কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ায় ফকির লালন শাহের স্মরণে আয়োজিত তিন দিনব্যাপী ঐতিহ্যবাহী লালন উৎসবে অংশ নিয়ে গান পরিবেশন করেছেন ঠাকুরগাঁওয়ের বাউল শিল্পী রুমা আক্তার, যিনি বাউল জগতে পরিচিত বাউল রুমা নামে। তাঁর প্রাণবন্ত কণ্ঠে পরিবেশিত লালনের ভাবগান শ্রোতা-দর্শকদের মন ছুঁয়ে যায়।
লালনের জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে প্রতিবছর কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ার লালন আখড়াবাড়ি প্রাঙ্গণে এই উৎসবের আয়োজন করা হয়। এবারের লালন উৎসব আয়োজন হয়েছে জাতীয় পর্যায়ে, যেখানে দেশজুড়ে হাজারো বাউল, ফকির, সাধক ও লালনপ্রেমী মানুষের মিলনমেলায় পরিণত হয় ছেঁউড়িয়া।
উৎসবের মঞ্চে একে একে পরিবেশিত হয় লালনের মানবতাবাদ, প্রেম ও সাম্যের বাণীবাহী গান। তিন দিনের এই উৎসবে বিভিন্ন জেলার বাউল শিল্পীরা অংশ নেন। বিশেষ আকর্ষণ ছিল ঠাকুরগাঁও থেকে আগত বাউল রুমার পরিবেশনা। তিনি লালনের জনপ্রিয় গান “গুরুগত না হইলে প্রেমের প্রেমিক, না হইলে” এবং “মানুষ ছাড়া ক্ষাপারে তুই মূল হারাবি, মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি” পরিবেশন করেন। তাঁর কণ্ঠ, সুর এবং মঞ্চস্থ উপস্থাপনা দর্শক-শ্রোতাদের মনোমুগ্ধ করে।
দর্শকদের মধ্যে অনেকে জানান, বাউল রুমার কণ্ঠে লালনের গান শুনে মনে হয়েছে যেন লালনের দর্শন নতুনভাবে জীবন্ত হয়ে উঠেছে। তাঁর পরিবেশনা কেবল সংগীত নয়, এটি ছিল এক ধরনের আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতা।
বাউল রুমা সাংবাদিকদের বলেন, “লালনের গান আমার জীবনের দিশারি। তাঁর মানবধর্মের দর্শন আমার চিন্তাকে বদলে দিয়েছে। লালনের মঞ্চে গান গাওয়া আমার জন্য পরম সৌভাগ্য।” তিনি আরও জানান, ছোটবেলা থেকেই লালনের গান ও দর্শনে অনুপ্রাণিত হয়ে সংগীতচর্চা শুরু করেছেন। ঠাকুরগাঁও জেলার বিভিন্ন স্থানে লোকসংগীত চর্চার পাশাপাশি তিনি বাউল ধারার সংগীতকে নিজের সাধনা ও সুরের মাধ্যমে ধরে রেখেছেন।
উৎসবে দেশি-বিদেশি দর্শনার্থীদের ভিড়ও ছিল চোখে পড়ার মতো। লালন আশ্রমের চারপাশে বসে বাউলদের আড্ডা, গানের আসর ও পালাগানের আয়োজন, আর কেউ গাইছেন, কেউ শুনছেন—এমন দৃশ্যে পুরো ছেঁউড়িয়া মুখরিত হয়ে ওঠে।
লালন উৎসব কেবল একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান নয়, বরং এটি মানবতা, ভালোবাসা ও সাম্যের এক মহা মিলনমেলা। বাউল রুমার সুরের ছোঁয়ায় উৎসবটি আরও প্রাণবন্ত হয়ে উঠে।
একুশে সংবাদ/এ.জে