AB Bank
  • ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ৭ আশ্বিন ১৪৩২

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত শ্রীপুরের রেড ক্রিসেন্ট মা ও শিশু হাসপাতাল


Ekushey Sangbad
আশরাফ হোসেন পল্টু, শ্রীপুর, মাগুরা
০৩:০১ পিএম, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত শ্রীপুরের রেড ক্রিসেন্ট মা ও শিশু হাসপাতাল

মাগুরার শ্রীপুরের একমাত্র রেড ক্রিসেন্ট মা ও শিশু হাসপাতালটি নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত। ২০২২ সালের ১৭ মার্চ তৎকালীন মাগুরা-১ আসনের সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির চেয়ারম্যান, অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল এটিএম আবদুল ওয়াহহাব, এলাকার হতদরিদ্র ও অসহায় মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়ার উদ্দেশ্যে মাগুরা জেলার শ্রীপুর উপজেলার টুপিপাড়া গ্রামে হাসপাতালের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। 

২০২৩ সালের ১৮ এপ্রিল শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী রেড ক্রিসেন্ট মা ও শিশু হাসপাতালটি অনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধনের দিন থেকেই হাসপাতালটি স্বাস্থ্যসেবার কার্যক্রম শুরু করে এবং তখন থেকেই এটি একটি পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা কেন্দ্র হিসেবে গড়ে ওঠে।

প্রাথমিকভাবে হাসপাতালটি ১০ বেডের জন্য স্থাপন করা হলেও, অদ্যবধি এটি সেই পর্যায়ে পৌঁছাতে পারেনি। তবে, প্রথম থেকেই স্বাস্থ্যসেবার মান যথেষ্ট উন্নত ছিল। এখানে ২ জন মেডিকেল অফিসার, ল্যাব টেকনিশিয়ান, নার্স, অফিস সহায়ক ও নৈশ প্রহরীসহ ১০ জন কর্মী থাকার কথা থাকলেও, প্রথম থেকেই একজন মেডিকেল অফিসার বাদে বাকি ৯ জন সার্বক্ষনিক কর্মরত ছিলেন এবং হাসপাতালটি সুনামের সঙ্গে পরিচালিত হয়ে আসছিল।

শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও মাগুরা জেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স উপজেলার সদর থেকে বেশ কয়েক কিলোমিটার দূরে অবস্থিত হওয়ায় উপজেলা সদরে স্বাস্থ্যসেবার তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই। পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুবিধাও উপজেলা সদরে নেই। একমাত্র এই রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালটিতেই কয়েক ধরণের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হতো। এজন্য স্থানীয়রা সুবিধা ভোগ করতেন। হাসপাতালটিতে একজন মেডিকেল অফিসার সার্বক্ষণিক সেবা দিয়ে থাকায় প্রতিদিন একশ থেকে দেড়শ রোগীর আগমন ঘটে। অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ও দক্ষ টেকনিশিয়ান দ্বারা পরিচালিত হাসপাতালে মা ও শিশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা, রক্ত পরীক্ষা, করোনা টেস্ট, ব্লাড গ্রুপ, মল-মূত্র পরীক্ষা, ইসিজি, আল্ট্রাসনোগ্রাফি ও অন্যান্য ডায়াগনস্টিক পরীক্ষা ৫০% ছাড়ে করা হতো।

কিন্তু, দীর্ঘদিন ধরে ল্যাব টেকনিশিয়ানের অভাবে এসব পরীক্ষা-নিরীক্ষা বন্ধ হয়ে গেছে। জনবল সংকট ও ল্যাব টেকনিশিয়ানের অভাবে হাসপাতালটি এখন নিজেই সমস্যায় পড়েছে। দায়িত্বরত মেডিকেল অফিসার প্রায় ৫ মাস ধরে বেতন পাননি। খরচের বিল ও ভাউচারের বরাদ্ধও বন্ধ হয়ে গেছে। ৯ জন স্টাফের মধ্যে একজন নিরাপত্তা প্রহরী ও একজন ল্যাব টেকনিশিয়ানকে প্রত্যাহার করে অন্যত্র বদলী করা হয়েছে এবং বাকিরাও বদলীর প্রক্রিয়াধীন। ল্যাব টেকনিশিয়ানের অভাবে হাসপাতালের যন্ত্রপাতি, এসি ও মূল্যবান ঔষধ নষ্ট হতে চলেছে। পরীক্ষাগার না থাকায় রোগীর উপস্থিতিও দিন দিন কমছে এবং হাসপাতাল আঙ্গিনা বন-বাদারে পরিণত হতে চলছে।

উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ হাসপাতালটি শ্রীপুরে বন্ধ রেখে অন্যত্র স্থানান্তরের চিন্তাভাবনা করছেন বলে স্থানীয় জনশ্রুতি রয়েছে। বিষয়টি জেনে স্থানীয়রা হাসপাতালটি স্ব-অবস্থায় বহাল রেখে কার্যক্রম পূর্ণাঙ্গভাবে পরিচালনার জন্য প্রধান উপদেষ্টা মহোদয়ের প্রেস সচিব, মাগুরা জেলা প্রশাসক এবং বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির চেয়ারম্যানসহ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট লিখিত আবেদন করেছেন।

এলাকার স্বার্থে, স্থানীয়রা দাবি করেছেন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য একটি সুষ্ঠু পরিবেশ ও স্থায়ী সমাধান প্রয়োজন। দীর্ঘদিন ধরে এই হাসপাতালের কোনো পরিচালনা পর্ষদ নেই। দ্রুত নতুন পরিচালনা পর্ষদ গঠন করে স্বাস্থ্যসেবার উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করার দাবি জানিয়েছেন তারা।

এ বিষয়ে স্থানীয় বিশিষ্ট সমাজসেবক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব চৌধুরী রেজাউল হক মিন্টু বলেন, “হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রত্যন্ত এলাকার গরীব, অসহায় মানুষরা স্বল্পমূল্যে সার্বক্ষণিক মেডিকেল অফিসারের সেবা পাচ্ছেন। কোনরকম হয়রানি ছাড়াই তারা গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে পারছেন। তাই এলাকার মানুষের কল্যাণার্থে হাসপাতালটি অপরিহার্য। সকল ষড়যন্ত্র প্রতিহত করে হাসপাতালটি রক্ষা করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।”

হাসপাতালের দায়িত্বরত মেডিকেল অফিসার ডাঃ লিংকু কুমার বিশ্বাস বলেন, “প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই হাসপাতালটি সুনামের সঙ্গে পরিচালিত হয়ে আসছিল। হঠাৎ করে কয়েকজন স্টাফকে অন্যত্র বদলী করা ও বিভিন্ন সুবিধা থেকে বঞ্চিত হওয়ার ফলে হাসপাতাল চরম সংকটে পড়েছে। ল্যাব টেকনিশিয়ানের অভাবে বর্তমানে কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা হচ্ছে না। যন্ত্রপাতি, কেমিক্যাল ও ঔষধপত্র নষ্ট হতে চলেছে। রোগীর উপস্থিতিও কমছে। স্টাফরাও চরম উদ্বিগ্ন, কখনও বদলির অর্ডার আসবে এমন আশঙ্কায়। একটি সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরে না আসা পর্যন্ত স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তবে, উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিষয়গুলো নিয়ে বারবার আলোচনা করা হয়েছে এবং তারা জানিয়েছেন, অতি দ্রুত সুষ্ঠু সমাধান হবে।”

 

একুশে সংবাদ/মা.প্র/এ.জে

Link copied!