খনি শ্রমিকদের সাথে চলমান অস্থিরতা ও বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিতে দেশের একমাত্র উৎপাদনশীল পার্বতীপুরের মধ্যপাড়া পাথর খনির সকল কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে খনির ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান জার্মানীয়া ট্রেড কনসোর্টিয়াম (জিটিসি) ও জার্মানীয়া কর্পোরেশন লিমিটেড (জিসিএল)।
খনির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জিটিসি উৎপাদন বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়ে বুধবার (২ জুন) রাতে নোটিশ টাঙ্গিয়ে দিয়েছে। ঘোষণা অনুযায়ী বৃহস্পতিবার (৩ জুন) সকাল থেকে পাথর খনির সকল কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। খনির সকল কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী ডিএম জোবায়েদ হোসেন। খনির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জিটিসি ও জিসিএলর করা নোটিশে জানিয়েছেন, কতিপয় শ্রমিকের অন্যায় ও অযৌক্তিক দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তারা জোরপূর্বক অন্যান্য সাধারণ শ্রমিকদের কাজে যোগ দিতে বাধা দিচ্ছেন এবং ভূ-গর্ভে ও খনির অভ্যন্তরে অবৈধ ধর্মঘটে অংশ নিচ্ছেন। এতে খনিতে কর্মরত বিদেশি বিশেষজ্ঞরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন এবং খনির যন্ত্রপাতি ও স্থাপনার ক্ষতির আশঙ্কা করছেন। পরিস্থিতি শান্ত করতে প্রশাসনিক পর্যায়ে বিভিন্ন প্রচেষ্টা চালানো হলেও শ্রমিকদের একটি অংশ কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মানতে অস্বীকৃতি জানায়। সেই সঙ্গে তারা কর্মকর্তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার ও নাশকতার আশঙ্কা সৃষ্টি করছেন। তাই, খনি কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না। বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬-এর ১৩(১) ধারা অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ খনি উৎপাদন কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে।
বন্ধকালীন সময়ে সকল শ্রমিক কর্মচারী বাংলাদেশ শ্রম আইনের ১৩ (১) ধারার বিধান মোতাবেক কোনো শ্রমিক-কর্মচারী বেতন, ভাতা বা অন্যান্য সুবিধা পাবেন না। তবে, জরুরি দাপ্তরিক কার্যক্রম ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা শ্রমিক-কর্মচারীদের নির্ধারিত ডিউটি রোস্টার অনুযায়ী সময়মতো কাজে যোগ দেওয়ার নির্দেশও দেয়া হয় বিজ্ঞপ্তিতে।
খনির ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান জার্মানীয়া ট্রেড কনসোর্টিয়াম (জিটিসি) ও জার্মানীয়া কর্পোরেশন লিমিটেডের (জিসিএল) দাবি, গত এক বছর ধরে বাইরের স্বার্থান্বেষী একটি গোষ্ঠীর মদদে বিশৃংখলা সৃষ্টিকারী একদল শ্রমিক বেশ কয়েকবার দাবি আদায়ের নামে খনির অভ্যন্তরে অবস্থান ধর্মঘট করে খনির উৎপাদন বন্ধ করে দেয়। এদের মধ্যে সদ্য অব্যাহতি পাওয়া শফিকুল, রফিকুল, হাসান, ওমর আলী এবং সবুজ, সিরাজুল, মিঠু বাবু, নবিউল, মামুন, রমেন দুলাল অন্যতম। বেশ কয়েকবার তারা শ্রমিকদের উসকানি দিয়ে অযৌক্তি দাবি দাওয়া আদায়ের নামে কাজে যোগদান থেকে বিরত থেকে অবস্থান ধর্মঘট শুরু করে দেয়। এতে করে বিদেশি বিশেষজ্ঞরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগে, জিটিসি আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং সরকার রাজস্ব হারায়। খনির ভূগর্ভে অবস্থান কর্মসূচির ফলে দেশের এই সম্পদের নিরাপত্তা ঝুকিঁতে পড়ে এই শংকায় এবং বিদেশীদের নিরাপত্তার কথা চিন্তার রেখে খনির কার্যক্রম বন্ধ ঘোষনা করা হয়।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জিটিসি’র দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক তিনি জানান, তাদের প্রোডাকশন প্রফিট বোনাস দেওয়ার দাবিটি অযৌক্তিক। কারণ যারা এই খনিতে কাজ করছেন, সবাই তারা অস্থায়ী ভিত্তিতে। পাথর খনির উন্নয়ন ও উৎপাদনে দুই শতাধিক বিদেশি খনি বিশেষজ্ঞ ও দেশীয় প্রকৌশলী এবং প্রায় ৮০০ দক্ষ খনি শ্রমিক ও দুই শতাধিক কর্মকর্তা তিন শিফটে কাজ শুরু করে জিটিসি। এরপর থেকে খনিটি ৫ বার লাভের মুখ দেখতে পায়। যা এখনও অব্যাহত রয়েছে।
একুশে সংবাদ/দি.প্র/এ.জে