AB Bank
  • ঢাকা
  • রবিবার, ২৪ আগস্ট, ২০২৫, ৯ ভাদ্র ১৪৩২

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

হালদা নদীতে ডিম সংগ্রহের প্রস্তুতি শেষ, অপেক্ষায় বজ্রসহ বৃষ্টির


Ekushey Sangbad
আসগর সালেহী, চট্টগ্রাম
০২:৫১ পিএম, ৭ মে, ২০২৫

হালদা নদীতে ডিম সংগ্রহের প্রস্তুতি শেষ, অপেক্ষায় বজ্রসহ বৃষ্টির

দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম মিঠাপানির প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদী। মেজর কার্প জাতীয় মাছের (রুই, কাতলা, মৃগেল ও কালিবাউশ) প্রাকৃতিক প্রজননের জন্য এটি বিখ্যাত। প্রজনন মৌসুমে অর্থাৎ এপ্রিল থেকে জুন মাসের অমাবস্যা ও পূর্ণিমার তিথিতে বজ্রপাতসহ পর্যাপ্ত বৃষ্টির ফলে পাহাড়ী ঢল নেমে পানিতে তীব্র স্রোত সৃষ্টি করে এবং পানির তাপমাত্রা কমে (২৫-২৮) ডিগ্রি সেলসিয়াস ও বিভিন্ন ভৌত ও রাসায়নিক প্যারামিটারের (পানির তাপমাত্রা, পানির স্রোত, পানির স্তর, তড়িৎ পরিবাহিতা, টারবিডিটি, দ্রবীভূত অক্সিজেন, পিএইচ ইত্যাদি) মিথস্ক্রিয়তায় হালদা নদীতে কার্পজাতীয় মাছের ডিম ছাড়ার প্রাকৃতিক অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হলেই কেবল মা মাছ ডিম ছাড়ে। স্থানীয় ডিম সংগ্রহকারীরা এসব ডিম সংগ্রহ করে মাটির তৈরি কূয়া বা হ্যাচারিতে ফুটিয়ে উন্নত বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন পোনা উৎপাদন করেন।

একদিকে আকাশে মেঘের ঘনঘটা, অন্যদিকে হালদায় মা মাছের আনাগোনা শুরু হওয়ায় ডিম সংগ্রহের মহাপ্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন ডিম সংগ্রহকারীরা। তাদের দীর্ঘদিনের পেশা এই ডিম আহরণ। নৌকা, জাল ও ডিম আহরণের নানা সরঞ্জাম নিয়ে ডিম সপ্তাহের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। পাশাপাশি নদীর দুই পাড়ে ডিম থেকে রেণু পোনা ফোটানোর জন্য সরকারিভাবে স্থাপিত হ্যাচারিগুলোরও উন্নয়ন এবং সংস্কার কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে।

এ ছাড়া সনাতনী পদ্ধতিতে ডিম ফোটানোর মাটির কুয়াগুলোরও সংস্কার এবং আধুনিকায়ন করা হচ্ছে। ডিম আহরণের প্রধান উপকরণ নৌকাগুলোর মেরামত এবং রং করার কাজ ইতিমধ্যে সম্পন্ন করা হয়েছে।

হালদা নদীর পোনার গুরুত্ব
প্রাকৃতিকভাবে সংগৃহীত এই রেণু পোনা শুধু বাংলাদেশেই নয়, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যেও বিশেষ কদর পায়। হালদা নদীর মেজর কার্পজাতীয় মাছের পোনা স্বাভাবিকভাবে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা ও দ্রুত বৃদ্ধির জন্য বিখ্যাত। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের হ্যাচারিতে কৃত্রিম প্রজননে উৎপাদিত পোনার তুলনায় হালদার পোনা অধিক টেকসই এবং বাজারজাতকরণে লাভজনক। এতে দেশের মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ, মাছের প্রাকৃতিক বংশবিস্তারে ইতিবাচক প্রভাব পড়ে এবং হাজার হাজার মানুষের জীবিকা ও অর্থনীতির সঙ্গে এই পোনার উৎপাদন ও বিপণন ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। তাই হালদা নদীকে ‘জাতীয় মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র’ ঘোষণার পেছনেও এই পোনার অনন্য গুরুত্ব রয়েছে।

জলবায়ু পরিবর্তন ও মনুষ্যসৃষ্ট বিভিন্ন ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের নেতিবাচক প্রভাবে বিগত কয়েক বছর হালদা থেকে সংগৃহীত ডিমের পরিমাণ ব্যাপকহারে কমেছে। বর্তমানে হালদা নদীতে চলছে মেজর কার্পজাতীয় মাছের ভরা প্রজনন মৌসুম। কিন্তু বজ্রপাতসহ বৃষ্টি না হওয়ায় হালদা নদীতে ডিম ছাড়ার অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি না হওয়ায় বিগত এপ্রিল মাসের দুটি তিথিতে (অমাবস্যা ও পূর্ণিমা) ডিম ছাড়েনি কার্পজাতীয় মা মাছ।


