‘নাড়ীর টানে, বাড়ির পানে, চলো মিলিত হই রক্তের বন্ধনে’ এই হোক প্রতিটি মানুষের শ্লোগান। এমন প্রতিপাদ্যে সমাজের হারিয়ে যাওয়া পারিবারিক বন্ধন অটুট রাখতে বিজয়ের মাসে জামালপুরে মাদারগঞ্জে শুরু হয় ৫ দিনব্যাপী জামাই মেলা। মেলা নয় যেন ঈদ উৎসব। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে জামাইরা এসে মেলা থেকে মাছ কিনে যাচ্ছেন শ্বশুরবাড়ি। এতে শ্বশুরবাড়ির লোকজনের মাঝেও দেখা দিয়েছে আনন্দ উৎসব।
শনিবার (১৬ ডিসেম্বর) মাদারগঞ্জের চরপাকেরদহ ইউনিয়নের কালাবাড়ি মোড়ে বিস্তীর্ণ মাঠে এ জামাই মেলা শুরু হয়েছে। মেলা চলবে বুধবার (২০ ডিসেম্বর) পর্যন্ত।
জামালপুরে পশ্চিমের যমুনা নদীর শেষ সীমানা ঘেঁষা মাদারগঞ্জ উপজেলা। এক সময় মাদারগঞ্জ থেকে জামালপুর শহরে আসতে ভোরে পায়ে হেঁটে রওনা দিলে বিকেল ঘড়িয়ে সন্ধ্যাও লেগে যেত। আর এখন বড় বড় সেতু, ব্রিজ আর পিচঢালা রাস্তায় যানবাহনে ৩০-৪০ মিনিটে যাতায়াতের মাইলফলক উন্নয়ন হয়েছে এই উপজেলার। চারদিকে যখন সব কিছুর এতো উন্নয়ন ঠিক তখনই নাড়ির বন্ধনকে ধরে রাখতে ব্যতিক্রমী এক উদ্যোগ সাড়া ফেলেছে। বছরের বিজয়ের মাসের বিজয় দিবসে আয়োজন করা হয় ৫ দিনব্যাপী জামাই মেলা।
জামাই মেলার মূল চরিত্র হলো ‘জামাই’। মেলার সময় আশপাশের গ্রামগুলোতে মেয়ে আর জামাইকে দাওয়াত করে আনা হয়। জামাতারা মেলা থেকে বড় বড় মাছ কিনেন শ্বশুরবাড়ি জন্য। আবার জামাইকে মেলায় কেনাকাটার জন্য শ্বশুর-শাশুড়ি টাকা দেন। সেই টাকা দিয়েই মেলা থেকে কেনাকাটা করে শ্বশুর বাড়িতে যান।
গত দুই বছর ধরে স্থানীয় এলাকাবাসীর উদ্যোগে এ `জামাই মেলা` শুরু হয়েছে। জামাই মেলায় ৩০০টি বিভিন্ন ধরনের দোকান রয়েছে। এর মধ্যেই এক পাশে সারি সারি মাছের দোকান। সেখানে আছে বোয়াল, কাতল, বাগাড়, আইড় ও চিতলসহ বিভিন্ন জাতের মাছ। সেসব মাছের ওজন ৫ থেকে ২০ কেজি বা তারও বেশি এছাড়া মেলায় বিক্রি হচ্ছে হরেক প্রজাতির মাছ ও মিষ্টিসহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র।
মেলায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে জামাইরা এসে ভিড় করছেন। তারা ব্যস্ত মাছ, মিষ্টি আর প্রসাধনী জিনিস নিয়ে শ্বশুরবাড়ি যাবার জন্য।
মেলায় আসা জামাইরা জানিয়েছেন, এই মেলায় আসতে শ্বশুররা তাদের টাকা দিয়ে থাকেন। চুরি করে শাশুড়িরাও টাকা দেন। সেই টাকা দিয়ে মাছ-মিষ্টি এবং শ্যালিকা ও শ্যালকদের পছন্দের জিনিস কিনে দেন। এতে সবাই মিলে বছরের এইদিনে আনন্দে মেতে থাকে। শ্বশুররা জামাই বেড়াতে আসায় শ্বশুররা বেশ খুশি হয়।
আবদুল বারিক নামে এক জামাই বলেন, ‘আমার শ্বশুর দাওয়াত করে এনেছে। গতকাল এসেছি শ্বশুর বাড়ি। আজ মেলায় আসার আগে শ্বশুর হাজার টাকা দিয়েছে। এ সময় শাশুড়ি আরও কিছু টাকা দিয়েছে লুকিয়ে। মেলা থেকে বড় একটি মাছ কিনেছি। শ্বশুর শাশুড়ির জন্য পান সুপারি নিয়েছি। আমার একটি ছোট শ্যালিকা রয়েছে তার জন্য এখন কিছু মিষ্টি জাতীয় খাবার নিয়ে শ্বশুর বাড়ি যাব।’
মেলায় আশা ব্যবসায়ীরা জানান, গত বছর থেকে এই মেলা শুরু হয়েছে। গতবার তাদের বেশ লাভ হয়েছে। এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না বলে আশা করছেন তারা।
জামাই মেলার আয়োজক কমিটির সাধারণ সম্পাদক মাসুদুর রহমান বলেন, ‘রক্তের বন্ধনকে ধরে রাখতেই এ মেলার আয়োজন। আমরা চাই সন্তানরা বাবা-মা, শ্বশুর-শাশুড়ি, ভাই-বোন ও আত্মীয়তার বন্ধনে যেন মিলে মিশে থাকে। এই মেলার মাধ্যমে পারিবারিক বন্ধনের সৃষ্টি হচ্ছে।’
একুশে সংবাদ/বিএইচ