রাজধানীর সাত সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা পৃথক বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের ঘোষণার পরও অধ্যাদেশ জারি না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বিক্ষোভে নেমেছেন। তাদের দাবির কেন্দ্রে রয়েছে—‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’ নামক প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ দ্রুত কার্যকর করা।
বুধবার (৬ আগস্ট) সকাল থেকেই শিক্ষার্থীরা ঢাকা কলেজ প্রাঙ্গণে জড়ো হতে শুরু করেন। সকাল ১১টার দিকে কলেজের মূল ফটক থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা জানান, সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী রাষ্ট্রীয় কার্যক্রম শুরু হলেও এখন পর্যন্ত কোনো অধ্যাদেশ প্রকাশ করা হয়নি। এ অবস্থাকে হতাশাজনক ও অনিশ্চয়তা তৈরি করার মতো বলে উল্লেখ করে তারা রাস্তায় নামার সিদ্ধান্ত নেন।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া এক শিক্ষার্থী বলেন, “সাত কলেজ অধিভুক্ত ব্যবস্থায় দীর্ঘদিন আমরা অবহেলার শিকার হয়েছি। ‘অধিভুক্ত’ শব্দটি আমাদের আত্মপরিচয়কে সংকুচিত করেছে। আমরা একটি পূর্ণাঙ্গ, স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বীকৃতি চাই।”
প্রায় ২০০ শিক্ষার্থী এতে অংশ নেন। ঢাকা কলেজ থেকে শুরু হওয়া মিছিলটি সায়েন্স ল্যাব হয়ে নীলক্ষেত মোড় ঘুরে ইডেন কলেজের সামনে সংক্ষিপ্ত অবস্থান নেয়। এরপর তা পুনরায় নীলক্ষেত হয়ে ঢাকা কলেজে এসে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে কর্মসূচির সমাপ্তি ঘটে।
আন্দোলনের পেছনে দীর্ঘ প্রস্তুতির কথা জানিয়ে শিক্ষার্থীরা বলেন, কয়েক দিন ধরেই পোস্টার, ব্যানার, প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে এ কর্মসূচির প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছিল।
‘সাত কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তর টিম’-এর ফোকাল পার্সন আব্দুর রহমান বলেন, “আমরা অনেক দিন ধরে লড়ছি। শিক্ষা সিন্ডিকেট বা আমলাতান্ত্রিক কোনো ষড়যন্ত্রে এই দাবি আটকে থাকতে দেওয়া হবে না। সরকার যখন অধ্যাদেশ প্রণয়নের কথা বলেছে, তখন তা সময়মতো বাস্তবায়ন করতেই হবে।”
তিনি আরও বলেন, “শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে কোনো নতুন অনিশ্চয়তা তৈরি করা চলবে না। সময়ক্ষেপণ এড়িয়ে দ্রুত অধ্যাদেশ প্রকাশই একমাত্র সমাধান।”
আন্দোলনকারীদের আশঙ্কা, অধ্যাদেশ কার্যকর হওয়ার পাঁচটি ধাপ পেরোতে গিয়ে সময় নষ্ট হতে পারে। প্রক্রিয়ায় রয়েছে—বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) খসড়া প্রণয়ন, তা আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো, সংশোধন করে ইউজিসিতে প্রত্যাবর্তন, এরপর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে উপদেষ্টা পরিষদে প্রেরণ এবং সর্বশেষ রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের মাধ্যমে গেজেট প্রকাশ।
তারা মনে করছেন, যদিও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এখনও চোখে পড়ছে না, তবুও প্রশাসনিক ধীরগতির কারণে অধ্যাদেশ কার্যকর হতে দেরি হতে পারে। সেই শঙ্কা থেকেই তারা রাস্তায় নেমেছেন।
প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ২৬ মার্চ সাতটি সরকারি কলেজকে পৃথক করে ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’ গঠনের ঘোষণা দেয় সরকার। ইউজিসির প্রস্তাবিত নাম অনুযায়ী নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায় আনা হয় ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, মিরপুর বাংলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজ।
একুশে সংবাদ/এ.জে