ঢাক-ঢোলের বাজনা, দর্শকের করতালি, নদীর বুকে দুলতে থাকা রঙিন নৌকা— এমনই এক উৎসবমুখর আবহে বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর ) বিকেলে বরিশালের উজিরপুরে অনুষ্ঠিত হয়েছে ঐতিহ্যবাহী “উজিরপুর নৌকা বাইচ ২০২৫” প্রতিযোগিতা।
উজিরপুর উপজেলা প্রশাসন ও উন্নয়ন সংস্থা আভাসের যৌথ আয়োজনে এবং বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের সহযোগিতায় আয়োজিত এই প্রতিযোগিতাকে ঘিরে সকাল থেকেই নদীর দুই তীরে উপচে পড়ে জনস্রোত। নারীরা পরেছেন রঙিন শাড়ি, শিশুরা হাতে জাতীয় পতাকা, নদীর ধারে বসেছে মেলা— সব মিলিয়ে পুরো উজিরপুর যেন পরিণত হয়েছে এক প্রাণের উৎসবে।
প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বরিশালের জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন পুলিশ সুপার মোঃ শরিফ উদ্দীন এবং বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের জনশিক্ষা বিভাগের পরিচালক আসমা ফেরদৌসি। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন উজিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আলী সুজা।
প্রতিযোগিতা শুরু হয় শিকারপুর সরকারি শেরে বাংলা ডিগ্রি কলেজ ঘাট থেকে এবং শেষ হয় সেক্টর কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর এম.এ জলিল সেতু পর্যন্ত। ছয়টি বাচারি নৌকা অংশ নেয় এবারের প্রতিযোগিতায়, যেগুলোর নাম রাখা হয় জাতির গৌরবোজ্জ্বল ব্যক্তিত্বদের নামে— শের-ই-বাংলা এ.কে. ফজলুল হক, কবি জীবনানন্দ দাশ, সেক্টর কমান্ডার মেজর এম.এ জলিল, বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর, কবি সুফিয়া কামাল এবং জুলাই শহীদ।
গোপালগঞ্জ ও মাদারীপুর জেলার অভিজ্ঞ মাঝিরা তাদের নৌকা নিয়ে অংশ নেন প্রতিযোগিতায়। নৌকার ছন্দে ছন্দে ভেসে আসে মাঝিদের “হা-দে-রে-ও” ধ্বনি, যার প্রতিধ্বনি নদীর দুই তীরজুড়ে শোনা যায়। দর্শকদের উল্লাস, ঢাকের তালে প্রতিটি নৌকার ছুটে চলা— সব মিলিয়ে দৃশ্যটি যেন এক জীবন্ত চিত্রপট।
প্রতিযোগিতা শেষে মেজর এম.এ জলিল সেতুর ইচলাদী প্রান্তে অনুষ্ঠিত হয় পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান। বিজয়ীদের হাতে তুলে দেওয়া হয় চ্যাম্পিয়ন, রানারআপ এবং বিশেষ সম্মাননা পুরস্কার।
গ্রামীণ ঐতিহ্যের এই প্রাণবন্ত আয়োজনে উজিরপুরবাসী ফিরে পেয়েছে তাদের হারানো আনন্দ ও ঐতিহ্যের রঙ। এই নৌকা বাইচ শুধু প্রতিযোগিতা নয়— এটি মিলনমেলা, ঐক্যের প্রতীক এবং বাংলার সংস্কৃতির এক জীবন্ত নিদর্শন।
একুশে সংবাদ/এ.জে



একুশে সংবাদের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

