গাভী বিক্রি করে কিস্তিতে ব্যাটারিচালিত ভ্যান কিনেছেন শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার সিংগবরুণা গ্রামের হতদরিদ্র জাকির হোসেন। আয়ের অন্য কোনো উৎস না থাকায় ভ্যান চালিয়ে তিনি জীবিকা নির্বাহ করতেন। প্রতিদিনের মতো গতকাল বুধবার ভ্যান নিয়ে বাড়ি থেকে বের হন। সন্ধ্যায় মাগরিবের নামাজের আযান হলে কর্ণঝোড়া বাজারের জামে মসজিদে নামাজ আদায় করতে যান। নামাজ শেষে ফিরে এসে দেখেন তাঁর ব্যাটারিচালিত ভ্যানটি চুরি হয়ে গেছে। এ সময় তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। এ ঘটনায় একদিন পেরিয়েও তাঁর কান্না থামছে না।
জাকির হোসেন সিংগবরুণা ইউনিয়নের সিংগবরুণা গ্রামের মৃত চান মিয়ার ছেলে। এ ঘটনার পর বুধবার রাতেই জাকির হোসেন ও তাঁর ব্যবহৃত ভ্যানটির ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
কর্ণঝোড়া জামে মসজিদ কমিটির সদস্য জিয়া বলেন, "মাগরিবের নামাজ পড়ার পর এসে দেখি জাকির হোসেন কান্না করছেন। পরে জানতে পারলাম তাঁর ভ্যানটি চুরি হয়েছে। ভ্যানের পিছনে একটি মোবাইল নাম্বার লেখা ছিল। চক্রের লোকজন সেই নাম্বারে ফোন দিয়ে ২০ হাজার টাকা চেয়েছিল। কিন্তু পরে আর কোন যোগাযোগ করেনি।"
বৃহস্পতিবার সকালে জাকির হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, "পরিবারের পাঁচ সদস্য নিয়ে চরম অভাব-অনটনে দিন কাটছিল। আয়-উপার্জনের অন্য কোন মাধ্যম না থাকায় গাভী বিক্রির ৪০ হাজার টাকা নগদ পরিশোধ করে কিস্তিতে গড়খোলা বাজার থেকে ৯৬ হাজার টাকা দিয়ে ব্যাটারিচালিত ভ্যানটি কিনেছিলাম। এটার আয় দিয়েই কিস্তি পরিশোধের পাশাপাশি আমার সংসার চলছিল। কিন্তু ভ্যানটি চুরি হওয়ায় আমার আয়-উপার্জন বন্ধ হয়ে গেছে। এখনো কিস্তির প্রায় ১০ হাজার টাকা বাকি রয়েছে। সংসার চালাবো কিভাবে বুঝতে পারছি না।"
তিনি আরও বলেন, "বুধবার বিকালে সিংগবরুণা মোড় থেকে দুইজন যাত্রী নিয়ে কর্ণঝোড়া বাজারে যাই। বাজারে পৌঁছার আগেই মাগরিবের নামাজের আযান হয়। তাই জামাতের সাথে নামাজ আদায় করতে যাত্রী নামিয়ে তাড়াহুড়ো করে মসজিদে যাই। নামাজ শেষে এসে দেখি ভ্যান নেই। অনেক খুঁজেও আর পাওয়া যায়নি।"
শ্রীবরদী থানা অফিসার ইনচার্জ মো. আনোয়ার জাহিদ বলেন, "বিষয়টি জেনেছি। রাতেই পুলিশ পাঠিয়েছিলাম। তদন্ত চলছে।"
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ জাবের আহমেদের সাথে কথা হলে তিনি ব্যাটারিচালিত ভ্যানের মালিক জাকির হোসেনকে সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।
একুশে সংবাদ/শে.প্র/এ.জে