সমসাময়িক ছয়টি ব্যাংক একীভূতকরণের সিদ্ধান্ত বহুল প্রতিক্ষিত এক সূচনা।
নোবেল বিজয়ী প্রধান উপদেষ্টা, বিজ্ঞ অর্থনীতিবিদ ও গ্রামীণ ব্যাংকের সার্থক প্রতিষ্ঠাতা ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সম্মানিত গভর্নর, প্রথিতযশা অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকের প্রাক্তন চেয়ারম্যান সমীপে আবেদন-
বিগত দিনের অভিজ্ঞতার আলোকে ও বাস্তবতাকে ভরসা করে একান্ত করণীয় বিষয়গুলো পর্যালোচনা প্রয়োজন বিধায় আমার ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা।
বিগত দিনে খেলাপি ঋণের বৃদ্ধি, মন্দঋণ সত্ত্বেও নতুন ঋণ প্রদানের প্ররোচনা, বিচারের অভাব ও নির্ধারিত সাজার বাস্তবায়ন ক্রমশ ব্যাংক খাতকে দুর্বল ও অসহায় করে তুলেছে। মামলা ও সাজাভোগী শুধুই ব্যাংকার ও সাজার আড়ালে থেকেছে কতিপয় দুর্নীতিগ্রস্ত পর্ষদ তথা ব্যক্তিবর্গ।
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিচার বিরূপ সমাজে অগ্রগামী ছিল খেলাপির স্বর্গ ও প্রখর প্রতাপ।
ঢাকাসহ সকল বিভাগে অর্থঋণ আদালতের অনুপস্থিতি, বিচারকের অভাব, রাজনৈতিক প্রভাব ও অধঃস্তন আদালতের দুর্নীতি ঋণ খেলাপির মদদদাতা।
বর্তমানে বাংলাদেশে অর্থঋণের বিচারাধীন মামলা শত শত। আজও কেন্দ্রীয় ব্যাংক, আইন মন্ত্রণালয় ও বিচার বিভাগের সাতথ কোনো সমীকরণ দৃষ্টিভূত নয়, যা হতাশাব্যঞ্জক ও দুর্ভাগ্যজনক।
ব্যাংক একীভূতকরণ হয়তো গ্রাহক আমানতের নিরাপত্তা দেবে। কিন্তু ঋণ প্রদান ও ঋণ আদায়ের লক্ষ্যে নির্দেশনা, খেলাপি ঋণের বিচার ও গ্রাহক আমানতের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা কে দেবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জরিপ মতে, কিছু ব্যাংকে আমানত নিরাপদ- বিষয়টি জটিল। কারণ কেন্দ্রীয় ব্যাংক সকল ব্যাংকের পিতা। সকল ব্যাংকের সমান নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্তব্য, কোনো বিশেষ ব্যাংকের নয়।
ব্যাংকিং সামগ্রিক অর্থনীতির অঙ্গ, দেশের ৬০টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান দেখভালের গুরুদায়িত্ব কেন্দ্রীয় ব্যাংকের। তাই ভবিষ্যৎ আন্তর্জাতিক উদ্যোক্তা অর্জনের পরিকল্পনা এখনিই প্রয়োজন। খেলাপি ঋণের সময়োচিত বিচার ও সাজা, দুর্নীতিমুক্ত সমাজ, সরকার ও বিচার বিভাগের আন্তরিকতা আগত উদ্যোক্তার আগমনকে স্বাগত জানাবে।
কৃষি ঋণ, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ও নারী উদ্যোক্তার জাগরণ দীর্ঘমেয়াদি সুবিধা বয়ে আনবে ও মন্দঋণের প্রসার প্রতিহত করবে।
ধারাবাহিক গতিতে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা নিয়মিত নীতি অনুসরণকরত ব্যাংকের সঠিক কার্য পরিচালনা করবে।
গ্রামীণ ব্যাংক সার্থকতার এক অনন্য উদাহরণ। দারিদ্র্য বিমোচন, নতুন উদ্যোক্তার আগমন ও ঋণ পরিষদ সাফল্য আজ এক আন্তর্জাতিক শিক্ষার বিষয়। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য শিক্ষালয়েও প্রসারিত।
বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিকট প্রত্যাশা, একীভূতকরণের পরবর্তীতে অনুরূপ কার্যাবলি নিশ্চিত করা ও কার্যবিধির যথাযথ নিরীক্ষা চলমান থাকবে বলে আশা রাখি।
খেলাপি ঋণের প্রকৃত বিচার সাধারণ গ্রাহক আশা করে। আদালত তা নিশ্চিত করবেন বলে আশা রাখি ও উন্নয়নের পথে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখবেন বলে কামনা করি।
পরিশেষে, ব্যাংকার ও গ্রাহক সঠিক নীতি অনুসরণ করবেন ও দেশের অর্থনীতিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ করবেন, সকলের মঙ্গল কামনা ও উন্নয়নের অপেক্ষায় রইলাম। সবার উপরে দেশ।
লেখক- তারিক আফজাল,ব্যাংকার ও অর্থনীতিবিদ
একুশে সংবাদ//এ.জে