ময়মনসিংহের ভালুকায় যানজট কমানো এবং পথচারীদের নির্বিঘ্ন চলাচল নিশ্চিত করতে মহাসড়কের পাশে গড়ে ওঠা অবৈধ চা দোকান উচ্ছেদ করে ক্ষতিগ্রস্ত দোকানিদের পুনর্বাসনে ২৬টি নান্দনিক টি-স্টল বিতরণ করেছে উপজেলা প্রশাসন ও ভালুকা পৌরসভা।
মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) সকালে উপজেলা পরিষদ চত্বরে এক সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পৌর এলাকার ২৬ জন চা দোকানির হাতে এসব টি-স্টল হস্তান্তর করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হাসান আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ।
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে গড়ে ওঠা বহু অস্থায়ী চায়ের দোকান দীর্ঘদিন ধরে যানজট ও জনদুর্ভোগের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। জনস্বার্থে দোকানগুলো উচ্ছেদ করলেও, প্রশাসন দায়িত্বশীল মানবিকতার পরিচয় দিয়ে দ্রুত পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নেয়।
ইউএনও হাসান আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বলেন, “উচ্ছেদের পর দোকানিরা বেকার হয়ে পড়েন। মানবিক দিক বিবেচনায় তাঁদের পুনর্বাসনের জন্য বিনা মূল্যে দোকানগুলো দেওয়া হয়েছে। তাঁরা যেন এসব দোকান পরিচ্ছন্ন রাখেন, সাজিয়ে-গুছিয়ে পরিচালনা করেন, সে বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।”
কিছু দিন আগে তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক ঘোষণায় জানান, “দোকানগুলো বিনা মূল্যে দেওয়া হচ্ছে না। দোকানদারকে দুটি ফুলের টব কিনতে হবে, একটি ডাস্টবিন কিনতে হবে এবং চারপাশ পরিষ্কার রাখার চুক্তি করতে হবে, তবেই দোকানি একটি দোকান পাবেন।”
নতুন স্টলগুলোর ডিজাইনের পাশাপাশি নামকরণেও রয়েছে ভিন্নতা ও কাব্যিকতা। চোখে পড়ে নীলাম্বরী, সুহাসিনী, মেঘমালা, বনলতা, নীহারিকা, তিথিডোর, চারুদ্বীপ, গুঞ্জরণ, উড়োচিঠি, অনামিকা, ক্যামেলিয়া, প্রীতিলতা, ছায়াবীথি, নিকেতন সহ মনকাড়া সব নাম।
এগুলো আর শুধু দোকান নয়—এ যেন পরিচ্ছন্নতা, শৃঙ্খলা ও সংস্কৃতির এক অপূর্ব সম্মিলন।
হস্তান্তরের আগে উপজেলা পরিষদ চত্বরে সারিবদ্ধভাবে দোকানগুলো সাজিয়ে প্রদর্শন করা হয়। নতুন টি-স্টল হাতে পাওয়া অনেক দোকানির চোখে ছিল কৃতজ্ঞতা আর নতুন স্বপ্নের ঝিলিক।
নতুন স্টল পাওয়া দোকানি কায়েস মুন্সি বলেন,“নিজের দোকানটি ভাঙায় বিপাকে পড়েছিলাম। দোকানের ডাস্টবিন, ফুলের টব ও পরিষ্কার রাখার কথা দিয়ে আজ নতুন একটি দোকান পেয়েছি। দোকানটা পেয়ে ভালো লাগছে।”
স্টল হস্তান্তর অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইকবাল হোসাইন, উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা জায়েদা ফেরদৌসী, উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা সাইদুর রহমান প্রমুখ।
উচ্ছেদ মানেই শেষ নয়—উন্নয়ন আর মানবিকতার যুগলবন্দী আজ ভালুকার চেহারা বদলে দিয়েছে। টি-স্টল বিতরণের এই উদ্যোগ একদিকে যেমন সড়কে ফিরিয়েছে শৃঙ্খলা ও সৌন্দর্য, অন্যদিকে আশার আলো দেখিয়েছে কর্মহীন হয়ে পড়া ক্ষতিগ্রস্ত দোকানিদের। প্রশাসনের এই দায়িত্বশীল পদক্ষেপ প্রমাণ করে—যেখানে সদিচ্ছা ও সহমর্মিতা থাকে, সেখানে পরিবর্তন শুধু সম্ভবই নয়, অনিবার্য। ভালুকা আজ হয়ে উঠেছে নান্দনিক উন্নয়নের এক অনন্য উদাহরণ।
একুশে সংবাদ/ম.প্র/এ.জে