AB Bank
  • ঢাকা
  • সোমবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ৩১ ভাদ্র ১৪৩২

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

হাঁস-মুরগির বাচ্চা ফুটিয়ে ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়েছেন সফল উদ্যোক্তা রাশেদুল ইসলাম


Ekushey Sangbad
রাইসুল ইসলাম খোকন, সরিষাবাড়ী, জামালপুর
০১:৪৮ পিএম, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

হাঁস-মুরগির বাচ্চা ফুটিয়ে ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়েছেন সফল উদ্যোক্তা রাশেদুল ইসলাম

প্রাকৃতিক উপায়ে হাঁস, দেশি মুরগি, রাঁজহাঁস, টাইগার মুরগি, তিতির, কোয়েল পাখি, টার্কি, মিশরী ফাউমি, সোনালী মুরগীর ডিম ফুটিয়ে বাচ্চা বিক্রি করে ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে স্বাবলম্বী হয়েছেন জামালপুরের সরিষাবাড়ীর রাশেদুল ইসলাম রঞ্জু। তাঁর হাত ধরে বহু বেকার নারী-পুরুষ এখন হাঁস-মুরগির খামার গড়ে তুলেছেন। রাশেদুল ইসলাম রঞ্জু উপজেলার পোগলদিঘা ইউনিয়নের বয়ড়া বাজারের মৃত গিয়াস উদ্দিন মন্ডলের ছেলে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, তিনি নিজ বাড়ীতে টিনের ঘরেই বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ডিম ফোটানোর যন্ত্র—ইনকিউবেটর—স্থাপন করেছেন। প্রতিদিনই উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে নারী-পুরুষেরা ডিম নিয়ে আসে হ্যাচারিতে বাচ্চা ফুটানোর জন্য। প্রতি সপ্তাহের সোমবার ও শুক্রবার ক্রেতারা ভিড় জমান হ্যাচারি পল্লিতে বাচ্চা সংগ্রহের জন্য। প্রতিটি ডিম থেকে বাচ্চা ফুটাতে নেওয়া হয় মাত্র ৫ টাকা। আবার ফোনের মাধ্যমে অর্ডার করলেই নির্ধারিত ঠিকানায় পৌঁছে যায় হাঁস বা মুরগির বাচ্চা। প্রাকৃতিক উপায়ে ডিমে তাপ দিয়ে বাচ্চা ফোটানো হয়।

ব্যবসার জন্য একসঙ্গে অধিক পরিমাণে ডিম ফোটানোর ক্ষেত্রে ইনকিউবেটরের বিকল্প নেই। যদি কেউ ডিম না দিয়ে বাচ্চা কিনতে চায়, সেটারও ব্যবস্থা আছে এই হ্যাচারিতে। প্রকারভেদ অনুযায়ী স্বল্পমূল্যে এক দিন বয়সের প্রতিটি হাঁস-মুরগির বাচ্চা ২০ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি হয়। এছাড়া বিক্রি করা হয় হাঁস, দেশি মুরগি, রাঁজহাঁস, টাইগার মুরগি, তিতির মুরগি, কোয়েল পাখি, টার্কি, মিশরী ফাউমি, সোনালী মুরগীর বাচ্চা।

ভালো জাতের হাঁস, মুরগি, রাঁজহাঁস, কোয়েল পাখি, টার্কি, মিশরী ফাউমি, সোনালী মুরগীর ডিম সংগ্রহ করেন হ্যাচারি মালিক ও কর্মচারীরা। সেগুলোকে পানিতে পরিষ্কার করে বাছাই করে কাঠ দিয়ে বিশেষভাবে বানানো ডিম রাখার পাত্রে সারিবদ্ধভাবে রেখে ফ্যানের বাতাসে রাখা হয়। ২৮ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে ডিম থেকে বাচ্চা বের হয়।

হ্যাচারি থেকে বাচ্চা নিয়ে খামার করা রনি আহমেদ বলেন, “আমি রাশেদুল ইসলাম রঞ্জুর হ্যাচারির কথা জানতে পারি। সেখানে গিয়ে বিভিন্ন জাতের হাঁস-মুরগির বাচ্চা দেখি। সেখান থেকে প্রথমে ২০টি মিশরী ফাউমি মুরগির বাচ্চা কিনে বাড়ীতে পালন শুরু করি। কিছুদিন পর মুরগিগুলো ডিম দেওয়া শুরু করে। সেই ডিমগুলো জমিয়ে হ্যাচারিতে গিয়ে আবার বাচ্চা ফুটিয়ে আনি। বর্তমানে আমি বাণিজ্যিকভাবে মিশরী ফাউমি জাতের মুরগি পালন করছি। প্রতিদিন ডিম বিক্রি করে আমার বাড়তি আয় হচ্ছে।”

