চাঁদপুরের মতলব উত্তর ও দক্ষিণ উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত ধনাগোদা নদী কচুরিপানার দখলে। কালীপুর থেকে কালির বাজার পর্যন্ত প্রায় ৮ থেকে ১০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে কচুরিপানার স্তর এতটাই ঘন হয়ে গেছে যে, নদীর বুকে এখন নৌকা নয়, বরং চলছে ফুটবল ও ভলিবল খেলা।
ধনাগোদা নদীর শ্রী-রায়েরচর ব্রিজের নিচে কচুরিপানায় জমাট বাঁধা স্থানে স্থানীয় যুবকরা ফুটবল খেলার দৃশ্য সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ফয়সাল হোসেন নামে এক ফেসবুক ব্যবহারকারী ভিডিওটি প্রকাশ করলে তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং নেটিজেনদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।
আমিরাবাদ লঞ্চঘাট থেকে কালিপুর পর্যন্ত প্রায় ৫৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে কচুরিপানার স্তুপ দেখা যাচ্ছে। এর মধ্যে শ্রী-রায়েরচর ব্রিজ থেকে কালির বাজার পর্যন্ত প্রায় ৩ কিলোমিটার এলাকায় কচুরিপানার ওপর দিয়ে হেঁটে চলাচল করা সম্ভব বলে স্থানীয় শিক্ষার্থী ও বাসিন্দারা জানিয়েছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, মতলব ধনাগোদার খেয়াঘাট, দুর্গাপুর, শ্রী-রায়েরচর, বাংলাবাজার, রায়েরকান্দি, কালিরবাজার, নন্দলালপুর, বাইশপুর, গাজীপুর মোড়, সাহেববাজার, লক্ষীপুর, টরকী, মাছুয়াখাল, শাহপুর, নায়েরগাঁও ও খেয়াঘাট পর্যন্ত নদীজুড়ে কচুরিপানা জমে আছে। কয়েকটি বালুবাহী বাল্কহেড গত ১০-১২ দিন ধরে কচুরিপানার মধ্যে আটকে আছে।
এক সময় ধনাগোদা নদী ছিল বৃহত্তর মতলবের নৌযান চলাচলের একমাত্র পথ। ঢাকা, নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পণ্য পরিবহনের জন্য এই নদীপথ ব্যবহার করা হতো। কিন্তু গত পাঁচ-সাত বছর ধরে নদীর নাব্যতা হ্রাস এবং অবৈধ দখলের কারণে নদী প্রায় মৃতপ্রায় হয়ে গেছে।
বাল্কহেড শ্রমিকরা অভিযোগ করেন, প্রায় এক মাস ধরে শ্রী-রায়েরচর ব্রিজ সংলগ্ন স্থানে তারা আটকে আছেন। নৌযান একেবারেই চলাচল করতে পারছে না, ফলে দিন-রাত নৌযানে থেকেই সময় কাটাতে হচ্ছে।
স্থানীয়রা দাবি করেন, ধনাগোদা নদীতে অবৈধ ঝাক (মাছ ধরার ফাঁদ) স্থাপন এবং শ্রী-রায়েরচর ব্রিজের অপরিকল্পিত নির্মাণের কারণে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ ব্যাহত হয়েছে। জোয়ার-ভাটার সময় কচুরিপানা সরতে না পেরে নদী প্রায় জলাভূমিতে পরিণত হয়েছে।
ভুক্তভোগী যাত্রীরা বলেন, “নদীর দুই পাড়ে অবৈধ ঝাক থাকায় জোয়ার-ভাটার সময় কচুরিপানা সরে যেতে পারে না। কয়েক মাস ধরে নদীজুড়ে কচুরিপানা জমাট বাঁধায় নৌযান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।”
স্থানীয়রা নদী খনন ও কচুরিপানা অপসারণের জন্য জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তারা বলেন, “নৌযান চলাচল স্বাভাবিক করতে হলে ধনাগোদা নদীর প্রবাহ ফিরিয়ে আনতে হবে।”
ধনাগোদা তালতলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ফারুকুল ইসলাম বলেন, “নদীর দুই পাড়ে অসংখ্য অবৈধ মাছ ধরার ঝাকি জাল রয়েছে। ফলে নদীতে কচুরিপানা আটকে নৌযান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। স্থানীয় জনগণ বছরের এই সময়ে মারাত্মক দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে।”
মতলব উত্তর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদা কুলসুম মনি বলেন, “বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। আমি ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসক মহোদয়ের সঙ্গে আলোচনা করেছি। স্থায়ীভাবে সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে কচুরিপানা অপসারণ এবং অবৈধ ঝাক উচ্ছেদের উদ্যোগ নেওয়া হবে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
একুশে সংবাদ/এ.জে



একুশে সংবাদের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

