কুমিল্লার তিতাস উপজেলার দুধঘাটা নূরে মোহাম্মদী (স.) দাখিল মাদ্রাসার সীমানাপ্রাচীর ও প্রধান গেট নির্মাণের কোনো কাজ না করেই প্রকল্পের পুরো বরাদ্দের টাকা উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের (ইইডি) মাধ্যমে মাদ্রাসাটির সীমানাপ্রাচীর ও মূল ফটক নির্মাণের জন্য ১৫ লাখ টাকার প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। কিন্তু বাস্তবে কোনো কাজ না করেই মাদ্রাসার সুপার, সহকারী প্রকৌশলী ও উপ-সহকারী প্রকৌশলী যৌথ স্বাক্ষরে বরাদ্দের শতভাগ টাকা উত্তোলন করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ ঘটনায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে মাদ্রাসার দাতা সদস্য ও পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো. সানোয়ার হোসেন সরকার শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী এস. এম. শাহীনুর ইসলামের বরাবর লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, ২০২৩ সালের ৭ ডিসেম্বর মাদ্রাসার সীমানাপ্রাচীর ও গেট নির্মাণের জন্য ১৪ লাখ ২৫ হাজার টাকার দরপত্র আহ্বান করা হয়। ২০২৪ সালের ২৯ অক্টোবর কার্যাদেশ জারি হয়, যার কাজ ১৮০ দিনের মধ্যে শেষ করার কথা ছিল। কাজটি পায় কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার মালাপাড়ার মেসার্স জাহানারা ট্রেডার্স।
প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো কোনো কাজ শুরু হয়নি; এমনকি নির্মাণসামগ্রীও আনা হয়নি। অথচ গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর মাদ্রাসার সুপার মো. ইব্রাহিম খলিল, সহকারী প্রকৌশলী মো. মাহবুবুর রহমান ও উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. বজলুর রহমান মোল্লার যৌথ স্বাক্ষরে কাজ সমাপ্তির সনদ দিয়ে বরাদ্দের পুরো টাকা উত্তোলন করা হয়েছে।
শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মাদ্রাসার পুরনো টিনের সীমানাপ্রাচীর ও আগের গেটই রয়েছে—নতুন কোনো নির্মাণকাজের চিহ্ন নেই।
মাদ্রাসার সুপার মো. ইব্রাহিম খলিল বলেন, “আমি কোনো স্বাক্ষর দিইনি। আমার স্বাক্ষর জাল করে টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। উপ-সহকারী প্রকৌশলী বজলুর রহমান নিজেই লিখিতভাবে স্বীকার করেছেন যে, তিনি ও সহকারী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান মিলে আমার স্বাক্ষর জাল করেছেন।”
মাদ্রাসার সভাপতি সানোয়ার হোসেন সরকার বলেন, “এই ঘটনায় আমি ২১ সেপ্টেম্বর শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছি। কিন্তু এখনো কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।”
বিষয়টি জানতে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী এস. এম. শাহীনুর ইসলাম-এর সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ফোন ধরেননি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স জাহানারা ট্রেডার্স-এর স্বত্বাধিকারী বিল্লাল হোসেন জানান, তিনি অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে আছেন, পরে কথা বলবেন। সহকারী প্রকৌশলী মো. মাহবুবুর রহমান ফোন ধরেননি, আর উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. বজলুর রহমান মোল্লা বলেন, “আমি এখন ব্যস্ত, পরে কথা বলব”—বলে দ্রুত ফোন কেটে দেন।
স্থানীয় চর কাঠালিয়া গ্রামের সাইদুল মেম্বার, খবির হোসেন, নন্দিচর গ্রামের ইলিয়াস সরকার, দুধঘাটা গ্রামের কামাল হোসেন ও জামান মিয়া বলেন, “মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার পর এবারই প্রথম সীমানাপ্রাচীর ও গেটের জন্য বরাদ্দ আসে। কিন্তু কাজ না করেই টাকা তুলে নেওয়া অত্যন্ত দুঃখজনক। যারা সরকারি টাকা আত্মসাৎ করেছে, তাদের কঠোর শাস্তি দাবি করছি।”
একুশে সংবাদ/এ.জে