রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার অন্তরমোড়–রাখালগাছি খেয়াঘাট নিয়ম বহির্ভূতভাবে অনৈতিক সুবিধার বিনিময়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইজারা প্রদান করেছেন—এমন অভিযোগ উঠেছে।
বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে গোয়ালন্দ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন পাটনি সম্প্রদায়ের শ্রী বিষ্ণু চৌধুরী। তিনি জানান, তার দাদা দারিক নাথ চৌধুরী ও বাবা ভগবান চৌধুরীসহ পূর্বপুরুষরা শত শত বছর ধরে পাটনি সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি হিসেবে এই খেয়াঘাট পরিচালনা করে আসছেন। জমিদার আমলে তেওতা জমিদারদের কাছ থেকে, পরবর্তীতে দেবগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের ইজারা নিয়ে তাদের পরিবার ঘাট পরিচালনা করেছে।
গত বছরও মাত্র ৪৫ হাজার টাকায় তিনি ঘাটের ইজারা নিয়েছিলেন। কিন্তু ২০২৫ সালে হঠাৎ করে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ইজারা কার্যক্রম উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. নাহিদুর রহমানের দপ্তরে চলে যায়।
শ্রী বিষ্ণু চৌধুরী জানান, নিয়ম অনুযায়ী পাটনি সম্প্রদায়ের কোনো প্রতিনিধি থাকলে তাকে সরকার নির্ধারিত মূল্যে ইজারা দেওয়ার বিধান আছে। সেই হিসেবে তিনি দেড় লাখ টাকার সরকারি নির্ধারিত মূল্যের পরিবর্তে ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকার দরপত্র জমা দেন।
অভিযোগ করে তিনি বলেন, ইউএনও কার্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান ইউএনও’র কথা বলে ২ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন। বাপ-দাদার পেশা ধরে রাখা ও জীবিকা বজায় রাখতে তিনি কষ্ট করে টাকা পরিশোধ করলেও ইজারা পাননি। পরে মনিরুজ্জামান টাকা ফেরত দেন। তার দাবি, পরে উপজেলা প্রশাসন অন্য একজনের কাছে ৪ লাখ টাকা ঘুষ নিয়ে ঘাটের ইজারা দেন।
তিনি আরও জানান, বর্তমানে ইজারা পাওয়া ব্যক্তি পাটনি সম্প্রদায়ের কেউ নন, অথচ তিনি জন্মগতভাবে পাটনি সম্প্রদায়ের সদস্য। এ ঘটনায় তিনি সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে ৬৩৭১/২৫ নম্বর রিট পিটিশন দায়ের করেন। রিভিউ শুনানিতে ২৯ জুলাই ২০২৫ থেকে তিন মাসের জন্য ইজারা কার্যক্রম স্থগিত করা হয়। কিন্তু আদালতের আদেশ অমান্য করে স্থানীয় মো. মিনাল শেখের নামে ইজারা দেওয়া হয়।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন দেবগ্রাম ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মো. ইসমাইল হোসেন ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল হান্নান মোল্লা। তারা অভিযোগ করে বলেন, যুগ যুগ ধরে ভগবান চৌধুরীর উত্তরসূরি হিসেবে শ্রী বিষ্ণু চৌধুরী খেয়াঘাট পরিচালনা করেছেন। অথচ এবছর উপজেলা প্রশাসন অনৈতিক সুবিধার বিনিময়ে স্থানীয় মো. মিনাল শেখকে ইজারা দিয়েছে, যা নিন্দনীয়।
এ বিষয়ে গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. নাহিদুর রহমান জানান, শ্রী বিষ্ণু চৌধুরী পাটনি সম্প্রদায়ের লোক—এ বিষয়ে কোনো প্রমাণ দিতে পারেননি। এ সংক্রান্ত কোনো সার্টিফিকেট বা দালিলিক কাগজপত্রও তিনি জমা দেননি। টাকা লেনদেনের প্রসঙ্গে ইউএনও বলেন, “আমার নামে কেউ টাকা নিয়েছে কিনা আমি জানি না। এর আগে এ ধরনের অভিযোগ পাইনি। প্রমাণ থাকলে তিনি আমার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করতে পারেন।”
একুশে সংবাদ/রা.প্র/এ.জে