AB Bank
ঢাকা শনিবার, ১৮ মে, ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

এবার বাড়িতেই চেম্বার বানিয়ে রোগী দেখছেন সেই ফারুক


Ekushey Sangbad
রেজোয়ান ইসলাম, নীলফামারী
০৮:২২ পিএম, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩
এবার বাড়িতেই চেম্বার বানিয়ে রোগী দেখছেন সেই ফারুক

নীলফামারীর ডোমারে ডেন্টিষ্ট না হয়েও বছরের পর বছর ‘ফেন্সি ডেন্টাল হোম’ নামে একাধিক চেম্বার খুলে প্রতারণা করে আসছিলেন ওমর ফারুক নামে এক ব্যক্তি। পরে তাকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে জরিমানা ও তার প্রতিষ্ঠান সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করা হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের শর্ত পূরণ করে প্রতিষ্ঠানটি চালুর চেষ্টা না করে বাড়িতে চেম্বার খুলে নিয়মিত রোগী দেখার অভিযোগ উঠেছে ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে।

 

জানা গেছে, গত ৩০ আগস্ট ডোমার নিউ মার্কেটের ফেন্সি ডেন্টাল হোমে অভিযান চালান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাজমুল আলম বিপিএএ। এ সময় ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ওমর ফারুককে ৮০ হাজার টাকা জরিমানা ও তার প্রতিষ্ঠানটি সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করেন। তবে ভ্রাম্যমাণ দালতের নিদের্শনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ওমর ফারুক তার প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের মাধ্যমে মোটরসাইকেল ভ্যান-রিক্সা যোগে ডোমার-দেবীগঞ্জ সড়কের পাশে এমপির মোড় এলাকার একটি বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছেন। সেই বাড়ির একটি কক্ষে দন্ত চিকিৎসার সরঞ্জামাদি বসিয়ে নিয়মিত রোগী দেখছেন তিনি।

 

সরেজমিনে ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির সামনেই রোগী পরিবহনের একটি ভ্যান। বাড়ির প্রবেশপথের কেচি গেট চাপানো, একটু সামনে এগিয়ে গেলে বদ্ধ একটি কক্ষ থেকে শিশুসহ কয়েকজনের কথা শুনতে পাওয়া যায়। এসময় সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে ওই কক্ষ থেকে বেরিয়ে আসেন ওমর ফারুক। সৌজন্যতা বোধ রক্ষা করে পাশের একটি রুমে বসতে বলেন। একুশেসংবাদের এই প্রতিবেদক ও আরেক সহকর্মী ওই রুমে প্রবেশ করা মাত্রই দরজাটি বাহির থেকে বন্ধ করে দেন। পরে ডোমার থানায় অবগত করলে প্রায় ১০মিনিট পর দরজা খুলে দেন ওমর ফারুক।

 

সে সময় ভ্রাম্যমাণ আদালতে চেম্বার বন্ধের পর বাড়িতে রোগী দেখতে পারবেন কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি বাইরে কোথাও সাইনবোর্ড টাঙিয়েছি? এটা আমার বাসা, এখানে রোগী দেখছিনা।

 

এ সময় ওই বাড়ি থেকে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনদের বের হতে দেখা যায়। দাঁতের মাড়ি ফোলা নিয়ে চিকিৎসা নিতে আসা মাহফুজা আক্তারের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, আমার দাঁতের মাড়ি ফোলা নিয়ে আসছি। ডাক্তারের নাম আমি জানি না। এই বাড়ীতে একটা ভাইয়া আমাকে নিয়ে আসছে।

 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৮ সালে স্বল্প মেয়াদি ডিপ্লোমা পাস করেই ‘ফেন্সি ডেন্টাল হোম’ নামে একাধিক চেম্বার খুলে কর্মজীবন শুরু করেন ওমর ফারুক। প্রতারণার আশ্রয় নি‌য়ে নিজেকে ১৭ বছরের অভিজ্ঞ ডেন্টিস্ট পরিচয় দেন তিনি। ডেন্টিস্ট না হয়েও বছরের পর বছর ডোমার পৌর শহরে রোগীদের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছিলেন তিনি। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ফেন্সি ডেন্টাল হোমের স্বত্বাধিকারী ওমর ফারুককে ৮০ হাজার টাকা জরিমানা ও প্রতিষ্ঠানটি সাময়িক বন্ধ করে দেওয়া হয়।

