মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলায় পদ্মা নদীতে রাতের আঁধারে অবাধে চলছে বালু উত্তোলন। প্রতি রাতে ১০টা থেকে ভোররাত পর্যন্ত ১২-১৩টি ড্রেজার দিয়ে তোলা হচ্ছে বালু। বাল্কহেডযোগে এসব বালু চলে যাচ্ছে মুন্সিগঞ্জ, শরিয়তপুর, ফরিদপুরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়।
স্থানীয়রা বলছেন, গতবছরের বালুমহালের ইজারাদার আজিমনগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আলী আকবর খানের নেতৃত্বে চলছে বালু লুট। তবে, গতবছর বালুমহালের সার্বিক দায়িত্বে থাকা আকিবুল খান বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নদীভাঙন কবলিত উপজেলা হরিরামপুর। প্রতিবছরই বর্ষার শুরু ও শেষে নদীভাঙনের কবলে পড়ে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা। চলতি বছরেও নদীতে পানি বাড়তে শুরু করেছে। অবাধে ড্রেজিং এর ফলে নদীভাঙন বৃদ্ধির আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
গত কয়েকদিনের অনুসন্ধানে জানা যায়, গতবছর বাংলা ১৪৩১ সালের জন্য জেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক আবিদ হাসান বিপ্লবের এশিয়ান বিল্ডার্সের নামে লেছড়াগঞ্জ বালুমহালের ইজারা নেন আলী আকবর খান। গত ৩০ চৈত্র (১৩ এপ্রিল) বালুমহালের ইজারার মেয়াদ শেষ হয়েছে। মেয়াদ শেষের পরে রাতের আঁধারে অবৈধভাবে বালু তুলছেন তিনি।
দিনের বেলায় বালু উত্তোলন ও পরিবহনে ব্যবহৃত ড্রেজার ও বাল্কহেড নদীর পাড়ে ও চরে নোঙর করে রাখা হয়। রাত নামলে শুরু হয় বালু উত্তোলনের মহোৎসব।
সরেজমিনে গত বৃহস্পতি ও শুক্রবার রাতে নদীতে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার ধুলশুড়া এলাকায় পদ্মা নদীতে ১২-১৩টি ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন চলছে। এসব বালু বাল্কহেডে করে চলে যাচ্ছে বিভিন্ন এলাকায়।
বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১০টা থেকে এবং শুক্রবার দিবাগত রাত ১১টা থেকে শুরু হয় বালু তোলা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ধুলশুড়া এলাকার কয়েকজন বলেন, দিনের বেলায় নদীর পাড়ে এবং চরে ড্রেজার ও বাল্কহেড রাখা হয়। রাতে নদী থেকে বালু তোলা হয়। বালু তোলার সময় চারদিকে নজর রাখতে ৩-৪টি স্পিডবোট টহল দেয়। প্রতি স্পীডবোটে ৫-৭ জন করে লোক থাকে। এদের কাছে অস্ত্রও থাকে।
বালু পরিবহনে ব্যবহৃত আগমনী বাল্কহেডের সুকানি আলামিন জানান, আমরা টাকা দিয়ে বালু কিনে নেই। ধুলশুড়া এলাকা থেকে এশিয়ান বিল্ডার্সের টোকেনে বালু ক্রয় করেছি। এবার যারা নতুন করে ইজারা পেয়েছে, তারা বালু তোলা শুরু করলে তাদের কাছ থেকেও কিনব।
বালুমহালের সার্বিক দেখাশোনার দায়িত্বে ছিলেন আলী আকবর খানের ছোট ভাই আকিবুল খান। তিনি বলেন, রাতের আঁধারে বালু কাটার সাথে আমরা জড়িত নই। বিষয়টি কারা করছে জানি না। জানলে প্রশাসনের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করব।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কোহিনুর আক্তার বলেন, রাতে নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের বিষয়টি কোস্ট গার্ড ও নৌ-পুলিশকে জানানো হয়েছে। পাশাপাশি আমরাও এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিব।
একুশে সংবাদ/মা.প্র/এ.জে
আপনার মতামত লিখুন :