মুকসুদপুর উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে গোপালগঞ্জের জলিরপাড়ে শুক্রবার (৩ অক্টোবর) বিকেলে নদীর বুকে প্রাণের উৎসব হয়ে উঠেছিল গ্রামীণ বাংলার ঐতিহ্যবাহী নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা।
সকাল থেকেই নদীর দুই পাড়ে জমজমাট পরিবেশ। কারও হাতে লাল-নীল পতাকা, কারও হাতে বাঁশি। শিশুদের কোলাহলে মুখর চারপাশ। দুপুর গড়াতেই ঢাক-ঢোলের তালে নদীর ঘাটে ভিড় জমতে থাকে। প্রতিযোগিতার শুরুতে মাঝিরা বৈঠা হাতে দাঁড়িয়ে যখন “হু… হু…” স্লোগান তোলে, তখন নদীর পাড়ে দাঁড়ানো হাজারো মানুষের উচ্ছ্বাসে চারদিক মুখরিত হয়ে ওঠে।
একদিকে রোদের ঝিলিক, অন্যদিকে মাঝিদের ঘামে ভেজা শরীর—সব মিলিয়ে সৃষ্টি হয় এক অন্যরকম আবহ। নৌকা যখন ঢেউ কেটে সামনে ছুটে চলছিল, তখন নদীর দুই পাড় কাঁপছিল দর্শকদের করতালিতে। প্রতিটি বৈঠার আঘাত শুধু নৌকার গতি নয়, গ্রামের মানুষের আনন্দকেও বহুগুণ বাড়িয়ে দিচ্ছিল।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ কামরুজ্জামান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মোঃ হাসানুর রহমান, মুকসুদপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ মোস্তফা কামাল ও জলিরপাড় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিভা মন্ডল। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার পলাশ কুমার দেবনাথ।
প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ীদের হাতে তুলে দেওয়া হয় পুরস্কার। তবে সবচেয়ে বড় পুরস্কার পেয়েছিল গ্রামের মানুষজন—এক টুকরো আনন্দ আর মিলনের উৎসব।
দিনশেষে নদীর পাড় থেকে ফিরছিল মানুষ। কারও হাতে শিশুর আঁকড়ে ধরা লাল পতাকা, কারও কানে বাজছিল ঢোলের শব্দ। মাঝিরা বৈঠা গুটিয়ে নৌকা বেঁধে দিচ্ছিল ঘাটে। কিন্তু নদীর জলে তখনও ভেসে ছিল সেই প্রতিযোগিতার উচ্ছ্বাস, মানুষের হাসি আর এক দিনের উৎসবের প্রাণচাঞ্চল্য।
জলিরপাড়ের নৌকাবাইচ কেবল একটি খেলা নয়—এটি গ্রামীণ ঐতিহ্যের প্রাণস্পন্দন, যা মনে করিয়ে দেয়—বাংলার আসল শক্তি একতায়, মিলনে আর উৎসবের আনন্দে।
একুশে সংবাদ/এ.জে