AB Bank
  • ঢাকা
  • শনিবার, ০২ আগস্ট, ২০২৫, ১৮ শ্রাবণ ১৪৩২

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

জমে উঠছে ঝালকাঠির ভাসমান পেয়ারার হাট,দেশী বিদেশি পর্যটকদের ভিড়ে আনন্দঘন পরিবেশ



জমে উঠছে ঝালকাঠির ভাসমান পেয়ারার হাট,দেশী বিদেশি পর্যটকদের ভিড়ে আনন্দঘন পরিবেশ

জমে উঠেছে ২০০ বছরের পুরানো পেয়ারার ভাসমান হাট ঝালকাঠির সদর উপজেলার কীর্ত্তিপাশা ইউনিয়নের ভীমরুলি খালে বসা এ অঞ্চলের সবচেয়ে বড় ভাসমান পেয়ারার হাট।

আষাঢ়, শ্রাবণ, ভাদ্র-এই তিন মাস পাকা পেয়ারার মৌসুম। এ মৌসুমে পাকা পেয়ারার ম-ম ঘ্রাণ নিতে এবং সবুজের সমারোহ দেখতে আসেন দেশ ও বিদেশের অনেক মানুষ।

সম্প্রতি ভাসমান পেয়ারার বাজার দেখতে আসেন বাংলাদেশে নিযুক্ত আলজেরিয়ার রাষ্ট্রদূত আবদেলোহাব সায়দানি।

বাড়তি বিনোদনের জন্য রয়েছে একাধিক পিকনিক স্পট। এটা ভিয়েতনাম বা পৃথিবীর অন্য কোনো দেশের কোথাও নয়। বাংলাদেশের দক্ষিণে উপকূলীয় জেলা ঝালকাঠির ভীমরুলী গ্রামে। সদর উপজেলার উত্তরদিকে অবস্থিত ভীমরুলী গ্রাম। এখানে খালের ওপর জলে ভেসে ভেসে ছোট ছোট ডিঙি নৌকায় পণ্য ক্রয়-বিক্রয় চলে। পানির ওপর ভাসমান একটি হাট। এখানে গেলেই চোখে পড়ে নৌকাভরা এত্ত এত্ত পেয়ারা! 

এ যেন পেয়ারার রাজ্য! পদ্মা সেতু হওয়ার পর সড়কপথে দেশের বিভিন্ন এলাকার পাইকাররা ট্রাক, মিনিট্রাক ও পিকআপ নিয়ে আসেন এখানে। তারা সকাল ৯টা থেকে শুরু করে দুপুর ১২টার মধ্যে ক্রয়ের পালা শেষ করে পেয়ারা নিয়ে ছুটে চলেন যার যার গন্তব্যে। ঝালকাঠি সদর উপজেলার ভীমরুলী গ্রামে ভাসমান এই জলবাজারের প্রধান পণ্য পেয়ারা। সারি সারি নৌকার ওপর শোভা পায় কাঁচা-পাকা সবুজ-হলুদ পেয়ারা যার ভারে নৌকা ডুবি ডুবি করে। হাটুরেদের হাঁকডাকে গমগম করে পুরো এলাকা। খালের ওপর দারুণ জমে উঠে জলে ভাসা আজব এই হাট। 

ঝালকাঠি জেলা প্রসাশক আশরাফুর রহমান বলেন, সংরক্ষণসহ কৃষিভিত্তিক শিল্প কারখানা গড়ে উঠলে পেয়ারা চাষিরা আর্থিকভাবে লাভবান হবে। যুগ যুগ ধরে পেয়ারা চাষাবাদ করে এলেও উদ্যোক্তার অভাবে হিমাগারসহ প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প গড়ে না ওঠায় দিন দিন চাষাবাদে আগ্রহ হারাচ্ছে চাষিরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পিরোজপুরের স্বরূপকাঠি, বরিশালের বানারীপাড়া এবং ঝালকাঠি সদর উপজেলার সীমান্তবর্তী গ্রামটিতে সবচেয়ে বড় মোকামে প্রতিদিন কয়েক লাখ টাকার পেয়ারা ক্রয়-বিক্রয় হয়। বরিশাল জেলার বানারীপাড়া, ঝালকাঠি জেলার সদর উপজেলা ও পিরোজপুর জেলার স্বরূপকাঠি ঘিরেই মূলত পেয়ারার বাণিজ্যিক চাষ হয়।

