রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ভোক্তাদের হাঁসফাঁস অবস্থায় ফেলেছে। মাছ, মাংস, ডিম, ডাল থেকে শুরু করে প্রায় সব ধরনের সবজির দাম হু হু করে বাড়তে থাকায় সীমিত আয়ের মানুষের সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। আয়-ব্যয়ের হিসাব মেলাতে ব্যর্থ হয়ে অনেকে ঋণের ওপর নির্ভর করছেন।
গত দুই মাসে পেঁয়াজ, ডাল, ডিম, মাছ ও সবজির দামে ব্যাপক উল্লম্ফন হয়েছে। টিসিবির বাজারদর অনুযায়ী, দেশি পেঁয়াজ কেজিতে ৭৫–৮০ টাকা, মুরগির ডিম ডজনপ্রতি ১৩৫–১৪৫ টাকা, দেশি মসুর ডাল ১৬০–১৮০ টাকা, করলা ১০০–১২০ টাকা, ঢেঁরস ও পটোল ৮০–১০০ টাকা, বরবটি ১০০–১২০ টাকা, শসা ৮০ টাকা, ঝিঙা ৮০–১০০ টাকা, দুন্দল ৯০–১০০ টাকা, চিচিঙা ৮০ টাকা, নতুন শিম ২২০–২৪০ টাকা ও কাঁচামরিচ ১৮০–২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তুলনামূলক সস্তা সবজি হিসেবে পেঁপে পাওয়া যাচ্ছে কেজিপ্রতি ৩৫–৪০ টাকায়। আর আলুর দাম ২৫–৩০ টাকা কেজি।
বাজারে আসা ক্রেতাদের অভিযোগ, সরকারের নজরদারির অভাবেই এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। মহাখালীর ক্রেতা হেলাল উদ্দিন বলেন, “মাছ-মাংস কিনতে এখন কয়েক হাজার টাকা লাগে। সীমিত আয়ের মানুষ ঋণ ছাড়া সংসার চালাতে পারছে না।” অন্যদিকে মিরপুরের ক্রেতা আক্তার হোসেন বলেন, “আগে মাছ-মাংসের দাম বাড়লে ডিম-সবজির ওপর নির্ভর করতাম। এখন সেগুলোর দামও আকাশচুম্বী।”
বিক্রেতারাও দায় চাপাচ্ছেন সরবরাহ সংকটের ওপর। বাড্ডার সবজি ব্যবসায়ী হারুন জানান, টানা বৃষ্টিতে ক্ষেতে ক্ষতি হয়েছে, ফলে পাইকারি বাজারেই দ্বিগুণ দামে কিনতে হচ্ছে। ক্রেতারা সবজি কেনা কমিয়ে দেওয়ায় বিক্রেতাদেরও লোকসান গুনতে হচ্ছে।
বাজার বিশ্লেষকরা মনে করছেন, শুধু প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা সরবরাহ ঘাটতি নয়, ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট ও তদারকির ঘাটতিও দায়ী। ‘ভোক্তা’ সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক মো. খলিলুর রহমান সজল বলেন, “ভোক্তারা এতটাই সহনশীল হয়ে গেছে যে অস্বাভাবিক দামকেও ভাগ্যের ফের মনে করছে। অথচ সরকারের বাজার নিয়ন্ত্রণে সক্রিয়তা থাকলে পরিস্থিতি এতটা খারাপ হতো না।”
তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, নরসিংদীতে যে বেগুন ৬০–৬৫ টাকায় বিক্রি হয়, ঢাকায় এসে তা ১৫০–১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সরবরাহ শৃঙ্খলের বিভিন্ন ধাপে অযৌক্তিক মূল্যবৃদ্ধির কারণেই ভোক্তাদের অতিরিক্ত খরচ বহন করতে হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. মুস্তফা কে মুজেরি বলেন, “খাদ্যখাতের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ না আনলে মানুষের দুর্ভোগ কাটবে না। এজন্য বাজার ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা আনতে হবে, পাইকারি পর্যায়ে মনোপলি ভাঙতে হবে, কৃষিপণ্য সরাসরি বাজারজাতের ব্যবস্থা করতে হবে এবং প্রয়োজনে খাদ্য আমদানিতে শুল্ক কমাতে হবে।”
একুশে সংবাদ // র.ন