তীব্র গরমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে লোডশেডিং। এতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার জনজীবন। বাণিজ্যিক উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি গরমে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন সাধারণ গ্রাহকরা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও চলছে ক্ষোভের ঝড়। তবে বিদ্যুৎ বিভাগ জানিয়েছে—চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় তারা লোডশেডিং দিতে বাধ্য হচ্ছেন।
অতিরিক্ত লোডশেডিংয়ের কারণে আবাসিক এলাকার বাসিন্দা, ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ী এবং বিদ্যুতের ওপর নির্ভরশীল গৃহস্থালি কাজে চরম ভোগান্তি দেখা দিয়েছে। অধিকাংশ এলাকায় রাতে মাত্র কয়েক ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে। এর সঙ্গে প্রতি মাসে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিল গ্রাহকদের ক্ষোভ আরও বাড়িয়ে তুলছে। শহরের পাশাপাশি গ্রামাঞ্চলেও একই পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
গ্রাহকরা বলছেন, বিদ্যুতের ‘ভেলকিবাজি’তে তারা অতিষ্ঠ। সামর্থ্যবানরা কেউ কেউ আইপিএস কিনছেন, কিন্তু ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে ব্যাটারি চার্জ করাও সম্ভব হচ্ছে না। গ্রামের সাধারণ মানুষ আবারও হাতপাখায় ফিরতে বাধ্য হচ্ছেন।
একজন ভুক্তভোগী গ্রাহক বলেন, “আমার একটি গরুর ফার্ম আছে। বিদেশি জাতের গরু পালনের জন্য সবসময় ফ্যান চালাতে হয়। কিন্তু প্রতিদিন ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ দেড় ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে। এতে গরুগুলো অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে। তার উপর দ্বিগুণ বিল আসছে। অফিসে গেলে বলে ‘সংশোধন করে দেব’। কিন্তু আমরা তো প্রতিদিন অফিসে যেতে পারি না।”
ব্যবসায়ীরাও বলছেন, দিনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না। কখনও টানা ৬ ঘণ্টা বিদ্যুৎ না থাকায় দোকানে বসে কাজ করা যাচ্ছে না। এতে ব্যবসায় ক্ষতির মুখে পড়ছেন তারা।
এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা ট্রলও চলছে। কেউ লিখছেন—“বিদ্যুৎ আসা-যাওয়ার খেলা চলছে”, আবার কেউ মশকরা করছেন অতিরিক্ত ‘ভুতুরে’ বিল নিয়ে।
কেন্দুয়া উপজেলার কৃষকরাও ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, সারাদিন মাঠে কাজ করে এসে শান্তিতে খাওয়াদাওয়া করাও কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। আইপিএস বা জেনারেটর কেনার সামর্থ্য নেই তাদের।
এ বিষয়ে নেত্রকোনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কেন্দুয়া জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) প্রকৌশলী মো. ওমর ফারুক বলেন, “কেন্দুয়া উপজেলায় বিদ্যুতের চাহিদা ২১ মেগাওয়াট, গ্রাহক প্রায় ৯১ হাজার। কিন্তু সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে সর্বোচ্চ ১০ থেকে ১১ মেগাওয়াট। ফলে লোডশেডিং দেওয়া ছাড়া উপায় নেই। কিছু পাওয়ার জেনারেশন বন্ধ থাকায় সংকট আরও বেড়েছে। উৎপাদন স্বাভাবিক হলে পরিস্থিতি উন্নত হবে।”
তিনি আরও জানান, প্রায় ৮ হাজার মিটার নষ্ট থাকায় গ্রাহকদের গড় বিল করতে হচ্ছে।
একুশে সংবাদ/নে.প্র/এ.জে