বানারীপাড়ার ১৬ গ্রামের ৯৩৭ হেক্টর, ঝালকাঠি সদরের ১৩ গ্রামের ৩৫০ হেক্টর, স্বরূপকাঠির ২৬ গ্রামের ৬৪৫ হেক্টর জমিতে পেয়ারা চাষ হয়। পেয়ারা চাষে এসব গ্রামের কয়েক হাজার পরিবারের দিনবদল হয়েছে। এসব এলাকার মধ্যে ঝালকাঠির কীর্তিপাশা, ভীমরুলী, শতদশকাঠি, খাজুরিয়া, ডুমুরিয়া, কাপুড়াকাঠি, জগদীশপুর, মীরকাঠি, শাখা গাছির, হিমানন্দকাঠি, আদাকাঠি, রামপুর, শিমুলেশ্বর গ্রামের বেশির ভাগ অংশজুড়ে বাণিজ্যিকভাবে পেয়ারার চাষ হয়। স্বরূপকাঠির গ্রামগুলোর মধ্যে রয়েছে সঙ্গীতকাঠি, খায়েরকাঠি, ভদ্রানন্দ, বাচ্চুকাঠি, ভাংগুরা, আদাবাড়ি, রাজাপুর, ব্রাহ্মণকাঠি, ধলহার, জিন্দাকাঠি, আটঘর, কুড়িয়ানা, পূর্ব জলাবাড়ি, ইদিলকাঠি, আরামকাঠি, মাদ্রা, গণপতিকাঠি, আতাকাঠি, জামুয়া, জৈলশার, সোহাগদল, আদমকাঠি, অশ্বত্থকাঠি, সমীত, সেহাংগল ও আন্দারকুল। বানারীপাড়া উপজেলার মধ্যে রয়েছে তেতলা, সৈয়দকাঠি, মালিকান্দা, ব্রাহ্মণবাড়ি, বোয়ালিয়া, জম্বুদ্বীপ, বিশারকান্দি, মরিচবুনিয়া, মুরার বাড়ি, উমরের পাড়, লবণ সড়া, ইন্দির হাওলা, রাজ্জাকপুর, হলতা ও চুয়ারিপাড়।

স্থানীয়দের কাছে জানা গেল, এ অঞ্চলের সবচেয়ে বড় ভাসমান হাট এটি, যা পুরো বাংলাদেশেই অনন্য। এ অঞ্চলের সবচেয়ে বড়! তা হলে কি আরও আছে এমন বাজার? হ্যাঁ, আছে। পাশের পিরোজপুরের স্বরূপকাঠির (নেছারাবাদ) কুড়িয়ানা, আটঘর, আতা ও ঝালকাঠির মাদ্রা। আরও অবাক করা বিষয় হলো, সব হাটই বসে পিরোজপুরের সন্ধ্যা নদী থেকে বয়ে আসা একই খালের পাড়ে। ভীমরুলী জলে ভাসা হাটে গেলেই চোখে পড়ে পেয়ারা বোঝাই ডিঙি নৌকাগুলো এপাশ-ওপাশ করছে। ভালো দামের আশায় চাষিদের এমন নড়চড়। খালের দুই পাশে ব্যবসায়ীদের আড়ত। তারাই কিনবেন। বাংলাদেশের সিংহভাগ পেয়ারা উৎপাদনকারী অঞ্চলের চাষিরা ডিঙিতে বসে বিকিকিনিতে মগ্ন এখানে। পাইকার ও পেয়ারা চাষিদের কেনাবেচার ধুম চলছে পেয়ারার মোকামগুলোতে।

