নওগাঁ পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা আব্দুল বাশির এক বছর আগেও তার বাড়ির জন্য ৯০০ টাকা হোল্ডিং ট্যাক্স দিতেন। এখন তা বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে ৯ হাজার টাকা। বাসায় পানি তোলার জন্য সাবমারসিবল পাম্প স্থাপন করায়, অতিরিক্তভাবে ১,৫০০ টাকা কর ধার্য করা হয়েছে। অথচ বাড়েনি কোনো নাগরিক সুবিধা, হয়নি রাস্তা-ঘাটের উন্নয়ন। এ বিষয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
একইভাবে, পৌরসভার আরেক বাসিন্দা আকতারুন আগে কর দিতেন মাত্র ৩৬০ টাকা। হঠাৎ করে পৌরসভা থেকে পাঠানো নোটিশে দেখা যায়, তার নতুন হোল্ডিং ট্যাক্স নির্ধারণ করা হয়েছে ৪২ হাজার ১ টাকা। তিনি বলেন, “মাথার উপর যেন আসমান ভেঙে পড়েছে!”
তাদের মতো আরও অনেক বাসিন্দা, যেমন—৩ নম্বর ওয়ার্ডের রাশেদুজ্জামান ও জলিলুর রহমান, একযোগে এই অন্যায় কর বৃদ্ধির প্রতিবাদে রাস্তায় দাঁড়ান।
নওগাঁ পৌরসভাকে প্রথম শ্রেণির পৌরসভা হিসেবে উন্নীত করা হলেও নাগরিক সেবার মানোন্নয়ন না করে বরং অযৌক্তিক কর বৃদ্ধির প্রতিবাদে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রোববার (৩ আগস্ট) বেলা সাড়ে ১১টায় শহরের মুক্তির মোড়স্থ পৌর ভবনের সামনে ‘নাগরিক অধিকার আন্দোলন’ ব্যানারে ঘণ্টাব্যাপী এই কর্মসূচি পালিত হয়।
মানববন্ধনে উপস্থিত বক্তারা বলেন, “পূর্বের নির্ধারিত কর আমরা নিয়মিত পরিশোধ করতাম। এখন হঠাৎ অযৌক্তিক হারে কর বাড়িয়ে তা পরিশোধের নোটিশ পাঠানো হয়েছে। দিনমজুর শ্রেণির মানুষদের পক্ষে এই কর দেওয়া অসম্ভব।” তারা বৈষম্যহীন বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়নে এই ধরনের বৈষম্যমূলক সিদ্ধান্তের নিন্দা জানান এবং অবিলম্বে কর পুনঃনির্ধারণের দাবি জানান।
মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন নাগরিক অধিকার আন্দোলনের আহ্বায়ক এস.এম. আজাদ হোসেন মুরাদ। বক্তব্য রাখেন শিক্ষক জাহিদ রব্বানি, বাসদের জেলা সমন্বয়ক জয়নাল আবেদিন মুকুলসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
বক্তারা বলেন, ১৯৬৩ সালে প্রতিষ্ঠিত নওগাঁ পৌরসভা ১৯৮০ সালে দ্বিতীয় ও ১৯৮৯ সালে প্রথম শ্রেণির পৌরসভায় উন্নীত হলেও নাগরিক সেবার মান এখনো মফস্বলের নিচে। পৌরসভার ৩০০ কিলোমিটার রাস্তায় অধিকাংশই চলাচলের অযোগ্য। ৭০ শতাংশ রাস্তা খানাখন্দে ভরা, ড্রেনেজ ব্যবস্থার বেহাল দশা, সামান্য বৃষ্টিতে শহরের বিভিন্ন স্থানে হাঁটু পানি জমে যায়, যা নামতে সময় লাগে ৫-৭ দিন।
তারা অভিযোগ করেন, নাগরিক সেবার উন্নয়ন না করে উল্টো অতিরিক্ত করের বোঝা চাপানো হয়েছে। তাই বর্ধিত কর প্রত্যাহারের দাবি জানান বক্তারা। অন্যথায় আগামী ৭ দিনের মধ্যে ব্যবস্থা না নেওয়া হলে কঠোর আন্দোলনের ঘোষণা দেন তারা।
পৌরসভার প্রশাসক টি.এম.এ. মমিন মুঠোফোনে জানান, “অযৌক্তিক কর নির্ধারণ বলা ঠিক হবে না, এটা অতিরিক্ত হতে পারে। তবে সিদ্ধান্তটি আমার একার নয়, সরকারের। পৌরসভায় কর মূল্যায়ন কমিটি রয়েছে, সেখানে আবেদন করলে তারা পুনর্বিবেচনা করতে পারে।”
তিনি আরও বলেন, “খুব শিগগির ৩০টি রাস্তার কাজ শুরু হবে। আমি আশা করি আগামী তিন বছরের মধ্যে কোনো রাস্তা খারাপ থাকবে না। পৌর এলাকা নিয়মিত পরিষ্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নাগরিকদের সহযোগিতা পেলে সমস্যাগুলোর সমাধানে আমরা আন্তরিকভাবে কাজ করবো।”
উল্লেখ্য, নওগাঁ পৌরসভা ২০২৫ সালের ১ জুলাই থেকে হোল্ডিং ট্যাক্স ও পানির বিল বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা ইতোমধ্যেই ব্যাপক জনসন্তোষহীনতার সৃষ্টি করেছে।
একুশে সংবাদ/ন.প্র/এ.জে