নওগাঁর রাণীনগরে প্রীতম ও প্রিয়সী নামের দুই অসহায় শিক্ষার্থীকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রাকিবুল হাসান। বৃহস্পতিবার সকালে নিজ কার্যালয়ে তিনি ব্যক্তিগতভাবে ওই দুই শিক্ষার্থীর হাতে ১৫ হাজার টাকার চেক তুলে দেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন দুই শিক্ষার্থীর চাচা পলাশ চন্দ্র প্রামাণিক ও উপজেলা পরিষদের সিএ আনছার আলী।
মা হারা ১১ বছরের ৭ম শ্রেণির ছাত্র প্রীতম ও ৭ বছরের ২য় শ্রেণির ছাত্রী প্রিয়সী কম বুদ্ধিসম্পন্ন ডাবলু প্রামাণিকের সন্তান এবং উপজেলার কুজাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
চেক পেয়ে খুশিতে দুই শিশুর চোখ-মুখে ফুটেছিল এক বিশাল স্বপ্ন। তারা আনন্দের সঙ্গে বললেন, “আমরা পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চাই।”
ইউএনও রাকিবুল হাসান তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, “তোমরা দুই ভাইবোন পড়াশোনা চালিয়ে যাবে। পড়াশোনা চালিয়ে যেতে যদি কোনো বিষয়ে সাহায্য প্রয়োজন হয়, আমাকে জানাবে। আমি সবসময় তোমাদের পাশে আছি। তোমাদের জন্য দোয়া রইল।”
উল্লেখ্য, ছোট্ট দুই শিক্ষার্থীর মা পূর্ণিমা চিকিৎসার অভাবে গত ১১ এপ্রিল নিজ বাড়িতে মারা গেছেন। বাবা থেকেও নেই। মাকে হারিয়ে পৃথিবীটা যেন একেবারে অন্ধকার হয়ে গেছে তাদের জন্য। মৃত্যুর একদিন আগেও প্রীতম ও প্রিয়সীর মায়ের ইচ্ছে ছিল তার দুই সন্তানকে পড়াশোনা করানো। তার স্বপ্ন যেন থমকে যেতে বসেছিল। এখনই হাত পেতে কিনতে হচ্ছে ছেলের গাইড বই। তবে মৃত ভাবির স্বপ্ন পূরণের আশায় চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে দেবর পলাশ চন্দ্র প্রামাণিক।
মাকে হারিয়েও থামেনি ছোট্ট দুই শিশুর স্বপ্ন। সকালে পুরোনো ব্যাগ কাঁধে তুলে নিয়ে তারা স্কুলে যায়। অন্যদের মতো নতুন পোশাক, দামি খাতা-কলম নেই। অনেক সময় না খেয়েই ক্লাস করতে হয়। তবুও তারা স্কুলে গিয়ে পড়তে চায়, বন্ধুদের মতো স্বপ্ন দেখতে চায়। তাদের একমাত্র ভরসা কাকা পলাশ, যিনি গ্রাজুয়েশন শেষ করেও চাকরির পিছনে না ছুটে গ্রামে গ্রামে সিঙ্গাড়া বিক্রি করে কোনোমতে সংসার চালান। ছোট্ট দুই ভাইবোনকে আগলে রেখেছেন মায়ের মতো করে। কিন্তু এই লড়াইয়ে কাকা পলাশ একা। অভাবের ঘূর্ণিপাকে হয়তো যেকোনো সময় থেমে যেতে পারে প্রীতম আর প্রিয়সীর স্কুলে যাওয়ার স্বপ্ন। সমাজের এগিয়ে আসা ছাড়া হয়তো স্বপ্নগুলো শুধুই স্বপ্নই থেকে যাবে।
একুশে সংবাদ/ন.প্র/এ.জে