প্রায় ৩১ হাজার একর জমির ওপর গড়ে ওঠা বাগানের পেয়ারা আসে এখানে। বাংলার আপেল বলা হয় এখানকার পেয়ারাকে। শুধু বাংলাদেশ নয়, এশিয়ার বিখ্যাত এই পেয়ারাকে স্থানীয় ভাষায় গৈয়া কিংবা সবরী বলা হয়। পুষ্টিমানের দিক থেকে একটি পেয়ারা ৪টি আপেলের সমতুল্য বলে কৃষি বিশেষজ্ঞরা অভিমত দিয়েছেন। এখানে প্রতি বছর পেয়ারার মৌসুমে বিপুল পরিমাণ সুস্বাদু পেয়ারার উৎপাদন হয়ে থাকে। বাংলার আপেল নামে খ্যাত এই পেয়ারা এখানে প্রচুর উৎপাদন হলেও সংরক্ষণের অভাবে চাষিদের লোকসানের মুখে পড়তে হয় প্রতি বছর। কারণ পেয়ারা দ্রুত পেকে যায়। দ্রুত বিক্রি না করতে পারলে চাষিদের পড়তে হয় লোকসানের মুখে। সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণে সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগ থাকলে মৌসুমি এ ফল বছরজুড়ে ভোক্তাদের চাহিদা মিটিয়ে চাষিরাও আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারবেন। কিন্তু দীর্ঘদিনেও উদ্যোক্তার অভাবে হিমাগারসহ প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প গড়ে না উঠায় এবং উৎপাদন খরচ দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় চাষিরা পেয়ারা চাষে আগ্রহ হারাচ্ছে।

পেয়ারা চাষ ও ব্যবসাকে কেন্দ্র করে এখানে গড়ে উঠেছে ২০টিরও বেশি ছোট-বড় মৌসুমি ব্যবসা কেন্দ্র। স্থানীয়ভাবে এগুলোকে বলা হয় পেয়ারার মোকাম। প্রতিদিন সকালে এসব মোকামে চাষিরা ছোট ছোট ডিঙি নৌকায় সরাসরি বাগান থেকে পেয়ারা নিয়ে আসেন পাইকারদের কাছে। সেগুলো কিনে ট্রলারে নৌপথে নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। সড়কপথেও দেশের নানাপ্রান্তে চলে যায় এখানকার পেয়ারা। 

প্রতি বছর পেয়ারার মৌসুমে বিভিন্ন স্থান থেকে নৌপথে পেয়ারা দেখতে আসেন পর্যটকরা। পেয়ারা বাগান দেখে মুগ্ধ হয়ে এখান থেকে পেয়ারা কিনেও নিয়ে যান। ভীমরুলীর ভাসমান পেয়ারা হাট দেখতে আসা পর্যটক ফারুক খান বলেন, অদ্ভুত সুন্দর ভাসমান এই হাট। পেয়ারা বাগান ও আশপাশের প্রকৃতি যে কতটা নজরকাড়া হতে পারে এটি এখানে না এলে বোঝার উপায় নেই! প্রতি বছর শত শত দেশি-বিদেশি পর্যটক এ স্থানে ভিড় জমান পেয়ারা মৌসুমজুড়ে। বাংলাদেশিদের জন্যও এটা হতে পারে অপূর্ব ভ্রমণকেন্দ্র।

বছরের পর বছর ধরে পেয়ারা উৎপাদিত এসব এলাকার চাষিদের একমাত্র সমস্যা হিমাগার ও সড়কপথে যোগাযোগের যথোপযোগী ব্যবস্থা না থাকা। জগদীশপুর গ্রামের পেয়ারা চাষি বিমল মিস্ত্রি জানান, প্রতি বছর হিমাগারের অভাবে এসব এলাকার কয়েক কোটি টাকার পেয়ারা নষ্ট হয়ে যায়। কারণ পেয়ারা পচনশীল ফল। পেয়ারা চাষি বিশ্বজিৎ চৌধুরী বলেন, সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগে বড় আকারের পেয়ারা প্রসেসিং করে বিদেশে রফতানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। হেক্টর প্রতি ৫ থেকে ৬ টন উৎপাদিত পেয়ারা থেকে বছরে আড়াই থেকে তিন কোটি টাকা আয় হয়।

