৩ শতাংশ। খেলাপি ঋণের চাপ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ছাড়িয়ে এখন বেসরকারি ব্যাংকগুলোতেও বড় আকারে ছড়িয়ে পড়েছে।
বিভিন্ন ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ:
- রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক: মার্চ শেষে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৬৩,৯৬৬ কোটি টাকা (ডিসেম্বরে ছিল ৫৭,৯৬৬ কোটি টাকা)
- বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক: ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১,০৭,৩৪০ কোটি টাকা (ডিসেম্বরে ছিল ৪৮,৮৮৩ কোটি টাকা)
- বিদেশি ব্যাংক: উদ্বৃত্ত ৪৩২ কোটি টাকা
- বিশেষায়িত ব্যাংক: উদ্বৃত্ত ২৪৮ কোটি টাকা
বিশেষজ্ঞদের মতে, রাজনৈতিক প্রভাবে অনিয়মিতভাবে দেওয়া ঋণগুলো খেলাপিতে পরিণত হওয়ায় ব্যাংক খাত গভীর ঝুঁকিতে পড়েছে। প্রভিশন ঘাটতি থাকায় ব্যাংকগুলোর আর্থিক ভিত্তি দুর্বল হচ্ছে, যার প্রভাব পড়ছে আমানতকারীদের আস্থায় ও সার্বিক স্থিতিশীলতায়।
একুশে সংবাদ/ঢ.প/এ.জে