নওগাঁর আলতাদিঘির আলতা-রহস্য
শালবনে ঘেরা নওগাঁর আলতাদিঘি উদ্যান। সুবিস্তৃত দিঘির উত্তর পাড়ে তারকাঁটায় ঘেরা ভারতের সীমান্ত। আলতাদিঘি জাতীয় উদ্যান নওগাঁ জেলার ধামইরহাট উপজেলায় অবস্থিত।

এই জাতীয় উদ্যানটি আলতাদিঘি নামের একটি দিঘিকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে সুবিশাল বনভূমি। শালবন এবং বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদে পরিপূর্ণ ২৬৪.১২ হেক্টর জমির এই বনভূমির ঠিক মাঝখানেই রয়েছে প্রায় ৪৩ একর আয়তনের বিশাল দিঘি। যার নাম আলতাদিঘি।

আলতাদিঘি নাম কিভাবে হলো তা নিয়ে সঠিক ইতিহাস না থাকলে লোকমুখে যা জানা যায়- প্রজা সাধারণের পানিয়জলের সংকট নিরসনে রাজা বিশ্বনাথ রাজমাতার সন্তুষ্টিকল্পে দিঘিটি খনন করেন। রাজমাতার শর্ত ছিল, তিনি পায়ে হেঁটে যতদূর অবধি যেতে পারবেন সেই পর্যন্ত দিঘিটি খনন করতে হবে। রাজমাতার শর্ত পূরণের বিষয়ে মন্ত্রী ও সভাসদের সঙ্গে রাজা পরামর্শ করে আলতা নিয়ে আসেন। অতঃপর, একদিন ঘটা করে সবাই রাজমাতাকে অনুসরণ করেন এবং রাজমাতা হাঁটতে শুরু করেন।

কিন্তু রাজমাতার হাঁটা আর শেষ হয় না, তিনি হাঁটতেই থাকেন। তারপর, পরিস্থিতি প্রতিকূল দেখে মন্ত্রী দিঘির শেষ প্রান্তে রাজমাতার পায়ে আলতা ছিটিয়ে দিয়ে তাকে থামিয়ে দেন। বলেন- মা তোমার পা ফেটে রক্ত বেরিয়েছে। তুমি আর হাঁটতে পারবে না। যেই স্থানে গিয়ে রাজমাতা হাঁটা বন্ধ করেছিলেন, শুরুর স্থান থেকে সেই অবধি পর্যন্ত রাজা বিশ্বনাথ দিঘি খনন করেছিলেন। সেই থেকেই এই দিঘিটি আলতা দিঘি নামে হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলা সদর থেকে ভ্যান অথবা ইজিবাইকে উত্তরে ৫ কিলোমিটার দূরেই আলতাদিঘি জাতীয় উদ্যান। তাই তো দিঘি আর বুনো সৌন্দর্যের টানে এখানে ছুটে আসেন ভ্রমণপিপাসুরা।

৪৩ একর আয়তনের বিশাল আলতাদিঘির স্বচ্ছ পানিতে ফুটে উঠে পদ্মফুল। যা যে কোনো ভ্রমণপিপাসুকে করে উচ্ছ্বসিত। আরও চোখে পড়বে নাম না জানা অসংখ্য ফুল। যার ঘ্রাণে সুবাসিত চারদিক।

এদিকে অচেনা পাখি আর কোকিলের ডাকে মনে হবে বসন্ত এসে গেছে। তবে প্রতিবছর শীতে পরিযায়ী পাখিরা এসে ভিড় জমায় সীমান্ত ঘেঁষা এ দিঘির পানিতে।

ডাহুক, পানকৌড়ির কলকাকলির ধ্বনি ভেসে বেড়ায় শালবনজুড়ে।

দিঘির পাড় ঘেঁষে বেড়ে উঠেছে সারি সারি শাল গাছ। এ গাছের ওপর বানর ছানারা খেলা করে বেড়ায়। শুকনো শাল পাতাকে আলিঙ্গন করে গড়ে উঠেছে উঁইপোকার বড় বড় ঢিবি, যা সত্যিই বিস্ময়কর। তবে রাতের আঁধারকে আলোকিত করে চাঁদের আলোয় শেয়াল, বেজি আর বনবিড়ালের আনাগোনায় নতুন রূপে ফুটে ওঠে রাতের আলতাদিঘি।
একুশে সংবাদ/এসএডি