চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির ভূজপুরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভয়াবহভাবে অবনতির দিকে ধাবিত হলেও স্থানীয়দের অভিযোগ, থানা পুলিশ কার্যত নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় বেড়ে ওঠা কিশোর নেতাদের উচ্ছৃঙ্খলতা, মাটি-বালু ও পরিবহন খাত থেকে চাঁদাবাজি, মাদক ও অবৈধ অস্ত্র ব্যবসা দীর্ঘদিন ধরেই প্রকাশ্যে চললেও তা দমনে কার্যকর উদ্যোগ নেই।
গত এক সপ্তাহে ভূজপুরে দুটি অপহরণের ঘটনা জনমনে চরম আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। প্রথম ঘটনায় ভূজপুর থানা মামলা নং-০৭, তারিখ ৮ আগস্ট ২০২৫, দণ্ডবিধি ৩৬৪/৩২৩/৩৮৫/৩৮৬/৫০৬(২) ধারায় অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়ের অভিযোগে মামলা হয়। অভিযোগে বলা হয়, ৫ আগস্ট বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ভূজপুর জেনারেল হাসপাতালের পাশের এক ভাড়া বাসা থেকে মোহাম্মদ জসীম উদ্দীন (৩৮)কে অপহরণ করে সাইফুল ইসলাম (২২), মো. পারভেজ (২৮), মো. রেজাউল করিম (৩৮) ও অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজন। অপহরণকারীরা ভুক্তভোগীকে মোহাম্মদনগর চা বাগানে নিয়ে হাত-পা ও চোখ বেঁধে মারধর করে প্রথমে ১ কোটি টাকা এবং পরে ৭ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। টাকা দেওয়ার পর পরদিন সকালে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
দ্বিতীয় ঘটনায় ৯ আগস্ট গভীর রাতে রাঙ্গাপানি চা বাগান সংলগ্ন নলুয়াপাড়া থেকে পুলিশ পরিচয়ে অপহৃত হয় কিশোর সাজু ত্রিপুরা (১৭)। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পোশাক পরা একজনসহ ৮-৯ জনের একটি দল সাদা মাইক্রোবাসে করে এসে তাকে দোকান থেকে বাইরে ডেকে নিয়ে যায়। পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে ১১ আগস্ট ফটিকছড়ি বাসস্ট্যান্ড থেকে সাজুকে উদ্ধার করে পুলিশ। তবে অপহরণের সঙ্গে কারা জড়িত, তা নিয়ে এখনো ধোঁয়াশা রয়েছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, ভূজপুরের আলোচিত অপরাধী মো. পারভেজের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য ব্যবসা ও অবৈধ অস্ত্র রাখার অভিযোগ বহুদিনের। কথিত আছে, সে পলাতক সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও শীর্ষ সন্ত্রাসী আবু তৈয়ব গ্রুপের অস্ত্রধারী ক্যাডারদের অন্যতম। বিগত সরকারের সময় ভূজপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের পলাতক সেক্রেটারি ও কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী তাপন চন্দ বাবুর সহযোগিতায় উত্তর ফটিকছড়ি জুড়ে মাদক ও অবৈধ অস্ত্র সাপ্লাই নিয়ন্ত্রণ করত সে। সেই সময়ে অবৈধ আয়ের জোরে ও অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে কাজিরহাট বাজারের উত্তর পাশে হরিণা পুল সংলগ্ন জায়গা জবরদখল করে বিশালাকারের বিল্ডিং ও কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ করে, যা এখনো মাদক ব্যবসার নিরাপদ ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
স্থানীয়রা আরও জানিয়েছেন, ভূজপুরে মাদক, অবৈধ অস্ত্র, অপহরণ ও চাঁদাবাজির মতো অপরাধ দীর্ঘদিন ধরে চললেও পুলিশ কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না। বরং প্রভাবশালী অপরাধীরা রাজনৈতিক আশ্রয়ে নিরাপদে তাদের অপরাধ সাম্রাজ্য বিস্তার করে চলেছে, যা পুরো এলাকার আইনশৃঙ্খলার জন্য ভয়াবহ হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এ বিষয়ে ভূজপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহবুবুল হক জানান, জসিম উদ্দীন অপহরণ ঘটনায় এজাহারভুক্ত আসামি রেজাউল করিমকে ইতোমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে, সে জবানবন্দি দিয়েছে এবং অন্যান্য আসামিদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। অপর ঘটনার ব্যাপারেও বিশেষ টিম কাজ করছে এবং শিগগিরই ফলাফল পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
একুশে সংবাদ/চ.প্র/এ.জে