ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে ইতালি নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে রাসেল মিয়া নামে এক যুবককে নির্মমভাবে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। নিহত রাসেল উপজেলার ধরমণ্ডল ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের লাউছ মিয়ার ছেলে। এই ঘটনার পর থেকেই দালাল লিলু মিয়ার বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে।
পরিবারের দাবি, ২১ ফেব্রুয়ারি লিবিয়ার একটি মাফিয়া চক্র রাসেলকে বিষাক্ত ইনজেকশন প্রয়োগ করে হত্যা করে। ২২ ফেব্রুয়ারি এক প্রবাসীর মাধ্যমে পরিবারের কাছে মৃত্যুসংবাদ পৌঁছে।
জানা যায়, পরিবারের দারিদ্র্য দূর করতে ২০২৪ সালে পৈতৃক সম্পত্তি বিক্রি করে রাসেল লিবিয়ায় পাড়ি জমান। দালাল লিলু মিয়ার আশ্বাস ছিল, সেখান থেকে তাকে ইতালিতে পাঠানো হবে। কিন্তু এই আশার বদলে তাকে পড়তে হয় নির্মম প্রতারণার জালে। লিবিয়ায় পৌঁছানোর পর স্থানীয় দালাল চক্রের কাছে ১০ লাখ টাকায় বিক্রি করা হয় তাকে। শুরু হয় অমানবিক নির্যাতন।
পরিবারের কাছ থেকে একাধিকবার মুক্তিপণ দাবি করে চক্রটি। নির্যাতনের ভিডিও পাঠিয়ে আদায় করে ৩০ লাখ টাকা। এরপরও আরও ১০ লাখ টাকা চায় তারা। শেষ পর্যন্ত টাকা দিতে না পারায় রাসেলকে ইনজেকশন দিয়ে হত্যা করা হয় বলে অভিযোগ পরিবারের।
নিহতের বাবা লাউছ মিয়া বলেন, "বাড়িঘর ও জমিজমা বিক্রি করে ৫০ লাখ টাকা দিছি, আরও চাইলে দিতাম। কিন্তু টাকা দিতে না পারায় আমার ছেলেকে হত্যা করছে দালাল লিলু মিয়া ও মাফিয়া চক্র।"
রাসেলের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে দালাল লিলু মিয়ার বাড়িতে হামলা চালায় ক্ষুব্ধ জনতা। বাড়ি ভাঙচুর করা হয়, টিনের চালা ও বেড়া খুলে নিয়ে যায় অনেকে। দালাল লিলু মিয়া ও তার পরিবার পালিয়ে গেছেন।
নিহতের চাচা ফখরুল ইসলাম বলেন, "ওরা রাসেলকে বিক্রি করেছিল। সর্বশেষ সাড়ে নয় লাখ টাকা চেয়েছিল, না দিতে পারায় তাকে মেরে ফেলেছে। এখন লাশ ফেরত দিতে ১০ লাখ টাকা চাচ্ছে। টাকা দিলেও লাশ ফেরত পাবে কি না, সেটারও নিশ্চয়তা নেই।"
ধরমণ্ডল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, "রাসেলের পরিবার ৫০ লাখ টাকা দিয়েও তাকে বাঁচাতে পারেনি। মানব পাচার চক্রের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হোক, যাতে আর কোনো তরুণ এই মর্মান্তিক পরিণতির শিকার না হয়।"
নাসিরনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. খাইরুল আলম বলেন, "নিহতের পরিবারের কাছ থেকে লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহীনা নাসরিন বলেন, "বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। মানব পাচারের সঙ্গে জড়িতদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে।"
এদিকে, দালাল লিলু মিয়ার বাড়ি পুরোপুরি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। স্থানীয়দের মতে, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দুই কোটি টাকারও বেশি।
একটি স্বপ্নের পেছনে দৌঁড়ে রাসেল জীবন হারিয়েছে। পরিবার নিঃস্ব হয়েছে, সমাজে নেমেছে তীব্র ক্ষোভ। এই নির্মম ঘটনা যেন আর কোনো পরিবারের জীবনকে বিষাদে ঢেকে না দেয়, সেজন্য প্রয়োজন কঠোর আইন প্রয়োগ ও মানব পাচার প্রতিরোধে জোরদার পদক্ষেপ।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :