AB Bank
ঢাকা শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

পাঁচ বিঘাজুড়ে বট-পাকুড়ের ছয়শ বছরের সংসার


Ekushey Sangbad
নাজমুল করিম, সাভার, ঢাকা
১০:২৭ পিএম, ১০ নভেম্বর, ২০২৩
পাঁচ বিঘাজুড়ে বট-পাকুড়ের ছয়শ বছরের সংসার

প্রায় ছয়শ বছর আগের কথা। পাশাপাশি রোপন করা হয়েছিল দুটি বট-পাকুর গাছ। ধীরে ধীরে বড় হয় দুটি গাছই। জড়িয়ে যায় আষ্টেপৃষ্টে। সেগুলোকে ঘটা করে দেওয়া হয় বিয়েও। পুরো পাঁচ বিঘা জমিতে ছড়িয়েছে দুই গাছের সংসার। ঢাকার ধামরাইয়ের বাইশাকান্দা ইউনিয়নের ষাইট্টা গ্রামের এ গাছ দুটির নাম ছড়িয়েছে আশপাশের বহু দূরেও। নিয়মিত বহু দর্শনার্থী ভিড় জমান সেখানে।

স্থানীয়রা জানান, প্রায় ছয়শ বছর আগে ওই গ্রামের দেবীদাস পরিবারের সদস্যরা দুইটি গাছ রোপন করেন। একে অপরকে জড়িয়ে তারা বেড়ে উঠতে থাকে। ওই সময় বটগাছকে নারীর রুপ আর পাকুড় গাছকে মনে করা হতো পুরুষের রুপ হিসেবে। সেই সময় ধর্মীয় বিশ্বাস থেকে দাস বংশের পূর্বসুরীরা ঢাক-ঢোল পিটিয়ে সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ দিয়ে ব্রাহ্মণের মাধ্যমে বৈদিক মন্ত্র পাঠ করিয়ে গাছ দুটির বিয়ে দেন। সেই বিয়েতে যোগ দিয়েছিলেন বহু মানুষ। সেখান থেকেই গাছ দুটি স্বামী-স্ত্রী বলেও পরিচিত। 

বর্তমানে গাছ দুটির অবস্থান পাঁচ বিঘারও বেশি জমিজুড়ে। প্রতিদিনই দূর দূরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা আসেন এ যুগল গাছ দেখতে।

লোকমুখে প্রচলিত আছে, বহু আগে একবার এই বট-পাকুড় গাছের নিচ দিয়ে ইট-ভর্তি একটি ট্রাক যাওয়ার সময় এই গাছের ডালের সঙ্গে আটকে যায়।  পরে ওই ট্রাক-চালক বটগাছের ডালটি কেটে ট্রাক নিয়ে চলে যায়। তিনি ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর স্থানীয় প্রবীণ ব্যক্তিদের পরামর্শে বটগাছের নিচে কয়েক কেজি বাতাসা আর মোমবাতি দিয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করার পর ওই ট্রাক-চালক সুস্থ হন।

এছাড়াও কার্তিক সরকার নামে এক কৃষকের জমিতে বটগাছের ডাল ছড়িয়ে পড়লে তার জমিতে চাষ করা সমস্যা হয়ে যায়। পরে তিনিও তার জমিতে যাওয়া বট গাছের ওই ডালটি কেটে ফেলেন। এরপর সেই কৃষকও অসুস্থ হইয়ে পরেন। তিনি দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর অনেকের পরামর্শে ওই বটগাছের নিচে একটি মন্দির নির্মাণ করে সেখানে পূজা-অর্চনা করতে থাকেন।

এমন অনেক অলৌকিক ঘটনা রয়েছে এই বট-পাকুড়-গাছ নিয়ে। এরপর থেকে ভয়ে এলাকার আর কেউ ওই গাছের ডালপালা কাটেনি। ফলে গাছ দুটি বর্তমানে অসংখ্য ডাল  শিকড় ছেড়ে দিয়ে পাঁচ বিঘা জমি দখল করে আছে। প্রতি বছরই বট ও পাকুড় গাছের নিছে থাকা মন্দিরে পূজা করেন স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষজন।

৬০ বছর বয়সের নিল কমল নামের এক বৃদ্ধ জানান, আমরা আমাদের মুরুব্বিদের কাছ থেকে শুনে আসছি এই গাছ দুটি স্বামী-স্ত্রী। গাছ দুটি ৬০০ বছরের পুরনো।  এদের এক একটি শেকড় এখন একটি গাছের থেকেও মোটা হয়ে গেছে। এদের ডালপালা কেউই কাটে না। প্রতিদিন এখানে অনেক মানুষ আসে এই গাছ দেখতে। প্রতি বৈশাখ মাসে এখানে মেলা হয়। এছাড়াও বিভিন্ন উৎসবে এখানে মানুষের সমাগম বেশি হয় এবং বিভিন্ন দোকানপাট উঠে। 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিশাল এলাকা জুড়ে গাছটির অবস্থান। সেখানে গাছ দেখতে ভিড় জমিয়েছেন অনেকেই।

নাজমুল ইসলাম নামে এক দর্শনার্থী জানান, অনেক শুনেছি এই গাছ দুটির কথা। ফেসবুকে কয়েকবার চোখে পড়েছে। তখন থেকেই গাছ দুটি দেখার খুব ইচ্ছে ছিলো। তাই পরিবারসহ দেখতে এসেছি।

উপজেলার আমড়াইল গ্রামের ওয়াহিদ ইসলাম নামে আরেক দর্শনার্থী বলেন, মুরব্বিদের কাছ থেকে শুনছি বট-পাকুড় গাছটি অনেক পুরনো। পাশে মন্দিরটিও পুরনো। আর এখানে আসলেই মন ভাল হয়ে যায়।

ধামরাই উপজেলা বন কর্মকর্তা মো. মোতালেব হোসেন বলেন, ওইখানে প্রায় দুই একর জায়গা আছে, পাশে হিন্দুদের মন্দির আছে, বট-পাকুড় গাছ দেখতে অনেক পর্যটক আসে তবে রাস্তার অভাবে পর্যটক যেতে পারে না। তাছাড়া পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নেই, যদি রাস্তাঘাট করা হয় ও পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দেওয়া হয়। আর চারিদিকে সৌন্দর্য বর্ধনে কাজ করা হয়। তাহলে ধামরাই উপজেলার মধ্যে সুন্দর একটা পর্যটক কেন্দ্র হবে। 

ধামরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হোসাইন মোহাম্মদ হাই জকী বলেন, গাছ দুটি ধামরাইয়ের ঐতিহ্য। এই গাছকে ঘিরে এখানে ছোট একটা পর্যটন তৈরি হয়েছে। আগে এখানে যাওয়ার রাস্তাটা কাঁচা ছিলো। বৃষ্টির দিনে দর্শনার্থীদের কষ্ট হতো। এখন ইট দিয়ে রাস্তাটি উন্নত করা হয়েছে।

 

একুশে সংবাদ/বিএইচ

Link copied!