 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, গত ৩০ আগস্ট ফেন্সি ডেন্টাল হোমে অভিযান চালায় প্রশাসন। তাকে ৮০ হাজার টাকা জরিমানা ও তার প্রতিষ্ঠানটি সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করেন। তার যদি সঠিক কাগজপত্রই থেকে থাকে তাহলে সে প্রশাসনের কাজে দাখিল করে তার প্রতিষ্ঠানটি চালু করতে পারে। কিন্তু তিনি সেটি না করে প্রায় এক সপ্তাহ থেকে ওমর ফারুক নিজ বাড়িতে চেম্বার বানিয়ে রোগী দেখছেন। তার রোগীদের নিজ বাড়ি আনা নেওয়ার জন্য আবার কয়েকজন ছেলে রেখেছেন। তারা ভ্যান-রিক্সা ও মোটর সাইকেল যোগে তার বাড়ি রোগী ও তাদের স্বজনদের নিয়ে যায়। আমাদের প্রশ্ন হলো তার কি এমন ক্ষমতা, তিনি কিভাবে প্রশাসনের নির্দেশনা উপেক্ষা করে বাড়িতে রোগী দেখেন।

 

ডোমার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমুল আলম বলেন, স্বাস্থ্য বিভাগ ওমর ফারুকের বিরুদ্ধে তদন্ত করে তার পরিচালিত ফেন্সি ডেন্টাল হোম বন্ধ করার সুপারিশ করলে আমরাও সেটি তদন্ত করে বিভিন্ন অসংগতি পেয়েছিলাম। তাই ওমর ফারুককে ৮০ হাজার টাকা জরিমানা ও ফেন্সি ডেল্টাল হোমটি সাময়িক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের শর্ত পূরণ করে তার প্রতিষ্ঠানটি তিনি চালু করতে পারবেন।

 

তিনি বলেন, মেডিকেল সংশ্লিষ্ট কিছু হলে স্বাস্থ্য বিভাগকে অবহিত করলে তারাই আমাদেরকে নিয়ে যাবে। স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে আমাদেরকে একজন ডাক্তার পাঠালে আমরা একসাথে অভিযান পরিচালনা করব। সত্যতা প্রমাণ পেলে আবারও জেল-জরিমানা করবো, আমাদের যেতে কোনো বাঁধা নেই বা আপত্তিও নেই।

 

নীলফামারীর সিভিল সার্জন ডা. মো. হাসিবুর রহমান বলেন, আমাদের তো আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ নেই। কিছু দিন আগে আমরা তার চেম্বার বন্ধ ঘোষণা ও তাকে ৮০ হাজার টাকা জরিমানা করেছি। তিনি চেম্বার পরিচালনা করতে পারবেন না। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনে আবারও মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে।

 

প্রসঙ্গত, ডোমার নিউ মার্কেটের ফেন্সি ডেন্টাল হোম এর স্বত্বাধিকারী ওমর ফারুকের বিষয়ে জেলা সিভিল সার্জন বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন বাঁধন ইসলাম নামে এক যুবক। পরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসক ডা. তপন কুমার রায়কে প্রধান করে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্তে সাইনবোর্ডে ১৭ বছরে অভিজ্ঞতা লিখলেও এর কোনো সনদ তার কাছে ছিল না। এছাড়াও তার দাবিকৃত ডিগ্রির ফটোকপি দেখালেও মূল সনদ চাইলে তিনি তা দেখাতে পারেননি। নিয়ম না মেনেই অস্ত্রোপচার ও রোগীকে চিকিৎসা করতেন তিনি। তার ট্রেড লাইসেন্সের মেয়াদও উত্তীর্ণ ছিল।

 

একুশে সংবাদ/র.ই.প্র/জাহা

Link copied!