মুসলমানদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা উপলক্ষে ঢাকা–ময়মনসিংহ মহাসড়কে ঘরমুখো মানুষের যানবাহনের ভিড়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। ঈদুল ফিতরে ঢাকা–টাঙ্গাইল যমুনা সেতু মহাসড়কে যানজট না থাকলেও এবার ঈদুল আজহার পূর্বে যানজটের পাশাপাশি মহাসড়কে ডাকাতির ঘটনাও ঘটছে, যা ঘরমুখো যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে দিয়েছে।
গাজীপুরের শিল্পাঞ্চল শ্রীপুরে একসঙ্গে শতাধিক কারখানায় ছুটি ঘোষণার পর বৃহস্পতিবার (৫ জুন) সকাল থেকেই ঢাকা–ময়মনসিংহ মহাসড়কে তীব্র যানজট দেখা যায়। উপজেলার প্রায় ৪০০ শিল্পকারখানার মধ্যে শতাধিক প্রতিষ্ঠান হঠাৎ করে ছুটি ঘোষণা করায় কর্মীরা একযোগে ঘরে ফিরতে শুরু করে, ফলে যাত্রী ও যানবাহনের চাপ বেড়ে যায়।
নতুনবাজার, গড়গড়িয়া মাস্টারবাড়ি, মাওনা চৌরাস্তা, এমসি বাজার, নয়নপুর ও জৈনাবাজার এলাকায় যাত্রীরা বারবার যানজটে পড়েন। সরেজমিনে দেখা গেছে, অনেক চালক যাত্রী তুলতে সড়কের ওপরেই যানবাহন দাঁড় করিয়ে রাখেন। দূরপাল্লার বাসগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা ও ইউটার্ন এলাকায় যাত্রী নামানো-তোলার কারণে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে পড়ে। প্রতি বছর এই মহাসড়ক দিয়ে উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের প্রায় ২৪ জেলার লাখো মানুষ যাতায়াত করেন, যার ফলে যানবাহনের চাপ অন্যান্য সময়ের তুলনায় কয়েকগুণ বৃদ্ধি পায়।
যাত্রীরা জানান, গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে নয়নপুর পর্যন্ত যেতে দুই ঘণ্টার বেশি সময় লেগেছে। যাত্রী রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘টঙ্গী থেকে এমসি বাজার পর্যন্ত আসতেই দুই ঘণ্টা লেগেছে। ঈদ যাত্রায় এ ধরনের ভোগান্তি হলে দুর্ভোগ আরও বাড়বে।’ বাস সুপারভাইজার হাসান আলী বলেন, ‘এবার পশুবাহী ট্রাকের সংখ্যা ও যাত্রীচাপ বেশি হবে, আর ছুটিও কম—সব মিলিয়ে যানজটের আশঙ্কা অনেক।’
নালিতাবাড়ির যাত্রী ইকবাল ও শেরপুরের মারুফ হাসান জানান, মহাসড়কে ডাকাতির কারণে রাতের যাত্রীরা আতঙ্কে রয়েছেন। তারা প্রশাসনের কাছে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানান। অপর যাত্রী শফি মিয়া বলেন, ‘দিনেও ছিনতাই ও ডাকাতি হচ্ছে, তাই পুলিশের আরও তৎপর হওয়া দরকার।’
মাওনা হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আয়ুব আলী বলেন, ‘সকাল থেকে যানজট থাকলেও এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিকের দিকে যাচ্ছে, আমরা সড়কে তৎপর রয়েছি।’
বাস-কোচ মিনিবাস মালিক সমিতির সাবেক সভাপতি খন্দকার ইকবাল হোসেন জানান, সরকার পুলিশের মাধ্যমে সিসিটিভি, ছবি ও ভিডিও সংগ্রহের মাধ্যমে যাত্রী নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চাচ্ছে। কিছু বাসে যাত্রী ওঠার সময় ছবি তুলে সার্ভারে পাঠানোর নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) রাকিবুল হাসান রাসেল জানান, মহাসড়কে টহল, রেকার ব্যবস্থা ও নিরাপত্তা কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। ঈদযাত্রায় যাত্রীদের নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছাতে সার্বক্ষণিক পুলিশ নিয়োজিত থাকবে।
একুশে সংবাদ/ গা.প্র/এ.কে