বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ভেটেরিনারি অনুষদ স্থানীয় হাঁস প্লেগ ভাইরাস ব্যবহার করে স্বল্পমূল্যের ডাক প্লেগ ভ্যাকসিন উন্নয়ন সম্পন্ন করেছে এবং ওই ভ্যাকসিনের সিড প্রানিসম্পদ অধিদপ্তরের নিকট হস্তান্তর করেছে।
বুধবার (৫ নভেম্বর) সকাল ১১ টায় ভেটেরিনারি অনুষদের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাকৃবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়া। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন ভেটেরিনারি অনুষদের ডিন ও ডাক প্লেগ ভ্যাকসিন উন্নয়ন প্রকল্পের প্রধান গবেষক অধ্যাপক ড. মো. বাহানুর রহমান। এছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের ডিন ও ডিন পরিষদের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল ইসলাম সরদার, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় রিসার্চ সিস্টেমের (বাউরেস) পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. হাম্মাদুর রহমান, প্রাণিসম্পদ গবেষণা প্রতিষ্ঠান এবং প্রকল্প পরিচালক, প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্পের (এলডিডিপি) পরিচালক ড. মো. মোস্তফা কামাল, প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্পের (এলডিডিপি) সিটিসি ড. মো. জাহাঙ্গীর হোসেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাকৃবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়া বলেন, মুরগির পর দেশে সবচেয়ে বেশি পালন করা হয় হাঁস, যার মৃত্যুহার তুলনামূলকভাবে কম এবং ভ্যাকসিনের কার্যকারিতাও বেশি। হাঁসের প্রধান রোগগুলোর একটি হলো ডাক প্লেগ। ডিএলএস থেকে প্রাপ্ত ভ্যাকসিন নিয়ে আমি দীর্ঘদিন কাজ করেছি। তবে আগের ভ্যাকসিনগুলোর তুলনায় বর্তমানে এর কার্যকারিতা কমে গেছে।
উপাচার্য আরও বলেন, লাইভস্টক সেক্টরে জাত উন্নয়ন ও ভ্যাকসিন উৎপাদন-এই দুটি ক্ষেত্রে উন্নতি অপরিহার্য। তা না হলে এই খাতকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয়। কিন্তু দুঃখের বিষয় সরকার খুবই কম বিনিয়োগ করে৷ এই দুইটা জায়গায় যদি আমাদের সক্ষমতা তৈরি হতো তাহলে লাইভস্টক সেক্টর অনেক এগিয়ে যেতো।
এসময় তিনি প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিগণের নিকট এই দুইটি খাতে জোর দেয়ার পরামর্শ দেন এবং বলেন, আমার ৪২ বছরের কর্মজীবনের আলোকে বলছি এই দুই খাতে যদি পর্যাপ্ত অর্থায়ন করা হতো তাহলে লাইভস্টক সেক্টরটি আজ রপ্তানিমুখী শিল্পে পরিণত হতো।
জংলি হাঁসের মধ্যে থাকা রোগ প্রতিরোধী জিনগুলো ভ্যাকসিনের সঙ্গে সংযুক্ত করা গেলে আরও কার্যকর ভ্যাকসিন তৈরি করা সম্ভব হবে বলেও তিনি আশা ব্যাক্ত করেন।
ভ্যাকসিন উন্নয়নের প্রধান গবেষক অধ্যাপক ড. মো. বাহানুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে হাঁসের সংখ্যা প্রায় ৭ কোটি ৫ লাখ ৮২ হাজার। দেশের মোট জিডিপিতে প্রাণিসম্পদের অবদান ১.৮১ শতাংশ, আর কৃষিজ জিডিপিতে অবদান ১৬.৫৪ শতাংশ। এ খাতে হাঁস পালন একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, বিশেষ করে গ্রামীণ কৃষক ও ভূমিহীন নারীদের প্রায় ৮০ শতাংশই হাঁস পালনের সঙ্গে যুক্ত। এটি গ্রামীণ অর্থনীতি ও নারীর কর্মসংস্থানে বড় ভূমিকা রাখছে।
তবে এই গুরুত্বপূর্ণ খাতটি সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকে হাঁসের প্লেগ বা ডাক প্লেগ নামের এক প্রাণঘাতী ভাইরাসজনিত রোগের কারণে। এই ভাইরাসটি প্রথম ১৯৮২ সালে বাংলাদেশে শনাক্ত হয়। রোগটির সংক্রমণ হার ৫২.০৮ শতাংশ, মৃত্যুহার ২৯.৬২ শতাংশ এবং কেস ফ্যাটালিটি হার ৫৬.৮৬ শতাংশ বলে জানা গেছে। এসব পরিসংখ্যান হাঁস শিল্পে এর ভয়াবহ প্রভাবের স্পষ্ট প্রমাণ দেয়।
হাঁসের প্লেগ নিয়ন্ত্রণে টিকা ব্যবহার করা হলেও বিভিন্ন অঞ্চলে ভাইরাসের জিনগত বৈচিত্র্য দেখা যায়, যা টিকার কার্যকারিতাকে প্রভাবিত করতে পারে। তাই স্থানীয় ভাইরাস শনাক্তকরণ, তার জিনগত বৈশিষ্ট্য নির্ধারণ এবং স্থানীয়ভাবে উপযোগী টিকা উন্নয়ন এখন সময়ের দাবি।
গবেষণাটির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে তিনি বলেন, “রোগাক্রান্ত হাঁস থেকে হাঁসের প্লেগ ভাইরাস শনাক্ত ও এর আণবিক চরিত্রায়ন করা, মুরগির ভ্রূণে ধারাবাহিক প্যাসেজের মাধ্যমে রোগ সৃষ্টিকারী ডাক প্লেগ ভাইরাসকে অভিযোজিত ও দুর্বল রূপে উন্নীত করা, স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত দুর্বল ভ্যাকসিন বীজ, মাঠের ভাইরাস এবং দ্য ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োটেকনোলজি ইনফরমেশন ডাটাবেসে থাকা মানক দুর্বল ভাইরাস বীজের মধ্যে জিনগত তুলনা করা।
একুশে সংবাদ/এ.জে



একুশে সংবাদের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