সম্প্রতি চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার ড. জিয়াউর রহমান হালদা নদী পরিদর্শন করেছেন। বিভিন্ন নদী, খাল ও ছড়া থেকে হালদা নদীতে মাছের আগমন অবাধ ও নিরাপদ করতে হাটহাজারী ও রাউজান উপজেলা প্রশাসন এবং চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন, মৎস্য বিভাগ ও নৌপুলিশ সার্বক্ষণিক নদী পাহারা ও অভিযান জোরদার রেখেছে। নদী থেকে মাছ চুরি প্রতিরোধ করতে নদীর পাড়ে স্থাপন করা হয়েছে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন সিসি ক্যামেরা। এসব ক্যামেরার মাধ্যমে উপজেলা, জেলা এমনকি মন্ত্রণালয় থেকে নদী তদারকি করা হচ্ছে। নদীতে মা মাছের ডিম ছাড়ার সময় যত ঘনিয়ে আসছে, নৌপুলিশের টহলও তত বাড়ছে।

প্রতি বছর বাংলা মাসের চৈত্রের প্রথম দিকে নদীতে মা মাছের আগমন ঘটে। এ সময় হালদা নদীর সঙ্গে সংযুক্ত নদী ও খাল যেমন মাতামুহুরী, সাঙ্গু, কর্ণফুলী, চেংখালী, পোড়া কপলী, কাটাখালী, বোয়ালিয়া, সোনাইসহ বিভিন্ন খাড়িতে অবস্থানকারী মা মাছ হালদা নদীতে ডিম ছাড়তে চলে আসে।

হালদার পাড়ের বাসিন্দা শফিউল আলমসহ একাধিক ডিম সংগ্রহকারীরা জানান, নদী থেকে ডিম আহরণের যাবতীয় প্রস্তুতি তাদের রয়েছে। তারা আক্ষেপ করে বলেন, এক শ্রেণির কৃত্রিম রেণু পোনা ব্যবসায়ী সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। তারা গত বছরের রেণু বলে কৃত্রিম রেণু পোনা বিক্রি শুরু করেছেন।

এ বিষয়ে হালদা গবেষক, চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজের (সিসিপিসি) সহকারী অধ্যাপক ও জীববিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম জানান, বজ্রসহ প্রবল বর্ষণের ফলে নদীতে পাহাড়ি ঢলের তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়ে নদীর পানি অপেক্ষাকৃত ঘোলাটে হলে খুম তথা পানির গভীরতা যেখানে বেশি এবং খুমের পানির ঘূর্ণায়মান স্থানে মা মাছ ডিম ছেড়ে থাকে। চৈত্র মাসে ও কোনো কোনো সময় উপযুক্ত পরিবেশ পেলে, বিশেষ করে বজ্রসহ প্রবল বর্ষণে নদীতে ঢলের প্রকোপ বৃদ্ধি পেলে মা মাছ ডিম ছাড়ে।

হালদার জলজ বাস্তুতন্ত্র কার্পজাতীয় মা মাছের ডিম ছাড়ার উপযোগী কিনা জানতে তার কলেজের জীববিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক মো. মাহমুদুল হাসান ও প্রদর্শক সুমন শীলসহ গত ১ মে বৃহস্পতিবার হালদা নদীর স্পনিং গ্রাউন্ডের পানির নমুনা পরীক্ষা করে দেখা যায়, পানির বিভিন্ন ভৌত ও রাসায়নিক গুণাবলি আদর্শ মানের মধ্যে রয়েছে। তবে কার্পজাতীয় মাছের প্রজননের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্যারামিটার পানির তাপমাত্রা আদর্শ মানের তুলনায় একটু বেশি রয়েছে।

পাশাপাশি বিভিন্ন সরকারি হ্যাচারি ও ডিম সংগ্রহকারীদের নানাবিধ প্রস্তুতি সরাসরি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ডিম সংগ্রহের প্রস্তুতি একেবারে শেষের দিকে। পরিবেশ অনুকূলে থাকলে অর্থাৎ বজ্রপাতসহ পর্যাপ্ত বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢল নেমে আসলে চলতি মাসের পূর্ণিমার জোঁতে (১০ মে–১৪ মে) অথবা অমাবস্যার জোঁতে (২৫ মে–২৯ মে) হালদা নদীতে মেজর কার্পজাতীয় মা মাছের ডিম ছাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবিএম মশিউজ্জামান বলেন, নদীতে মাছের অবাধ বিচরণ, মাছের মজুদ বৃদ্ধি, জীববৈচিত্র্য ও ডলফিন রক্ষা করতে সার্বক্ষণিকভাবে নদীর দুই পাড়ের জনপ্রতিনিধি, গ্রাম পুলিশ ও আনসার ভিডিপি কাজ করছে। এ ছাড়া চোরাই মাছ শিকারিদের আটক করতে হালদা নদীতে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা আইডিএফ-এর পক্ষ থেকে সৌরবিদ্যুৎচালিত নৌকা দিয়ে প্রশাসনকে সহযোগিতা করা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, এবার যদি পরিবেশ অনুকূলে থাকে, হালদায় আশানুরূপ ডিম পাওয়া যাবে। আর নদী থেকে আহরিত ডিম থেকে রেণু ফোটানোর জন্য সরকারিভাবে স্থাপিত হ্যাচারির সংস্কার ও প্রয়োজনীয় উন্নয়ন করা হয়েছে।

 

 

একুশে সংবাদ/চ.প্র/এ.জে

সর্বোচ্চ পঠিত - সারাবাংলা

Link copied!