আড়তদার লিটন হালদার বলেন, মৌসুমে প্রতিদিন প্রায় ১০ হাজার মণ পেয়ারা বিক্রি হয়। ভীমরুলী মোকাম থেকে সড়ক ও নৌপথে খুলনা, ফেনী, ঢাকা, সিলেট, পটুয়াখালী, ভোলা, মাদারীপুর, নাটোর ও বরিশালে হাজার হাজার মণ পেয়ারা যাচ্ছে। পেয়ারা চাষ ও বাণিজ্যে ৭ থেকে ৮ হাজার শ্রমজীবী মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত থেকে জীবিকা নির্বাহ করছেন।

চাষিরা জানায়, এ বছর ফাল্গুনে পেয়ারা গাছে ফুল ধরার পর অতিরিক্ত খরায় পানির অভাব দেখা দেওয়ায় ফুল ঝড়ে যাওয়ার পাশাপাশি অনেক গাছও মরে যায়। অর্থনৈতিক মন্দার কারণে পেয়ারা চাষিরা গাছের গোড়ায় পর্যাপ্ত সার এবং মাটি দিতে পারেননি। এসব কারণে পেয়ারার উৎপাদন কম হয়েছে। তবে দাম ভালো পাচ্ছে চাষিরা। তবু তাদের হতাশা কাটেনি। ১০ বিঘার বাগান থেকে প্রতিদিন ১০ মণ পেয়ারা নামার কথা থাকলেও ৩ থেকে ৫ মণ নামছে। পেয়ারার আকার ও মান ভেদে ১ হাজার থেকে শুরু করে ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে প্রতি মণ।

ভীমরুলী গ্রামের পেয়ারা চাষি ফণী ভূষণ দাস বলেন, খরা এবং রোদের তাপের কারণে পেয়ারার মুকুল ও কচি পেয়ারা পুড়ে গেছে। এ কারণে এ বছর উৎপাদন কম। প্রতি বছরের চেয়ে দাম ভালো হলেও উৎপাদন কম হওয়ায় চাহিদা অনুযায়ী উপার্জন করতে পারছি না। কাঁচাবালিয়া গ্রামের পেয়ারা চাষি জাহিদ মিয়া বলেন, খড়ার কারণে ফলন ভালো না হওয়ার ভয় ছিল। মৌসুমের শুরুতে দাম ভালো পেলেও বর্তমানে একটু কমে গেছে।

ঝিনাইদহ থেকে আসা পর্যটক মশিউর রহমান বলেন,ঝালকাঠির পেয়ারা বাগান ও ভাসমান হাট দেখে সত্যি মুগ্ধ হয়েছি।এখানে ঘুরতে খুবই ভালো লেগেছে। বিশেষ করে পেয়ারা পার্কে নিজেই পেয়ারা ছিড়ে খেতে পারা যায়। 

কুড়িয়ানা পেয়ারাপার্ক পিকনিক স্পট এন্ড ইকো কটেজের স্বত্বাধিকারী অর্নব মজুমদার বলেন,দিনদিন পেয়ারা পার্কে পর্যটকের সাড়া বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখানে দেশের বাহিরের থেকেও পর্যটক আসেন। আমরা তাদের সেবা দেওয়ার চেষ্টা করি। পেয়ারা ও আমড়ার মৌসুমে এখানে পর্যটক আসেন। এখানের বিশেষত্ব হলো পর্যটকরা নিজেরা পেয়ারা গাছ থেকে ছিড়ে স্বাদ গ্রহণ করতে পারেন।

ঝালকাঠি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, এবছর জেলায় ৫৬২ হেক্টর জমিতে পেয়ারার আবাদ হয়েছে। আশাকরি এ থেকে ৫ হাজার ৬ শত ২৬ মেট্রিক টন পেয়ারা পাওয়া যাবে এবং সেটি বিক্রি করে কয়েক কোটি টাকা পাওয়া যাবে।


একুশে সংবাদ/ঝা.প্র/এ.জে

সর্বোচ্চ পঠিত - সারাবাংলা

Link copied!