টানা ছয়দিনের বৃষ্টিতে জলমগ্ন হয়ে পড়েছে জয়পুরহাট জেলার কালাই উপজেলার উদয়পুর ইউনিয়নের মোসলেমগঞ্জ হাট। হাটের মাঠে হাঁটুসমান পানি জমে থাকায় চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন হাটে আসা ব্যবসায়ী, হাটুরে ও স্থানীয় পথচারীরা। পানি নিষ্কাশনের কোনো কার্যকর ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় এই দুরবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।
শুক্রবার (২৭ জুন) বিকেলে সরজমিন মোসলেমগঞ্জ হাট ঘুরে দেখা যায়, টানা বৃষ্টিতে হাটের মাঠ ও সংলগ্ন সড়ক পানিতে একাকার হয়ে গেছে। আশপাশে অপরিকল্পিত ভবন নির্মাণ ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় বৃষ্টির পানি জমে নালা বা পাশের খালে নামতে পারছে না। ফলে সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে, যা ঘণ্টার পর ঘণ্টা, এমনকি দিনের পর দিন স্থায়ী হয়ে থাকছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, হাটের পাশেই রয়েছে মোসলেমগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়, ভোকেশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য সেবা কমপ্লেক্স। প্রতিদিন এসব প্রতিষ্ঠান ও বাজারে যাতায়াতে কয়েক হাজার মানুষকে হাটের মাঠ অতিক্রম করতে হয়। কিন্তু হাঁটুসমান পানি জমে থাকায় তাদের চলাচল মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক তহিদুর রহমান বলেন, বছরের পর বছর ধরে এই সমস্যা চলছে। বিদ্যালয়ের প্রধান চলাচলের রাস্তা হাটের ভিতর দিয়ে হওয়ায় বর্ষাকালে শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগের সীমা থাকে না। কাপড়-জুতা ভিজে যায়, বই-খাতা নষ্ট হয়। ইউনিয়ন পরিষদে একাধিকবার অভিযোগ জানিয়েও কোনো ফল পাওয়া যায়নি।
হাটুরেরা জানান, এই এলাকার বড় একমাত্র হাট মোসলেমগঞ্জ হাট। প্রতি শুক্রবার ও মঙ্গলবার নিয়মিত হাট বসে। হাজার হাজার মানুষ কেনাকাটার জন্য আসেন। তবে সামান্য বৃষ্টিতেই হাটের রাস্তা ও মাঠ পানিতে তলিয়ে যায়। এতে অনেকেই কেনাকাটা না করেই হাটে এসে ফিরে যাচ্ছেন। এতে ব্যবসায়ীরা যেমন ক্ষতির মুখে পড়ছেন, তেমনি সাধারণ মানুষকে বিকল্প দূরবর্তী বাজারে যেতে হচ্ছে।
সবজি ব্যবসায়ী তোফাজ্জল হোসেন বলেন, কাদা ও পানির মধ্যে চাটাই বিছিয়ে দোকান দিই। কিন্তু বিকেলের বৃষ্টিতে সব তলিয়ে যায়। এখন তহবিলই নেই। যদি এভাবেই চলতে থাকে তাহলে এই হাটে আর আসা যাবে না।
ভুসি মালের ব্যবসায়ী আব্দুল কুদ্দুসের অভিজ্ঞতা আরও করুণ। তিনি বলেন, ২০ হাজার টাকার মাল নিয়ে হাটে এসেছিলাম, সবই পানিতে ডুবে গেছে। মাত্র আড়াই হাজার টাকার জিনিস বিক্রি করে ফিরে যাচ্ছি। এই সমস্যার কারণ হাটের চারপাশে অপরিকল্পিত নতুন ভবন নির্মাণ এবং পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকা।
হাট ইজারাদার মফিদুল ইসলাম বলেন, আমরা নতুন করে হাট ইজারা নিয়েছি। কিন্তু অবকাঠামোগত কোনো বিষয় আমাদের আওতায় পড়ে না। গত হাটবারে পানি জমে যাওয়ায় প্রায় বেচাকেনা হয়নি, ফলে আমরাও মাশুল আদায় করতে পারিনি।
উল্লেখ্য, উদয়পুর ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যান ওয়াজেদ আলী গত ৫ আগস্টের পর থেকে পলাতক রয়েছেন। প্যানেল চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম মামলায় গ্রেপ্তার হওয়ার কারণে সম্প্রতি তাকেও দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন। ফলে বর্তমানে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যত নেতৃত্বশূন্য।
ইউনিয়ন পরিষদের সচিব বুলবুল আহম্মেদ জানান, যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য আমরা আগামী মাসে উপজেলা পরিষদের সমন্বয় সভায় এই বিষয়টি উপস্থাপন করব।
একুশে সংবাদ/জ.প্র/এ.জে
একুশে সংবাদের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