বয়ড়া কুলঘাট এলাকার খামার মালিক কবির মাহমুদ বলেন, “আমি আগে টিনের দোকান করতাম। এই হ্যাচারি হওয়ায় সাত মাস আগে প্রথমে আমার স্ত্রীকে ২০০ হাঁস-মুরগির বাচ্চা কিনে দেই। সেগুলো বাড়ীতে পালন করি। বড় হলে বাজারে বিক্রি করে ভালো টাকা লাভ হয়। এখান থেকেই আমার হাঁস-মুরগি পালন শুরু। এখন আমি প্রতিমাসে হাঁস-মুরগি পালন করে বাড়তি আয় করতে পারি। আমার ইচ্ছে আছে বড় পরিসরে খামার করবো।”

ডিম নিয়ে বাচ্চা ফুটাতে আসা আব্দুল মান্নান, রহিমা বেগম, মারিয়া আক্তার বলেন, “আমরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে হাঁস-মুরগির ডিম সংগ্রহ করে মন্ডল হ্যাচারিতে নিয়ে আসছি ফুটানোর জন্য। আমাদের বাড়ীতে ডিম ফুটানোর জন্য কোনো মুরগি নেই। তাছাড়া হাঁস কখনো বাচ্চা ফুটায় না। আগে মুরগি দিয়ে হাঁসের বাচ্চা ফুটানো হতো। এখন আর সেই ঝামেলা নেই। বাড়ীর কাছে হ্যাচারি থাকায় কম খরচে ঝামেলা বিহীনভাবে ডিম ফুটানো যায়। আগে মুরগি দিয়ে বসিয়ে দিলে অনেক ডিম নষ্ট হতো, এখন আর ডিম নষ্ট হয় না। এখান থেকে বাচ্চা ফুটিয়ে বাড়ীতে নিয়ে লালন-পালন করে নিজেরাও খাই এবং বাজারে বিক্রি করে বাড়তি আয় করি।”

মন্ডল হ্যাচারির মালিক রাশেদুল ইসলাম রঞ্জু বলেন, “আমি এলাকার বেকার নারী ও পুরুষকে স্বাবলম্বী করার জন্য ব্যতিক্রমধর্মী একটি হ্যাচারি তৈরি করেছি। কোনো প্রকার ঝামেলা ছাড়া স্বল্প খরচে ডিম থেকে বাচ্চা ফুটিয়ে লালন-পালন করে ভালো লাভবান হওয়া সম্ভব। এতে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। এছাড়াও বাচ্চা ফুটিয়ে স্থানীয়ভাবে তা বিক্রি করি। লাভজনক হওয়ায় উৎপাদন দিন দিন বাড়ছে। পরে পাইকারি ও খুচরা ক্রেতারা এসে আমার কাছ থেকে এক দিন বয়সের হাঁসের বাচ্চা কিনে তা দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করেন। মোবাইলের মাধ্যমে অর্ডার করলেই দেশের বিভিন্ন স্থানে কুরিয়ারের মাধ্যমে যত্নসহকারে বাচ্চা পাঠানো হয়। আমার সাথে যোগাযোগের নাম্বার ০১৭১৩৫৬১২১০।”

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মাহবুবুর রহমান জানান, “বয়ড়া বাজারের রঞ্জু মিয়া একটি ভালো উদ্যোগ নিয়েছেন। তার এমন উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। তার এই উদ্যোগের কারণে সরিষাবাড়ীর খামারিরা উপকৃত হবে এবং এলাকার বেকার যুবক ও নারীরা স্বাবলম্বী হবে। বাচ্চা ফুটানো, মুরগি লালন-পালনের ক্ষেত্রে ভ্যাকসিন, চিকিৎসাসহ সরকারের সব সুযোগ-সুবিধা উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস থেকে প্রদান করা হচ্ছে।”

 

একুশে সংবাদ/জা.প্র/এ.জে

সর্বোচ্চ পঠিত - সারাবাংলা

Link copied!